৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১০:১৬:১১ অপরাহ্ন


সোসাইটির অভিষেক ও বিজয় দিবস মুহূর্তে ম্লান
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-১২-২০২৪
সোসাইটির অভিষেক ও বিজয় দিবস মুহূর্তে ম্লান নবনির্বাচিত কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করাচ্ছেন এডভোকেট জামাল আহমেদ জনি


গত ১৬ ডিসেম্বর প্রবাসের মাদার সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটির ১৯ সদস্যের নতুন কমিটি সেলিম-আলী পরিষদের (২০২৫-২০২৬) অভিষেক অনুষ্ঠান ও বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান মুহূর্তে ম্লান হয়ে যায়। অনুষ্ঠানস্থল ধাক্কাধাক্কি, হাতাহাতি এবং চিৎকার-চেচামেচির ক্ষেত্রে পরিণত হয়। আয়োজকদের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থামাতে হিমশিম খেতে হয়। এবং বার বার ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়। ভাগ্য ভাল যে অনুষ্ঠানের অতিথি ছিলেন নিউইয়র্ক সিটির মেয়র। অবশেষে মেয়র এরিক অ্যাডামস আসার খবরে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এই ঘটনায় শুধু সোসাইটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়নি, ক্ষুণ্ণ হয়েছে বিজয় দিবসের অনুভূতি। তবে এর জন্য নব নির্বাচিত কর্মকর্তারাও কিছুটা দায়ী। তা নাহলে বিজয় দিবসের দিনে কেন অভিষেক করতে হবে।

ঘটনার সূত্রপাত

অভিষেক অনুষ্ঠান শেষে নতুন কমিটির আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল। আলোচনায় বিজয় দিবসের তাৎপর্যসহ সাংগঠনিক আলোচনা হয়। আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য মঞ্চে উপবিষ্ট সাবেক সেক্রেটারি ফখরুল আলমকে অনুষ্ঠান সঞ্চালক অনুরোধ করলে প্রথমে তিনি অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। পুনরায় বক্তব্য প্রদানের অনুরোধ করা হলে বক্তব্যের প্রারম্ভেই বলেন, মহিউদ্দিনের জ্বালাময়ী বক্তব্যের পর আর বলার কিছুই থাকে না। ফখরুল আলম বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলতে থাকেন বিজয় দিবসে হতাশ হওয়ার কারণ নেই। আমরা ৩ বার বিজয় অর্জন করেছি ৩ রকমের। তিনি বলেন, কথা বলার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমাদেরকে সেবা দাসের একটি গোষ্ঠিতে পরিণত করা হয়েছিলো। সেখান থেকেই বিজয় লাভ করেছি। ফখরুল আলম বলেন, অতীতে যারা লুন্টন করেছে, নারী নির্যাতন করেছে, গুম হত্যা করেছে, দেশে অথৃ বিদেশে পাচার করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের এই বিজয়। এই সময় হলের বাম কোণ থেকে গোলাম মর্তুজা ভুয়া, ভুয়া বলে মন্তব্য করতে থাকেন। তার সাথে আরো কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ভুয়া ভুয়া বলতে থাকেন, প্রতিবাদ করতে থাকেন। চিৎকার চেচামেচি শুরু করেন। প্রতিবাদকারীরা মঞ্চের দিকে তেড়ে আসেন। পরিস্থিতি অন্যদিকে চলে যায়। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি- হাতাহাতি। অনুষ্ঠানস্থলে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মাইক নিয়ে অনেকেই পরিবেশ শান্ত করার চেষ্টা করেন, ক্ষমাও প্রার্থণা করেন। মুহূর্তের মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিষাদময় হয়ে উঠে। নব নির্বাচিত সভাপতি আতাউর রহমান সেলিমসহ আয়োজকরা অনুরোধ করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। এক পর্যায়ে মেয়র এরিক অ্যাডামস আসার খবরে সবাই আস্তে আস্তে হয়ে যায়।

মেয়র অ্যাডামস

মেয়র এডামস কমিউনিটির কল্যাণে সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন তার বক্তব্যে। তিনি বহুজাতিক সমাজে নিজেদের মর্যাদা ও অধিকার আদায়ের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। নতুন কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে সোসাইটিকে সাইটেশন প্রদান করেন। এর আগে কনসাল জেনারেল নজমুল হুদা, স্টেটচ এসেম্বলী মেন জেনিফার রাজকুমার, মেয়র অফিসের চীফ এডমিনিষ্ট্রেটিভ অফিসার মীর আবুল বাশার শুভেচ্ছা বক্তেব্য রাখেন। 

দুই পর্বে ছিলো এই অনুষ্ঠান। প্রথম পর্বে বিজয় দিবস উপলক্ষে কুইজ ও ব্রুকলীন বাংলা স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা কবিতা পাঠ করে। দ্বিতীয় পর্বে ছিল অভিষেক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিদায়ী সভাপতি আব্দুর রব মিয়া। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সদস্য সচিব মাইনুল উদ্দিন মাহবুব। নির্বাচিতদের শপথ বাক্য পাঠ করান নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান এডভোকেট জামাল আহমদ জনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য আব্দুল হাকিম মিয়া, আনোয়ার হোসেন, আব্দুল মান্নান, মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, মাহবুবুর রহমান বাদল, আহবাব চৌধুরী খোকন।

অভিষিক্তরা হলেন- সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, সহ সভাপতি সিনিয়র মহি উদ্দিন দেওয়ান, সহ সভাপতি কামরুজ্জামান বকুল, সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলী, সহ সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম ভুইয়া, কোষাধ্যক্ষ মফিজুল ইসলাম ভুইয়া (রুমি), সাংগঠনিক সম্পাদক ডিউক খান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অনিক রাজ, জন সংযোগ ও প্রচার সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক জামিল আনসারী, সাহিত্য সম্পাদক মোহাম্মদ আখতার বাবুল, ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক আশ্রাব আলী খান লিটন, স্কুল ও শিক্ষা সম্পাদক মোহাম্মদ হাসান (জিলানী), কার্যকরি সদস্য মোহাম্মদ সিদ্দিক পাটোয়ারী, হারুন চেয়ারম্যান, আবুল কাশেম চৌধুরী, জাহাঙ্গীর শহিদ সোহরাওয়ার্দী, মুনসুর আহমদ ও হাছান খান।

অভিষেক অনুষ্ঠানের পরে নতুন কমিটি আলোচনা সভার আয়োজন করেন। এ পর্বে সভাপতিত্ব করেন নতুন কমিটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন অভিষিক্ত সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলী। মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম আজিজ, নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান এডভোকেট জামাল আহমেদ জনি, বিদায়ী সভাপতি আব্দুর রব মিয়া, সিনিয়র সহ সভাপতি মহিউদ্দিন উদ্দিন দেওয়ান, বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী, বিদায়ী কার্যকরি সদস্য ফারহানা চৌধুরী, বিদায়ী সহ সভাপতি ফারুক চৌধুরী, সাবেক সভাপতি আখতার হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন খান, সাবেক সেক্রেটারি ফখরুল আলম, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার।

পবিত্র কুরআন তেলওয়াত করেন অভিষিক্ত সমাজ কল্যাণ সম্পাদক জামিল আনসারী। গীতা পাঠ করেন বিদায়ী কমিটির শিক্ষা ও স্কুল সম্পাদক প্রদীপ ভট্টাচার্য। এরপরে বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে, নিহত করোনায় বাংলাদেশ সোসাইটির সদস্যসহ যারা প্রাণ হারান তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধান সমন্বয়কারী ফারহানা চৌধুরী, ফারুক চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদব আব্দুর রহিম হাওলাদার, সাবেক সেক্রেটারী মোহাম্মদ হোসেন খান, সাবেক সভাপতি আখতার হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী, অভিষিক্ত কোষাধ্যক্ষ মফিজুল ইসলাম ভুইয়া রুমী, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম এ আজিজ, সাবেক সেক্রেটারি ফখরুল আলম, নবনির্বাচিত সহ সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুল প্রমুখ।

শেয়ার করুন