২০ সেপ্টেম্বর ২০১২, শুক্রবার, ০৩:৫১:১৬ অপরাহ্ন


ক্রিকেট অঙ্গনেও বাঁক বদলের সুবাতাস
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৮-২০২৪
ক্রিকেট অঙ্গনেও বাঁক বদলের সুবাতাস বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের খেলার দৃশ্য


শক্তিশালী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওদের আঙিনায় বাংলাদেশের ১০ উইকেটের দাপুটে ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচ জয়কে নিঃসন্দেহে ক্রিকেট অঙ্গনে বাঁক বদলের সুবাতাস। সিরিজ শুরুর আগে দূরে থাক, জয়ের উৎসব করার সকালে খুব কম মানুষ কিন্তু স্বপ্ন দেখেছে বাংলাদেশের জয়ের। ক্রিকেট, বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটকে কেন বলে গৌরবোজ্জ্বল অনিশ্চয়তায় ভরা খেলা, সে কথাটি আবারও প্রমাণিত হলো বদলে যাওয়া নিষ্প্রাণ উইকেটে সাকিব-মিরাজ ঘূর্ণি জাদুতে পাকিস্তানের বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়ায় যেন সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মেতে উঠছিল ১১ জন ক্রিকেটসৈনিক। কী দারুণ বোলিং, কী চটপটে ফিল্ডিং। ধসে গেল পাকিস্তান। ক্রিকেট বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে রইলো তাকিয়ে। নতুন মাইলস্টোন সৃষ্টি করে পাকিস্তানের মাটিতে ১০ উইকেটের ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নিলো বীর বাংলাদেশ।

ছাত্র-জনতার গণবিস্ফোরণে কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর দেশে চলছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রাম। এরই মধ্যে প্রলয়ঙ্করী বন্যায় বিপর্যস্ত দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ জনপদ। ক্রিকেট অঙ্গনেও লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। বিসিবিকে ঢেলে সাজানোর কাজ সূচিত হয়েছে প্রাক্তন জাতীয় দলের অধিনায়ক, প্রাক্তন প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদকে বিসিবি সভাপতি এবং ক্রিকেটার গড়ার কারিগর নাজমুল আবেদীন ফাহিমকে বোর্ড পরিচালক করার মাধ্যমে। অচিরেই আরো সংস্কার হবে ক্রিকেট-ক্রীড়াঙ্গনে।

দেশে গণআন্দোলন চলাকালে ক্রিকেটারদের অনুশীলনে অসুবিধা। তাই পাকিস্তানে আগেভাগে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। সেখানে অনুশীলন করে পরিবেশ এবং পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে সুবিধা হয়েছে। তবে দেশে পরিবর্তন এবং বিশেষত বিসিবিতে পরিবর্তনের শুভ প্রতিক্রিয়া দলের ওপর পড়েছে, অনুভব করা গেছে খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষা পরিবর্তন থেকেই। বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে রাওয়ালপিন্ডি উইকেটের চরিত্র পাকিস্তান দল থেকেও ভালো বুঝেছে। আর তাই তিন পেসারের সঙ্গে দুই স্পিন বোলিং অল রাউন্ডার নির্বাচনে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছে। টস জয় করে বোলিং করার ঝুঁকি নিতে পারাটিও ছিল সাহসী সিদ্ধান্ত। পাকিস্তান কিন্তু দলে প্রথম সারির স্পিনার না রেখে ভুল করেছে।

বাংলাদেশের সূচনাটা ছিল সাফল্য গাথা। আব্দুল্লাহ শফিক, শান মাসুদ, বাবার আজম পত্রপাঠ বিদায় নিয়েছে বৃষ্টি বিঘ্নিত বিলম্বিত প্রথম দিনের সূচনায়। সাঈম আয়ুব, মোহাম্মদ রিজওয়ান এবং সাউদ শাকিলের ঝলমলে ব্যাটিং পাকিস্তানে ম্যাচে ফেরালেও ৪৪৮/৬ ইনিংস ঘোষণা ছিল পাকিস্তানের কৌশলগত ভুল ব্যাটিং চালু রেখে ৫৫০-৬০০ করে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে বের করে দিতে পারতো পাকিস্তান। বীরের মোট ব্যাটিং করেছে একটি কৃতকল্প ইউনিট হয়ে বাংলাদেশ। তরুণ সাদমান ইসলাম খেলেছে অসামান্য দৃঢ়তা আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে। ছোট পাখি মোমিনুল খেলেছে এল ঝলমল ইনিংস। এই যে পাকিস্তানের দূরন্ত পেস আক্রমণের মোকাবিলায় বাংলাদেশের টপঅর্ডার ভেঙে পড়েনি। এটি নতুন বাংলাদেশ ক্রিকেটের বাঁক বদলের সূচনা। বাংলাদেশের লিটল মাস্টার মিস্টার ডিপেনডেবল মুশফিক খেলেছে আকাশছোঁয়া অনবদ্য ইনিংস, লিটন দাস, মেহেদী মিরাজ কাকে রেখে কার কথা বলবো। ৫৬৫ রানের পাহাড় চূড়ায় উঠে বাংলাদেশ পাকিস্তানের মনোবল দুমড়ে মুচড়ে চূর্ণ করেছে। শেষদিনের সকালে সংহারী রূপে আবির্ভূত পরিবর্তিত বাংলাদেশের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি পাকিস্তান। নিষ্প্রাণ উইকেট থেকে দৈত্য-দানবরা বেরিয়ে আসায় সাকিব-মিরাজের ঘূর্ণি বলে ছিল প্রলয় নৃত্য। রিজওয়ান কিছুটা প্রতিরোধ গড়ায় ইনিংস পরাজয়ের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি। কিন্তু ১০ উইকেটে জয় পেয়ে পাকিস্তানের ঘরের আঙিনায় হুঙ্কার দিয়েছে বাংলাদেশের রয়েল বেঙ্গল।

কথা আছে জয় জয়ের জননী। বাংলাদেশ কিন্তু ৫০ ওভার ক্রিকেটে বিশ্বকাপ আসরে জিতেছে, দেশের মাটিতে পাকিস্তান দলকে বাংলাওয়াশ করেছে। টেস্টে পারছিল না বাংলাদেশ পাকিস্তানের বিপক্ষে। এবার টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম জয় দিয়ে শুরু হলো বাঁক বদল। এখন লক্ষ্য সিরিজ জয় সম্ভব হলে ধবল ধোলাই। শান্ত বিজয়টি সাম্প্রতিক আন্দোলনে শহিদদের উৎসর্গ করাটা তার ট্যালেন্টের প্রমাণ। মুশফিক, লিটন পুরস্কারের অর্থ বানভাসি মানুষদের সহায়তার জন্য পাঠানোর কথা ঘোষণায়। এই বাংলাদেশ আমার মায়ের দেশ। বারবার জেগে ওঠে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে।

শেয়ার করুন