০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, শনিবার, ৬:০২:৩৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


দেশ বঙ্গবন্ধুর দর্শন থেকে বহুদূরে সরে গেছে
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০২-২০২৩
দেশ বঙ্গবন্ধুর দর্শন থেকে বহুদূরে সরে গেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান


উপর্যুপরি তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার অন্তিমলগ্নে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আত্মোপলব্ধি নজর কেড়েছে। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ব্যর্থতাগুলো খুঁজে বের করে দিন, সংশোধন করে নেবো’। এ বিষয় নিয়ে কিছু কথা যে না বললেই নয়।

এটা এখন স্পষ্ট যে, কিছু কিছু অদূরদর্শী ভ্রান্ত পরিকল্পনা, অতিমাত্রায় আমলা-নির্ভরতা এবং দুর্নীতির কারণে সরকারের অধিকাংশ সাফল্য মেঘে ঢেকে গেছে। বাংলাদেশ ২০১০ থেকে ২০২৩ অনেক পাল্টে গেছে। সারা দেশকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা, সড়কপথে প্রমত্তা পদ্মার বুক চিরে পেরিয়ে যাওয়া, মেট্রোরেল যুগে প্রবেশ, নদী তলদেশে সুড়ঙ্গপথ নির্মাণ, পারমাণবিক বিদ্যুৎ যুগে প্রবেশের হাতছানি- এগুলো নিঃসন্দেহে সাহসী অর্জন। বাংলাদেশের জন্য বিশাল অর্জন। কিন্তু এসব অর্জন অনেকটা ম্লান হয়েছে সামর্থ্যরে চুলচেরা বিশ্লেষণ না করে মাত্রাতিরিক্ত ঋতনির্ভর অত্যধিক মেগাপ্রকল্প গ্রহণ বা পেশাদারদের কোণঠাসা করে রেখে অনভিজ্ঞ আমলাদের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ দেয়ার কুফল এখন প্রতিভাত।

সবকিছু মিলিয়ে অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নয়ন প্রশংসার। কিন্তু টেকসই উন্নয়ন অর্জন করতে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে থাকলে উন্নয়নের সফলগুলো সবার ঘরে পৌঁছে যেতো। কেন হয়নি, সেটা সবাই জানেন, বোঝেনও। 

দেশের মানুষের বড় চাহিদা গণতন্ত্র। বাংলাদেশের মানুষের আজীবন লড়াই গণতন্ত্র নিয়ে। সেটা এখনো সোনার হরিণ। জবাবদিহিতা আর স্বচ্ছতা এখনো দূরের দ্বীপ।

একজন জ্বালানি পরামর্শক হিসেবে আলোচনা সীমিত রাখবো। বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা এখন মারাত্মক সংকটের মুখে মূলত বাছবিচার না করে আমদানিকৃত জ্বালানির পেছনে ছুটে। স্বর্ণালি একটা সময় সেখানেই শেষ।  মাটির নিচে মূল্যবান কয়লা সম্পদ। সেগুলো ফেলে রাখা হয়েছে। এরপরও জলে-স্থলে রয়েছে বিপুল পরিমাণ তেল-গ্যাস আবিষ্কারের সুযোগ। এগুলো খুঁজে বের করার উদ্যোগ প্রয়োজন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেটার উপেক্ষা। বারবার এ ব্যাপারে বলা হলেও নীতিনির্ধারকদের ভ্রুক্ষেপও নেই। অথচ এখন যে জ্বালানি ক্রাইসিস, নিজেদের সম্পদ ব্যবহারের সুযোগ থাকলে সেটা এখন বড় ভূমিকা রাখতো। রিল্যাক্স থাকা যেতো। কিন্তু এখন হন্যে হয়ে ছুটতে হচ্ছে জ্বালানি আমদানির দিকে। প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা এর পেছনে ইনভেস্ট করতে হচ্ছে, যা কষ্টসাধ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

জ্বালানি আমদানির জন্য বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান আদৌ উপযোগী নয়। রয়েছে কারণে-অকারণে বিশ্ব জ্বালানি বাজার অস্থির হবার সম্ভাবনা। শুধু ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের জন্য যে জ্বালানির দাম বেড়েছে তা নয়, অন্য কারণেও বাড়তে পারে হুটহাট- এটাই বাস্তবতা।

দেশে এ মুহূর্তে জ্বালানি সংকট প্রকট। জ্বালানির এমন সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্পকারখানাসমূহ মারাত্মক সংকটে। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শকদের ভুল পরামর্শে নিজের জ্বালানি সম্পদ মাটির নিচে রেখে ভুল পথে হেঁটেছেন সরকারপ্রধান। শতকাজে ব্যস্ত থাকা প্রধানমন্ত্রী সবকিছু নিয়ে খুঁটিয়ে দেখার সময় নেই। কিন্তু সেগুলো চুলচেরা বিশ্লেষণ করে পরামর্শ দেবেন এটাই কাম্য বা এটাই পরামর্শকদের কাজ। কিন্তু কেন সঠিক পরামর্শটি দেননি তারা। সংকটের মুহূর্তে জ্বালানি আমদানির মতো পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে নেই। আমলা-নির্ভর পেট্রোবাংলা নিজেদের সম্পদ আহরণে পুরোপুরি সক্ষম নয়। কারিগরি জনবল হতাশ উদ্যমহীন।

আশা করি প্রধানমন্ত্রী ব্যর্থতার ব্যবচ্ছেদ করবেন। দ্রুত সংশোধন করে, মার্চ থেকে সংকট শুরু হয়ে ২০২৩ পরিস্থিতি নাজুক থাকবে। জ্বালানি সেক্টরের মতো কারিগরিঘন সেক্টরে সঠিক পেশাদারদের সঠিক স্থানে পদায়ন অত্যাবশ্যক। ২০১০-২০২২ পেট্রোবাংলার সার্বিক ব্যর্থতার চুলচেরা বিশ্লেষণ দাবি করছি। আশা করি, সরকারপ্রধান ১৫ বছরের সাফল্য-ব্যর্থতার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দ্রুত শুধরে নিবেন। দেশ কিন্তু বঙ্গবন্ধুর দর্শন থেকে বহুদূরে সরে গেছে। এটা মোটেও কাম্য নয়। সবকিছুর মূলে বঙ্গবন্ধুর দর্শন- এটা মানতেই হবে। ঠিক রাখতেই হবে সাধারণ মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুর আজীবন লড়াই। সে জনগণ কষ্ট পেলে সেটা বঙ্গবন্ধুর নীতির সঙ্গে মিলবে কি করে? সাধারণ মানুষ কিন্তু জ্বালানি, বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন । বঙ্গবন্ধুকন্যা এটা ভালো বুঝবেন। তিনিও লড়ছেন খেটে খাওয়া ও সাধারণ মানুষের জন্য। কিন্তু সেসব সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূলের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছে। 

সামনেই রমজান। মানুষ দ্রব্যমূল্য নিয়ে উৎকণ্ঠায়। সব বিষয়ই এখন প্রধানমন্ত্রীকেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ সধারণ মানুষ যে তার ওপরই আস্থা রাখেন।  

শেয়ার করুন