৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:৩৯:০১ অপরাহ্ন


বাংলাদেশ সোসাইটি : দলীয় স্লোগান ধাক্কাধাক্কিতে একুশের চেতনা ম্লান
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০২-২০২৫
বাংলাদেশ সোসাইটি : দলীয় স্লোগান ধাক্কাধাক্কিতে একুশের চেতনা ম্লান ক্রেস্ট দিচ্ছেন শাহ নেওয়াজ


বাংলাদেশ সোসাইটি প্রবাসে বাংলাদেশিদের মাদার সংগঠন হিসেবে পরিচিত। এই সংগঠনের নামের সঙ্গে বাংলাদেশ শব্দটি জড়িয়ে আছে, আছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতিচ্ছবি। যারা নেতৃত্বে আছেন তারা কী সেই প্রত্যাশাটুকু রক্ষা করতে পারছেন? দায়িত্ব নেওয়ার পর দুটি বড় অনুষ্ঠান করেছেন। দুটি অনুষ্ঠানেই প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। আর দুটি অনুষ্ঠানেই গন্ডগোল হয়েছে। আর গন্ডগোল করেছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। অভিষেক অনুষ্ঠানে তারা গন্ডগোল করেছে, হয়তো তাদের প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। তাই বলে একুশের অনুষ্ঠানে! আর এর দায়দায়িত্ব কী শুধু আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের ওপর বর্তায়, বাংলাদেশ সোসাইটির কার্যকরি কমিটি কী তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারেন? যদিও পুষ্পমাল্য দেওয়ার আগে সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী এবং সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মহিউদ্দিন দেওয়ান বারবার করে বলছিলেন কোনো দলীয় স্লোগান দেওয়া যাবে না। কিন্তু পুষ্পমাল্য দেওয়ার শুরুতে কেন আওয়ামী লীগকে দেওয়া হলো? আওয়ামী লীগ তো ক্ষমতায় নেই? অতীতে দেখা গেছে বাংলাদেশে যারা ক্ষমতায় তারাই আগে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেছে। এবার কেন শুরুতে আওয়ামী লীগকে দেওয়া হলো? এর পেছনে কারা কলকাঠি নাড়িয়েছেন? কারা বাংলাদেশ সোসাইটির ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? সবার মনে রাখা উচিত বাংলাদেশ সোসাইটি কোনো দলীয় সংগঠন নয়।

রাত ১২টা ১ মিনিটে বাংলাদেশ সোসাইটি এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের পুষ্পমাল্য অর্পণের পরই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনকে পুষ্পমাল্য অর্পণের সুযোগ দেওয়া হয়। পুষ্পমাল্য অর্পণ করতে গিয়ে তারাই দলীয় স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। তা-ও নেতৃত্বে ছিল যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পাতি নেতারা। কারা স্লোগান দেওয়া শুরু করেন- জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয় শেখ হাসিনা। এরপরই যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির গুটিকতেক পাতি নেতা এবং সোসাইটির সাধারণ সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দিতে থাকেন। শুরু হয় উত্তেজনা, ধাক্কাধাক্কি। দলীয় স্লোগান দেওয়া কয়েকজনকে সিকিউরিটি বের করে দেয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চলে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। সারাদিন চমৎকারভাবে অনুষ্ঠান চলছিল। নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি স্মরণীয় হয়ে উছেঠিলো কিন্তু দলীয় চিন্তার কারণে মলিন হলো একুশের চেতনা। সুন্দর অনুষ্ঠানে কালিমা লেপে দেওয়া হলো। আগামী দিনে বাংলাদেশ সোসাইটির নেতৃবৃন্দের বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত।

প্রবাসে জন্ম নেওয়া এবং বেড়ে প্রজন্মের মধ্যে বাংলা ভাষা ও বাংলা সংস্কৃতি তুলে ধরার প্রত্যয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্ক সিটির উডসাইডের তিব্বতি সেন্টারে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করেছে বাংলাদেশ সোসাইটি। বিকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে অনুষ্ঠানমালা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, গোল্ডেন হোম কেয়ার সার্ভিসের কর্ণধার লায়ন শাহ নেওয়াজ। এছাড়াও আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন সি ল্যু। 

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সোসাইটির বাংলা স্কুলের ছাত্রছাত্রীসহ প্রবাসের নতুন প্রজন্ম ও শিল্পীদের অসাধারণ হৃদয়গ্রাহী পরিবেশনা ও মনোমুগ্ধকর নৃত্যানুষ্ঠান উপস্থিত সবার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল প্রথমবারের মতো ‘বাংলাদেশ সোসাইটি’ অ্যাওয়ার্ড প্রদান। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বক্সার জিনাত ফেরদৌসকে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদাসহ অতিথি আর সোসাইটির কর্মকর্তারা তার হাতে অ্যাওয়ার্ডটি তুলে দেন।

বিকাল ৫টার দিকে শিশু-কিশোর-কিশোরীদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে সোসাইটির একুশের অনুষ্ঠান শুরু হয়। সভাপতি আতাউর রহমানের নেতৃত্বে সোসাইটির কর্মকর্তা ও উপস্থিত অতিথিরা এই প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মেডেল পরিয়ে দেন অতিথি জন ল্যু। পরবর্তী সময়ে রাত ৮টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে একুশের অনুষ্ঠান শুরু হয়। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের পর ভাষাশহিদসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের সব শহিদ এবং সোসাইটির প্রয়াত সাবেক কর্মকর্তা ও প্রবাসীদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া-মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত করেন সোসাইটির সমাজকল্যাণ সম্পাদক জামিল আনসারী। এরপর ভাষাশহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের পর বেহালায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।

অনুষ্ঠানমালায় আরো ছিল নতুন প্রজন্মের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সংক্ষিপ্ত আলোচনা এবং রাত ১২টা ১ মিনিটে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে নির্মিত অস্থায়ী শহিদ বেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম। অতিথি ছাড়াও বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন দেওয়ান। বিভিন্ন পর্ব পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, একুশে উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন দেওয়ান, প্রধান সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী, সদস্যসচিব ডিউক খান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অনিক রাজ ও সাহিত্য সম্পাদক মোহাম্মদ হাসান জিলানী।

একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন উপলক্ষে ‘অক্ষর’ নামে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। এ প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা। এ সময় শাহ নেওয়াজ, সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলীসহ সোসাইটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুর রহিম হাওলাদার, সাবেক সহ-সভাপতি আজহারুল হক মিলন, সাবেক সহ-সভাপতি ফারুক মজুমদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম ও রুহুল আমীন সিদ্দিকী, উপদেষ্টা আজিমুর রহমান বোরহান, মোহাম্মদ আতোয়ারুল আলমসহ বর্তমান এবং সাবেক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সাংস্কৃতিক পর্বে প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পী চন্দন চৌধুরী, শাহ মাহবুব, কামরুজ্জামান বকুল, করিম হওলাদার, মরিয়ম মারিয়া প্রমুখ সংগীত পরিবেশন করেন। এছাড়াও জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী প্রিয়া ডায়েস ও তার দল এবং নৃত্যাঞ্জলিীর শিল্পীরা মনোজ্ঞ নৃত্য পরিবেশন করেন।

বাংলাদেশ সোসাইটির একুশের অনুষ্ঠানে শতাধিক সংগঠনের পক্ষ থেকে রাত ১২টা ১ মিনিটে অস্থায়ী শহিদ মিনারের পাদদেশে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে। নিউইয়র্ক বাংলাদেশ সোসাইটি ছাড়াও উল্লেখযোগ্য সংগঠনগুলোর মধ্যে ছিলো: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যুক্তরাষ্ট্র শাখা ও অঙ্গসংগঠন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) যুক্তরাষ্ট্র শাখা ও অঙ্গসংগঠন, জাতীয় পার্টি যুক্তরাষ্ট্র শাখা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) যুক্তরাষ্ট্র, বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটি ইউএসএ ইন্ক, বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতি যুক্তরাষ্ট্র ইন্ক, চিটাগাং অ্যাসোসিয়েশন ইউএসএ ইন্ক, রূপসী চাঁদপুর ফাউন্ডেশন ইন্ক, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটি ইউএসএ ইন্ক, দোহার উপজেলা সমিতি ইউএসএ ইন্ক, কুইন্স বাংলাদেশ সোসাইটি ইন্ক ইউএসএ, বাংলাদেশি আমেরিকান কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন ইন্ক, মুন্সীগঞ্জ বিক্রমপুর অ্যাসোসিয়েশন ইন্ক, কুমিল্লা সমিতি যুক্তরাষ্ট্র ইন্ক, চাটখিল সোসাইটি ইউএসএ ইন্ক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সোসাইটি ইউএসএ ইন্ক, নিউইয়র্ক বাংলাদেশি আমেরিকান লায়ন্স ক্লাব, সিলেট গণদাবি পরিষদ ইউএসএ ইন্ক, মুন্সীগঞ্জ বিক্রমপুর অ্যাসোসিয়েশন ইন্ক, বাংলাদেশ বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতি ইউএসএ ইন্ক, প্রবাসী নরসিংদী জেলা সোসাইটি ইউএসএ ইন্ক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কমিউনিটি অব নর্থ আমেরিকা ইন্ক, কুমিল্লা সোসাইটি অব ইউএসএ ইন্ক, বৃহত্তর দাউদকান্দি অ্যাসোসিয়েশন ইউএসএ ইন্ক, বগুড়া সোসাইটি ইউএসএ ইন্ক, নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ইউএসএ, প্রবাসী শরীয়তপুর সমিতি ইউএসএ ইন্ক, নবাবগঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন অব ইউএসএ ইন্ক, গ্রেটার বেগমগঞ্জ সোসাইটি ইউএসএ ইন্ক, হবিগঞ্জ জেলা কল্যাণ সমিতি যুক্তরাষ্ট্র ইন্ক, প্রবাসী সিরাজগঞ্জ জেলা সমিতি ইন্ক, রংপুর জেলা সমিতি ইউএসএ ইন্ক, নারায়ণগঞ্জ ডিস্ট্রিক্ট অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা ইন্ক, সিলেট সদর সমিতি ইউএসএ ইন্ক, মানিকগঞ্জ সমিতি নর্থ আমেরিকা ইন্ক, সম্মিলিত বরিশাল বিভাগবাসী যুক্তরাষ্ট্র ইন্ক, যশোর সোসাইটি অব আমেরিকা ইন্ক, পাবনা সমিতি ইউএসএ ইন্ক, বরিশাল বিভাগীয় সমিতি ইউএসএ ইন্ক, বাংলাদেশ আমেরিকান পোস্টাল এমপ্লয়ি অ্যাসোসিয়েশন ইন্ক, কুষ্টিয়া জেলা সমিতি ইউএসএ ইন্ক, লক্ষ্মীপুর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাসোসিয়েশন ইউএসএ ইন্ক, সেনবাগ সোসাইটি, ভোলা ডিস্ট্রিক্ট অ্যাসোসিয়েশন অব ইউএসএ ইন্ক, বৃহত্তর লাকসাম ফাউন্ডেশন যুক্তরাষ্ট্র, কোম্পানীগঞ্জ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ইউএসএ, সাতকানিয়া সোসাইটি ইউএসএস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন ইউএসএ ইন্ক, সিলেট এমসি অ্যান্ড গভ. কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অব ইউএসএ ইন্ক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নাগরিক ঐক্য ফোরাম প্রমুখ।

শেয়ার করুন