০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৮:০৮:৪০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


কমিউনিটিতে ক্ষোভ ও ন্যায়বিচার দাবি, একজন গ্রেফতার
চাঁদা না পেয়ে বাফেলোতে দুই বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৫-২০২৪
চাঁদা না পেয়ে বাফেলোতে দুই বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা আবু সালেহ মো. ইউসুফ ও বাবুল মিয়া


যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের বাফেলোতে অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। গত ২৭ এপ্রিল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাফেলোর ইস্ট ফেরি ও জেনার স্ট্রিটের ১০০ ব্লকে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন-সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবু সালেহ মো. ইউসুফ জনি (৫৩) ও কুমিল্লার বাবুল মিয়া (৫০)। হত্যাকাণ্ডের সময় শহরের পূর্বাঞ্চলে হ্যাজেলউড এলাকায় জনি ও বাবুল বাড়ি সংস্কারের কাজ করছিলেন। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জনি ও বাবুল বাড়ি সংস্কারের কাজ করার সময় এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক এসে তাদের কাছ থেকে অর্থ (চাঁদা) দাবি করে। উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ওই যুবক বাবুল মিয়াকে চুরিকাঘাত করে। বাবুল মিয়াকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেন আবু সালেহ মোহাম্মদ ইউছুপ। আবু সালেহকে এগিয়ে আসতে দেখে দুর্বৃত্তরা গুলি করে পালিয়ে যায়। গুলিতে দুই জন ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। পরে পুলিশ এসে তাদের লাশ উদ্ধার করে। এ দু’জনের লাশ স্থানীয় ইসিএমসি হাসপাতালে রাখা হয়েছে। 

এ ঘটনায় বাফেলোর বাংলাদেশি কমিউনিটিতে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। গত ২৮ এপ্রিল রোববার ফিলমোর জামে মসজিদের সামনে কমিউনিটির লোকজন প্রতিবাদ সমাবেশ করে। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এই নৃশংস হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িদের গ্রেফতারের দাবি জানান এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। একই সঙ্গে জননিরাপত্তার দাবি জানান। বিক্ষোভ সমাবেশে বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টার অব বাফেলোর সভাপতি একেএম ফাহিম, আল ইসান জামে মসজিদের সভাপতি ও বৃহত্তর কুমিল্লা সোসাইটির সভাপতি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী আবুল বাসার, বিএনপি নেতা মতিউর রহমান লিটু, বাফেলো সিটি হলের কর্মচারী নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার মো. সিরাজুল মোস্তফা (জাভেদ), বাফেলো বিএনপির নেতা ইমতিয়াজ বেলাল, বরিশাল সোসাইটি অব বাফেলোর সভাপতি সৈয়দ ঝিলু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা মনিরুজ্জামান মিয়া, বায়তুল মোকাররম মসজিদের সভাপতি কবির পোদ্দার, হোম ওনার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জামাল হোসেন, ড. ফাহিম তাজওয়া, ড. মোমিন উল্লাহ, মইনুল হোসেন, আব্দুল মান্নান তাজু, মারুফ আহাম্মেদ, ফাইজুর রহমান, জামাল উদ্দিন, বোরহান আলী ও খালেদ আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ইউসুফ ও বাবুল হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত প্রবাসীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন বাফেলোর বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতারা। এ বিশাল বিক্ষোভের ঘণ্টা দুয়েক পরই সন্দেহভাজন দুর্বৃত্তকে সিটির ইস্ট ডেলাভান এবং নর্থ ফরক এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সংবাদে কমিউনিটিতে কিছুটা স্বস্তি এলেও নিরাপত্তাহীনতা কমেনি মোটেও। 

কানাইঘাটে জনির বাড়িতে চলছে মাতম 

আমেরিকার বাফেলো শহরে নিহত সিলেটের আবু সালেহ মো. ইউসুফ জনির বাসায় শোকের মাতম চলছে। কান্না থামছে না পিতা-মাতার। সব সময় হাসিখুশি থাকা ছেলেটি সুখের সন্ধানে আমেরিকা গিয়ে লাশ হলো। এমন ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা। নিহত জনির চাচা শাহাবউদ্দিন আহমদ গত ২৭ এপ্রিল বিকালে জানিয়েছেন, ঘটনার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তাদের কাছে আমেরিকা থেকে খবর আসে; জনি দুর্ঘটনায় পড়েছে। কী দুর্ঘটনা সেটি বোঝার আগেই খবর আসে; জনিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনা শোনার পর থেকে আমরা নির্বাক হয়ে যাই। এমন খবরের জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। তিনি জানান, বাবুল নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে রঙের কাজ করতো সে। বাবুলকে যখন ওখানকার সন্ত্রাসীরা হত্যা করছিল এ দৃশ্য দেখে এগিয়ে আসে জনি।

পরে দু’জনকেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার খবর শুনে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন পিতা নুরুল ইসলাম মেম্বার। ছেলের মৃত্যুর শোকে তিনি কাতর হয়ে পড়েছেন। ক’দিন আগেও ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। এমন ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না তিনি। জানালেন; যারা জনিকে খুন করেছে তাদের যেন শাস্তি হয়। তার ছেলে সব সময় হাসিখুশি থাকতে পছন্দ করতো। গোটা পরিবারকে সে একাই সামলে রাখতো বলে জানান তিনি। আবু সালেহ মো. ইউসুফের মূল বাড়ি সিলেটের কানাইঘাটের ঝিঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের তিনছটি গ্রামে। তার পিতা নুরুল হক মেম্বার এলাকায় পরিচিত লোক। তিনি পরপর দু’বার জনপ্রতিনিধি ছিলেন। প্রায় ৩০ বছর আগে তারা নগরের ইসলামপুর (মেজরটিলা) এলাকার ডি ব্লকের ১১৯/২ বাসা নির্মাণ করেন। নুরুল হক মেম্বার ও তার ভাইয়েরা মিলে চারতলা ভবন করে চারতলায় চার ভাই পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। নুরুল হকের তিন ছেলে এক মেয়ে। এরমধ্যে সবার বড় হচ্ছে ইউসুফ জনি। তার বোন সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তারি পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। তার ছোট ভাই ঢাকার একটি কোম্পানিতে কর্মরত রয়েছে। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ইউসুফ জনি ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করতো। ওই কোম্পানিতে চাকরিরত অবস্থায় প্রায় বছরখানেক আগে পরিবার নিয়ে সে আমেরিকা পাড়ি জমায়। সেখানে বাফেলো সিটিতে সে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিল। সঙ্গে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতো। কুমিল্লার বাবুলের সঙ্গে রঙের কাজের সূত্রে পরিচয় জনির। তার সঙ্গেই বাফেলোতে বসবাস ও কাজ করছেন। আমেরিকায় যাওয়ার পর থেকে সে আর দেশে আসেনি। তবে বড় ভাই হিসেবে ওখান থেকে পরিবারের সব খবর রাখতো। ইউসুফ জনির মা নাজিনা বেগম জৈন্তাপুর সরকারি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। পরিবারের বড় ছেলে ইউসুফ জনি তার ছিল আদরের ধন। ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে তিনিও বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। ছেলের কাছে আবদার ছিল; নাতনিদের নিয়ে দেশে আসার জন্য। জনিও বলেছিল আসবে। কিন্তু মায়ের সেই আবদার আর রক্ষা করতে পারলেন না জনি। আমেরিকার বাফেলো সিটিতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে তিনি পরপারে পাড়ি জমালেন। পিতা-মাতা একটাই সান্ত¦না ছেলের লাশ তারা একবার দেখতে চান। দেশে এনে যেন কবর দেওয়া হয় জনির। সেই ইচ্ছা তাদের। পারিবারিক সূত্র জানায়, হত্যার শিকার ইউসুফ জনি ও বাবুল উদ্দিন বাফেলোর জেনার স্ট্রিটে ১০০ ব্লকে একটি বাসার রঙের কাজে ছিলেন। এ সময় কয়েকজন যুবক বাবুল উদ্দিনের কাছে চাঁদা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় তারা বাবুল উদ্দিনকে ছুরিকাঘাত করলে তাকে রক্ষা করতে ইউসুফ জনি এগিয়ে গেলে অস্ত্রধারীরা তাদের দু’জনকে গুলি করে হত্যা করে। মর্মান্তিক এই হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে বাফেলো বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোকাহত দুটি পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন বাফেলোর বাঙালি কমিউনিটি লিডার। পাশাপাশি বাফেলোতে বসবাসরত প্রবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বাফেলোতে বসবাসরত প্রবাসী বাঙালিরা জানিয়েছেন, বাফেলোতে সব সময় ভয়ে থাকতে হয়। ওখানকার অস্ত্রধারীরা নানা অঘটন ঘটনায়। এ কারণে কোথায় কখন কী হয়; এ নিয়ে সব সময় শঙ্কায় থাকতে হয় বাঙালিদের। 

নাঙ্গলকোটের বাবুল নিহত

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের বাফেলো এলাকায় দুর্বৃত্তের গুলিতে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের সাত সন্তানের জনক বাবুলের (৫৫) মৃত্যু হয়েছে। তিনি পৌরসদরের হরিপুর উত্তর পাড়া গ্রাামের মৃত আব্দুল আজিজের অষ্টম সন্তান। নিহতের বড় ভাই হাবিবুর রহমান (৮০) বলেন, শনিবার (২৭ এপ্রিল) স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা বাবুল ও সিলেটের এক প্রবাসীকে গুলি করে। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। সে গত ১৯৯১ সালে ডিভি লটারির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে যান। ৩ বছর পর দেশে এসে পার্শ্ববর্তী দাউদপুর গ্রামে বিয়ে করেন। বিয়ের পর স্ত্রী হাবিবাকে (৪০) নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস শুরু করেন। প্রথমদিকে বাবুল হোটেলে চাকরি করতো। এরপর হাউজিং ব্যাবসা শুরু করে। বর্তমানে তিনি একাধিক বাড়ির মালিক হয়ে বাড়ির দেখাশোনা করেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা চাঁদা না পেয়ে তার ভাইকে গুলি করে হত্যা করতে পারে।

সাত সন্তানের মধ্যে তার দেড়বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। তার বড় ছেলে সিফাত নাগরিকত্ব পেয়ে সেখানে গাড়ি চালান। বর্তমানে বাবুলের পুরো পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।

শেয়ার করুন