৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৪:৪৯:০৮ পূর্বাহ্ন


শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরো ২ হত্যা মামলা
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৯-২০২৫
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরো ২ হত্যা মামলা শেখ হাসিনা


শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ আরো অনেকের নামে আরো দুটি হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের হয়েছে। গত রোববার গুলশান ও সিদ্ধিরগঞ্জে মামলা দুটি সম্পর্কে জানা গেছে। এর মধ্যে হত্যা মামলা যেটা হয়েছে, সেটা জুলাই আন্দোলনে ছাত্রহত্যা মামলা। 

জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক এমপি একেএম শামীম ওসমান, কৃষক লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ, সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভার সাবেক প্রশাসক আব্দুল মতিন প্রধান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক ও নাসিক ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ও নাসিক ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন মোহাম্মদ সজিবের পিতা মো. সালাউদ্দিন। শহিদদের গেজেটের তালিকায় শহিদ সজিবের ক্রমিক নং ৫৩৬। 

প্রায় এক বছর ১০ মাস পর ছেলে হত্যার অভিযোগ এনে মো. সালাউদ্দিন নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলার আবেদন করলে আদালতের নির্দেশে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলাটি এফআইআরের হিসাবে নথিভুক্ত করা হয়। মামলায় ১০০ থেকে দেড়শ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলাটি (নং-২১৫/২৫) দায়ের করা হলেও বিষয়টি গত রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) নিশ্চিত করেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহিনূর আলম। 

শহিদ সজিবের পিতা সালাউদ্দিন মামলায় উল্লেখ করেন, নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে আহসান উল্লাহ সুপার মার্কেটের বিক্রমপুর হার্ডওয়্যার নামক দোকানে কর্মচারী হিসেবে চাকরি করতো। ঘটনার দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাজারো ছাত্র-জনতা ঘটনাস্থলে দাবি আদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণ মিছিল করছিল। তখন মহাসড়কে যানবাহন ও আশপাশের মার্কেটগুলো বন্ধ হয়ে যায়। বেলা আনুমানিক ১১টার সময় বাদীর ছেলের কর্মস্থলের মালিক তার দোকান বন্ধ করে দেন। এরপর বাদীর ছেলে বাসায় না গিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেয়। 

এ সময়ে আন্দোলন দমন করতে ১ নম্বর বিবাদী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হুকুমে এবং ২ নম্বর বিবাদী সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের পরিকল্পনায় ৩ নম্বর আসামি সাবেক এমপি শামীম ওসমানের নেতৃত্বে এবং ৪ থেকে ২০ নম্বর আসামিরা নারায়ণগঞ্জে গোপন বৈঠক করে নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনের নির্দেশ দেন। সে মোতাবেক বিভিন্ন থানার ও জেলার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নারায়ণগঞ্জ জেলার চাষাঢ়া এলাকার আশপাশের স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন কয়েকটি বাড়িতে আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে গোপন ষড়যন্ত্র করে এবং পরবর্তী সময়ে একত্রিত হয়ে কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে ঘটনাস্থল আশপাশের এলাকায় অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ ও হামলা চালায়। 

বেলা আনুমানিক সাড়ে ১১টায় বিবাদীদের ছোড়া গুলিতে বাদীর ছেলে মোহাম্মদ সজিব গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে লুটিয়ে পড়ে। এরপর তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে দুপুর ১টা ২০ মিনিটের সময় কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তী সময়ে আমার সন্তানের লাশ হাসপাতাল থেকে দোকান মালিক ও আমার ভাতিজার সহযোগিতায় গ্রামের বাড়িতে এনে ২২ জুলাই ২০২৪ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করি। 

বাদী গ্রামের বাড়িতে থাকায় ঘটনার পর সন্তান হারানোর শোক কাটিয়ে উঠে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি সংগ্রহ করে এবং ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ শুনে থানায় মামলা করতে গেলে, থানা কর্তৃপক্ষ মামলা না নেওয়ায় বিজ্ঞ আদালতে এসে মামলা দায়ের করতে বিলম্ব হয়।

গুলশানে মামলা 

জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার গুলশান বাসভবনে প্রবেশ করার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) দফতর সম্পাদক জাবেদুর রহমান জনি। 

গুলশান থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক মোক্তার হোসেন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আজ মামলার এজহার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমানের আদালতে উপস্থাপন করা হয়। আদালত মামলার এজহার গ্রহণ করে ৯ অক্টোবর প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেন।

মামলার অপর আসামিরা হলেন-সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল আলম চৌধুরী, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, ব্যবসায়ী মোহাম্মাদ সাইফুল আলম মাসুদ ওরফে এস আলম, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক তথ্য এবং সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মাদ এ আরাফাত, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতি মোস্তফা আল নাফিজ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মী মো. নূর, সাবেক সড়ক পরিবহন এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমেদ ও আওয়ামী লীগ কর্মী শামীম।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পতিত স্বৈরাচারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতা এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তির আন্দোলনে পালিয়ে যাবার পর থেকেই এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সম্মুখসারির যোদ্ধাদের প্রতিবাদী কণ্ঠকে স্তব্ধ করতে পরিকল্পনা করে আসছে।

উল্লেখ্য, ববি হাজ্জাজ গত বছর সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চিফ প্রসিকিউটরের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। এছাড়া তিনি গত বছর শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকসহ শেখ পরিবারের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সংক্রান্ত দুর্নীতি তদন্ত করতে দুদকের প্রতি নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।

ববি হাজ্জাজ ধারবাহিকভাবে রাজপথে এবং টেলিভিশন টকশোতে শেখ হাসিনার বিচার চেয়ে বক্তব্য দিয়ে আসছেন। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা ও মহিবুল আলম চৌধুরী ফেসবুকে ববি হাজ্জাজের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন। এছাড়া সিদ্দিকী নাজমুল আলম ভিডিওবার্তার মাধ্যমে ববি হাজ্জাজকে শায়েস্তা করার হুমকি দেন।

মামলার অভিযোগে বাদী আরো উল্লেখ করেন, গত ৬ সেপ্টেম্বর আসামি মোস্তফা আল নাফিজ ও মো. নূর ববি হাজ্জাজকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার গুলশান বাসভবনে প্রবেশ করে। সন্দেহভাজন হিসেবে উপস্থিত নিরাপত্তারক্ষী কর্তৃক আটক হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি নূর জানায়, শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে মোস্তফা আল নাফিজ ববি হাজ্জাজকে ছুরিকাঘাতে বা সুবিধাজনক সময়ে তার গাড়িতে বোমা মেরে হত্যার আদেশ দিয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, নূর জানায় এই আদেশ বাস্তবায়নে অর্থায়ন করেছে আসামি এস আলম ও সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন ওবায়দুল কাদের, মহিবুল আলম চৌধুরি, আসাদুজ্জামান খান কামাল, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোহাম্মদ এ আরাফাত, রিয়াজ মাহমুদ, সাগর আহমেদ এবং শামীম।

শেয়ার করুন