৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৪:৪৯:৫৯ পূর্বাহ্ন


দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
কিংস্টন-নিউইয়র্কের প্রথম রাজধানী
হাবিব রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৯-২০২৫
কিংস্টন-নিউইয়র্কের প্রথম রাজধানী কিংস্টন নিউইয়র্কের প্রথম রাজধানী


আমরা অনেকেই গতানুগতিক জায়গাগুলো ভ্রমণে যাই। কিন্তু এর বাইরেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় জায়গা আছে, যা জানা না থাকার কারণে আমাদের দেখা হয় না। এ পর্বে আমি আপনাদের নিউইয়র্কের অদূরে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ঘুরিয়ে আনবো।

হাডসন ভ্যালির কোলে বসে থাকা কিংস্টন যেন সময়ের পাতা উল্টে চলার মতো এক শহর। নিউইয়র্ক সিটি থেকে গাড়ি বা ট্রেনে প্রায় দুই ঘণ্টার পথ আর আপনি পৌঁছে যাবেন এমন এক জায়গায়, যা ছিল নিউইয়র্ক স্টেটের প্রথম রাজধানী।

১৬৫২ সালে ডাচ্ উপনিবেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এ শহরটি ১৭৭৭ সালে আমেরিকান বিপ্লবের সময় নিউইয়র্কের রাজধানী হয়। তবে সে বছরই ব্রিটিশ সেনারা শহরটিকে আগুনে ভস্মীভূত করে। তবুও কিংস্টন আবার উঠে দাঁড়ায়। আজকের দিনে এর প্রতিটি ইটকাঠ ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে। সিনেট হাউস স্টেট হিস্টোরিক সাইটে গিয়ে দেখা যায়, এখানে স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল। কাঠের টেবিল, পুরোনো দলিল আর পাথরের দেওয়াল যেন এখনো বিপ্লবীদের পদচিহ্ন ধরে রেখেছে। কিংস্টন শহরকে বলা হয় ‘থ্রি ইন ওয়ান সিটি’। আপটাউন ১৭০০ শতাব্দীর ডাচ্ ঘরবাড়ি, পাথরের রাস্তা আর পুরোনো গির্জা যেন আপনাকে অতীতে ফিরিয়ে নেয়।

মিডটাউন : শিল্প, সংগীত আর সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। দেওয়ালে দেওয়ালে রঙিন ম্যুরাল, ছোট থিয়েটার আর স্টুডিও শহরটিকে করে তুলেছে সৃজনশীলতার ভুবন।

ডাউনটাউন : হাডসন নদীর ধারে প্রাণবন্ত পরিবেশ, ক্যাফে, জাদুঘর আর ছোট্ট নৌবন্দর-সব মিলিয়ে নদীর তীর হয়ে ওঠে আনন্দের মেলা। নদীর ধারে হাডসন রিভার মেরিটাইম ঘুরে দেখা এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। পুরোনো জাহাজ, নৌযাত্রার ইতিহাস আর সামুদ্রিক সংস্কৃতি এখানে জীবন্ত হয়ে ওঠে। চাইলে Rondout Creek থেকে নৌভ্রমণে বেরিয়ে পড়তে পারেন-হাডসন ভ্যালির পাহাড়-নদী-আকাশ মিলিয়ে যে সৌন্দর্য পাওয়া যায়, তা ভাষায় ধরা যায় না।

কিংস্টন আজ কেবল ইতিহাস নয়, শিল্পের শহরও বটে। সারা বছর ধরে চলে ফারমার্স মার্কেট, স্থানীয় সংগীত উৎসব, O+Festival-এর মতো শিল্প-সংস্কৃতির আয়োজন। শহরের দেওয়ালে আঁকা গ্রাফিতি যেন বলে দেয় ‘কিংস্টন এখনো বেঁচে আছে, শ্বাস নিচ্ছে’।

হাডসন ভ্যালি মানেই ফার্মফ্রেশ খাবার আর স্থানীয় ওয়াইন। আপটাউনের ক্যাফেতে বসে গরম কফি বা ওয়াটার ফ্রন্টের রেস্তোরাঁয় বসে তাজা মাছের পদ-সবকিছুতেই একধরনের সহজ প্রাকৃতিক স্বাদ আছে। কিংস্টন এমন এক শহর যেখানে অতীতের গৌরব, বর্তমানের শিল্প আর প্রকৃতির শান্তি মিলেমিশে গেছে। ইতিহাসপ্রেমী, শিল্পানুরাগী কিংবা প্রকৃতিভ্রমণকারী-সবার জন্যই কিংস্টন এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

কীভাবে যাবেন

গাড়িতে : ম্যানহাটন থেকে প্রায় ১০০ মাইল উত্তরে। I-87 North (New York State Thruway) ধরে কিংসটন এক্সিট।

বাসে : পোর্ট অথরিটি থেকে ট্রেইলওয়েস বাসে সরাসরি কিংস্টন যাওয়া যায়।

ট্রেনে : কাছের Rhinecliff বা Poughkeepsie স্টেশনে নেমে ট্যাক্সি বা বাসে Kingston।

কী দেখবেন

সিনেট হাউস স্টেট হিস্টোর্ক সাইট

এখানেই ১৭৭৭ সালে প্রথম নিউইয়র্ক স্টেট সিনেট বসেছিল। পাথরের দেওয়াল, কাঠের আসবাব আর সংগ্রহশালার দলিল কাগজগুলো স্বাধীনতার গল্প বলে।

Uptown Stockade District

১৭০০ শতাব্দীর ডাচ্ স্থাপত্য, গির্জা আর পাথরের রাস্তা শহরের সবচেয়ে প্রাচীন অংশ। গলিপথে হাঁটলে মনে হবে সময় থমকে গেছে।

Rondout Waterfront District

হাডসন নদীর ধারে রঙিন ক্যাফে, রেস্তোরাঁ আর ছোট্ট মেরিনা। সূর্যাস্তের সময় নদীর ধারে বসা কিংস্টনের সবচেয়ে সুন্দর অভিজ্ঞতা।

হাডসন রিভার মেরিটাইম মিউজিয়াম

পুরোনো নৌযান, ঐতিহাসিক প্রদর্শনী আর নদীভিত্তিক সংস্কৃতির ভান্ডার। কাছেই নৌবিহারের সুযোগ।

মিউটাউন আর্টস ডিস্ট্রিক্টস

গ্যালারি, স্টুডিও, থিয়েটার আর দেওয়ালজুড়ে রঙিন ম্যুরাল। শিল্পানুরাগীদের জন্য স্বপ্নপুরী।

কিংসটন ফারমার্স মার্কেট

বছরজুড়ে স্থানীয় পণ্য ও সংগীতের উৎসব।

O+ Festival-আর্ট, সংগীত আর কমিউনিটি হেলথ ঘিরে অনন্য আয়োজন।

Burning of Kingston (অক্টোবর)-ব্রিটিশদের আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া ইতিহাস পুনরাভিনয়।

খাবার ও থাকার জায়গা

খাবার : আপটাউনের ছোট্ট ক্যাফে, ওয়াটার ফ্রন্টের সি-ফুড রেস্তোরাঁ, আর স্থানীয় ওয়াইন টেস্টিং সবার জন্য আকর্ষণীয়।

থাকার ব্যবস্থা : ঐতিহাসিক বুটিক হোটেল, বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট কিংবা আধুনিক হোটেল-সবই আছে।


নিউইয়র্ক, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শেয়ার করুন