আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারি দল এবং কিছু বিরোধী দলের অনড় অবস্থানের কারণে অবরোধ, বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ ভঙ্গুর অর্থনীতিকে আরো সংকট পথে নিয়ে যাচ্ছে। করোনা অভিঘাত, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবরোধ, রাশিয়ার প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ব অর্থনীতি তাল মাতাল হয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি সীমিত আয়ের ‘নুন আন্তে পান্তা ফুরানো’ পরিবারগুলোকে অস্তিত্বের সংকটে পরে। সৃষ্টি হয় ডলার সংকট। ঋণ করে প্রয়োজনীয়, অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রজেক্টস বাস্তবায়ন করায় বাংলাদেশের বিপুল ঋণের বোঝা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ডলারের বিনিময়ে বাংলাদেশ টাকা ক্রমাগত অবমূল্যায়ন হতে থাকে। তদুপরি পলিসি মেকার্সদের অদূরদর্শী পরিকল্পনার কারণে জ্বালানি বিদ্যুৎ খাতে সংকট দেখা দেয়। দেশের প্রাথমিক জ্বালানি আহরণ অ্যান্ড উন্নয়ন উপেক্ষা করে কায়েমি স্বার্থবাদীদের স্বার্থরক্ষায় সরকার জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ আমদানির দিকে ঝুঁকে পড়ে। কিন্তু অব্যাহত ডলার সংকটে তেল, পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্যাদি, এলএনজি, কয়লা আমদানির পর্যাপ্ত অর্থসংকট দেখা দেয়। জ্বালানি বিদ্যুৎসংকটে শিল্প বিশেষ করে রফতানিমুখী শিল্পগুলোর অপারেশন নিদারুণ সংকটে পড়ে। একদিকে রফতানি আয় কমে যায়, অন্যদিকে প্রবাসীরা বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে হুন্ডির আশ্রয় নেয়। এগুলোর সম্মিলিত প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় কমে এখন ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ নতুন সরকারের কাছে দুই মাসের আমদানি সামাল দেওয়ার মতো বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় থাকবে কি না অনেকেই সন্দিহান।
এহেন অবস্থায়ও সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবিতে ধারাবাহিক রাজনৈতিক আন্দোলন করছে অন্যতম প্রধান বিরোধী দলের নেতৃত্বে কিছু বিরোধী দল। অন্যদিকে সরকার নির্বাচন বিষয়ে তাদের অবস্থানে অনড় ঢাকায় রাজপথে পক্ষ-প্রতিপক্ষের অবস্থানে বিস্ফোরোন্মুখ পরিস্থিতি। প্রাথমিক পর্যায়ে শান্তিপূর্ণসহ অবস্থান দেখা গেলেও সম্প্রতি সহিংস হয়ে উঠছে পরিস্থিতি। সরকারবিরোধী আন্দোলনে তেমন জনসম্পৃক্ততা না থাকলেও জ্বালাও পোড়াও, ভাঙচুরের ভয়ে রাজপথে পণ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। এমনিতেই আগুন পণ্যের বাজার আরো অস্থির হয়ে পড়ছে। জানি না সরকারি দল বা বিরোধী দলগুলোর কি লাভ জনগণকে জিম্মি করে? রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হয়নি। ইতিমধ্যে হামাস-ইসরাইয়েল সংঘর্ষ মধ্যপ্রাচ্যে আগুনের লেলিহান শিখা জ্বালিয়েছে। শঙ্কা আছে সংঘর্ষ সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার। ফলশ্রুতিতে বিশ্ব জ্বালানি বাজার আবারও অস্থির হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশের বিপিডিবি, বিপিসি, পেট্রোবাংলা ইতিমধ্যেই দেনার দায়ে দেউলিয়া হওয়ার পথে।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। দেশে বিদ্যমান বর্তমান অনিশ্চিত পরিস্থিতি সাধারণ মানুষকে শঙ্কিত করলেও রাজনৈতিক মহলকে আদৌ সচেতন করছে বলে মনে হয় না। দেশের অর্থনীতি ধসে পড়লে সেটি কারো জন্যই সুখের হবে না। নির্বাচনের মাত্র দেড় মাস বাকি। নির্বাচন কমিশন অচিরে তফসিল ঘোষণা করবে। মৌলিক প্রশ্নে ন্যূনতম সমঝোতা না হলে সংঘর্ষ অনিবার্য। বাংলাদেশে সব নির্বাচনে কিছু না কিছু অনিয়ম হয়েছে। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন ২০১৪ নির্বাচন এবং ২০১৮ নির্বাচনের মতো বিতর্কিত নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন সরকারি দলও সম্ভবত বিব্রত। এমতাবস্থায় সবার কাছে গ্রহণযোগ্য অর্থবহ নির্বাচন না হলে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হবে। অগণতান্ত্রিক অশুভ শক্তি ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চেষ্টা করবো। বাংলাদেশ উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ব্যর্থ হবে।
বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে দেশপ্রেমিক শক্তি এবং গোষ্ঠী চলতি সংকটের সমাধান করে জনগণকে প্রভাবমুক্ত উন্মুক্ত পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ করে দিতে হবে। সচেতন দেশবাসী অবশ্যই সঠিক নেতৃত্ব বেঁচে নিতে ভুল করবে না।