০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:০৯:১৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


বারবার কেন আগুন লাগছে
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৪-২০২৩
বারবার কেন আগুন লাগছে


একটি বা দুটি নয়, গত কিছুদিন ধরে বারবার ধ্বংসাত্মক আগুন লেগে জনপ্রিয় মার্কেটসমূহের দোকান এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে। কংক্রিটের বস্তিনগরী ঢাকায় এমনিতেই অগ্নিঝুঁকিতে আছে অসংখ্য বাড়িঘর, ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান, সংকর্ঢু গলির অপরিসর রাস্তাঘাট, ঝুঁকিপূর্ণ ভারে গ্যাস, বিদ্যুৎ-সংযোগ, অপর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা এবং সর্বোপরি জলাধার ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানির সংকট। এতো সব সংকট নিয়ে ভূমিকম্পের আতঙ্কে ঢাকাবাসী।  

সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের মধ্যে সমন্বয় বলতে কিছু নেই। শুধু দেখা যায়, সংকট হলেই সব সংস্থা একে অন্যকে দোষারোপ করতে ব্যস্ত। প্রতিটি ঘটনার পর একাধিক তদন্ত কমিটি হয়। যতোদিন মিডিয়া সক্রিয় থাকে, ততোদিন তোড়জোড়। এর পর মিডিয়ায় নতুন কোনো ইস্যুতে মনোযোগী হওয়া মাত্র সবাই সবকিছু ভুলে যায়। অপেক্ষা আরো একটি ঘটনার। অনেকেই আবার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ আনেন। কিন্তু সমস্যার মূলে থাকা বিষয়গুলো উপেক্ষায় থেকে যায়। সব পর্যায়ে সচেতনতা ছাড়া কোনোভাবেই যে মুক্তি নেই সেটি কেন সবাই বুঝতে পারছে না?

ঢাকাসহ অধিকাংশ নগরীর বহুতল অট্টালিকা নির্মাণে বিল্ডিং কোড উপেক্ষিত থেকেছে, অগ্নিকাণ্ড বা অন্য কোনো দুর্যোগে আটকে পড়া মানুষগুলো বেরিয়ে আসার পথ নেই। একই কারণেই উদ্ধারকার্য সংকটে, ভবনগুলোর অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত। ঢাকা মহানগরে আছে দুই জন মেয়র। দুনিয়ার সব মহানগরীতে মেট্রোপলিটন গভর্ন্যান্সের আওতায় সব সেবামূলক প্রতিষ্ঠান মেয়র কার্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে।  কিন্তু বাংলাদেশে এটি সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। প্রতিটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান যেন নিজ নিজ রাজত্বে রাজা। কেউ কারো তোয়াক্কা করে না। না হলে মারাত্মক অগ্নিঝুঁকিতে থাকা অসংখ্য ভবন কীভাবে টিকে থাকে? কীভাবে রাজউক বিল্ডিং কোডের প্রতি ভ্রুকুটি দেখানো অসংখ্য ভবনকে নির্মাণের অনুমতি দেয়? কীভাবে আবাসিক এলাকায় অসংখ্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে?

সবচেয়ে ভয়ের কারণ ঢাকা মহানগরীর ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে নিচে নেমে যাওয়া। এমনিতেই ভূমিকম্পন সম্ভবা ঢাকা মহানগরী। এখানে মাটির নিচে জালের মতো বিছানো গ্যাস পাইপলাইন। নানা কারণে এগুলোতে শতছিন্ন লিকেজ। মাথার ওপর বিদ্যুৎ-লাইন। অনেকেই বলেন, সাত বা সাড়ে সাত  রিখটার মাত্রার ভূমিকম্প হলে ৭০ শতাংশ বাড়িঘর ধ্বংস হবে।  গ্যাস-বিদ্যুতের আগুনে ঢাকা টাওয়ারিং ইনফার্নো পরিণত হবে। সবার সামনেই ঢাকার জলাশয়গুলো মেরে ফেলা হলো, এখন চারপাশের নদীগুলো দখল করে মেরে ফেলা হচ্ছে। সম্প্রতি দুটি অগ্নিকাণ্ডে পানির সংকট দেখা গেছে। কাকে দায়ী করবেন? সরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা জনগণের পয়সা অপচয় করে বিদেশে হরহামেশা প্রশিক্ষণে যাচ্ছে। মিডিয়ায় বিশেষজ্ঞরা প্রতিনিয়ত বাহাস করছে। প্রতিটি ঘটনার পর দায়িত্বশীলরা বলছেন কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। এভাবে চললে কিছুতেই সংকট থেকে মুক্তি মিলবে না। 

প্রয়োজন সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ। প্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ সব ভবন ভেঙে ফেলা, পুরোনো গ্যাস পাইপলাইনসমূহে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা। গ্যাস-বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম তৃতীয় পক্ষের তদারকিতে আনা। আমি মেয়র অফিসগুলোকে অধিকতর অর্থবহ করার জন্য অবিলম্বে মেট্রোপলিটন গভর্ন্যান্স ব্যবস্থা চালু করার দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে অগ্নিনির্বাপণ কর্তৃপক্ষকে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি সজ্জিত করার সুপারিশ করছি। পাড়া-মহল্লায় মসজিদ-মন্দির, গির্জাগুলোকে গণসচেতনতা সৃষ্টির কেন্দ্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে বলা যেতে পারে। বিষয়টি জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিধায় এটি নিয়ে রাজনৈতিক বাহাস বন্ধ হওয়াও জরুরি।

শেয়ার করুন