২১ মে ২০১২, মঙ্গলবার, ০১:৪৩:৩৪ অপরাহ্ন


উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার নামে নদী দখল: আনু মুহাম্মদ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-১১-২০২৩
উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার নামে নদী দখল: আনু মুহাম্মদ মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ


প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষা আন্দোলন সংগঠক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিক ধারাবাহিকতা রক্ষার নামে নদী দখল দূষণ হচ্ছে। 

জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে নাগরিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী। আরো বক্তব্য রাখেন এসময় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্মা সাধারণ সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, ইনিশিয়েটিভ ফর পিস (আইএফপি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শফিকুর রহমান, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান ইবনুল সাইন রানা, রিভার এন্ডডেল্টা রিসার্স সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ এবং নদী গবেষক তোফায়োল আহমেদ প্রমুখ।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আরো বলেন, একদিকে জিডিপি বাড়তি দেখা গেল অন্যদিকে নদীর দখল দূষণের ফলে নদীগুলোকে হারিয়ে ফেলছি। নদীকে আমরা অনেকেই মুনাফা অর্জনকারী স্থান হিসেবে দেখি। অথচ নদী আমাদের অস্তিত্বের বিষয়। তাই যেভাবেই হোক নদী রক্ষা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বারবার নদীর খাল দূষণ ও দখলের কথা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হলেও সেভাবে কাজ করছে না।

নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, নদীমাতৃক দেশের নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা অনুসন্ধান না করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন গত ২৪ সেপ্টেম্বর ১০০৮টি নদী নির্ধারণ পূর্বক তাড়াহুড়া করে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করে নদ-নদীর অসম্পূর্ণ সংজ্ঞা উপস্থাপন করেছে। অথচ নদীমাতৃক এদেশে আরও ৬০০ এর বেশি নদ-নদীর অস্তিত্ব এখনো রয়েছে। এছাড়াও সম্প্রতি ৩৭ হাজার ৩৯৬ নদী দখলদারের তথ্য মুছে আরও একটি বিতর্ক সৃষ্টি করেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। তারা বলেন, নদ-নদীর খোঁজে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহের কাজ করছি গত ৩০ বছর ধরে। এই কাজে এখন পর্যন্ত যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছি তাতে বাংলাদেশে নদ-নদীর সংখ্যা ওপরে আলোচিত সব সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাবে। প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক প্রদত্ত নদ-নদীর সংখ্যাটি প্রকৃত সংখ্যার কাছাকাছি বলা না গেলেও তিনি উল্লিখিত গ্রন্থে যে তথ্য দিয়েছেন তার গুরুত্ব অপরিসীম।

নোঙর বাংলাদেশ ট্রাস্ট চেয়ারম্যান সুমন শামস বলেন, ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব সড়কে ‘দেশের সকল নদী কে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করো’ দাবিতে মানববন্ধন পালন করে নদী ও প্রাণ প্রকৃতি সুরক্ষা সামাজিক সংগঠন নোঙর। এর পর ২ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে একই দাবিতে বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসমান সভার আয়োজন করে সংগঠনটি। এরপর ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিচাপতি মো. আশরাফুল কামালের স্বাক্ষরে হাইকোর্ট দেশের সকল নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে এদেশের নদ-নদী হাওর-বাওর খাল-বিল ইত্যাদির অভিভাবক হিসেবে আইনি মর্যাদা প্রদান করেছেন। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন তার কাজ শুরু করেছে ২০১৩ সাল থেকে। অথচ বিস্ময়কর ব্যাপার হলো নদ-নদীর সংজ্ঞা নির্ধারণে কমিশন সময় নিয়েছে দীর্ঘ দশ বছর। চলতি বছরের (২০২৩) সেপ্টেম্বর মাসে কমিশন নদ-নদীর যে সংজ্ঞা উপস্থাপন করেছে সেটি অসম্পূর্ণ। সব থেকে দুর্ভাবনার বিষয় হচ্ছে একই সময়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন তড়িঘড়ি করে বাংলাদেশের নদ-নদীর সংখ্যা ১০০৮ টি নির্ধারণ পূর্বক গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেছে। বিষয়টি নিয়ে দেশব্যাপী বিতর্কের ঝড় উঠেছে কারণ কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত নদ-নদীর সংখ্যার চেয়ে আরও প্রায় ৬০০ এর বেশি নদ-নদীর অস্থিত্ব এদেশে রয়েছে। 

এ সময় নদী ও প্রাণ প্রকৃতি সুরক্ষায় নোঙরে ৯ দফা দাবি পেশ করেন সুমন শামস। ১) সরকারি ভাবে ২৩ মে, কে ‘জাতীয় নদী দিবস’ ঘোষণা করে গেজেটভুক্ত করা। ২) আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি ইস্তেহারে রাজধানীসহ দেশেরে সকল নদী, খাল, বিল, পুকুর, জলাশয় এবং প্রাণ প্রকৃতি সুরক্ষার অঙ্গীকার করা। ৩) ১৯৪০ সালের সিএস নকশায় নড়াই নদীর ৯টি খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে করে সীমানা পিলার স্থাপন করা এবং নদীর সাথে খালের প্রবাহ নিশ্চিত করা। ৪) নড়াই নদীসহ রাজধানীর হারিয়ে যাওয়া ৪৭টি খালের দখল উচ্ছেদ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা। ৫) রামপুরা নড়াই নদী থেকে হাতিরঝিল এবং গুলশান লেকের সাথে সংযোগ করা। ৬) কাওরান বাজার থেকে নড়াই, বালু, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যা পর্যন্ত নৌপরিবহণ ব্যাবস্থা চালু করা। ৭) কাওরান বাজার থেকে কলাবাগান লেক, পিলখানা লেক থেকে বুড়িগঙ্গা নদীর সাথে সংযুক্ত করা এবং ধানমন্ডি লেক থেকে রায়েরবাজার হয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর সকল বাধা অপসারণ করে প্রবাহমান করা। ৮) রামপুরা ব্রীজসহ দেশেরে সকল নদীর উপর নির্মাণ করা স্বল্প উচ্চতার সেতু ও কালভার্ট অপসারণ করে নৌপরিবহন উপযোগী নৌপথ তৈরি করা। ৯) দেশেরে নদী খেকো, বালু খেকো, সকল ভূমিদস্যুদের প্রতি কঠোর আইন প্রয়োগ করা।

শেয়ার করুন