১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ০৭:৩৬:২১ পূর্বাহ্ন


ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৪-২০২৫
ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়


হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ২.২ বিলিয়ন ডলারের বেশি গবেষণা অনুদান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া পর ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের দাবিগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের স্বাধীনতা সীমিত করার চেষ্টাকে অবৈধ ও অযৌক্তিক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ১১ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি চিঠি পাঠিয়ে বিভিন্ন নীতিমালা পরিবর্তন এবং ক্যাম্পাসে কিছু ছাত্র ক্লাবের স্বীকৃতি বন্ধ করার দাবি জানায়। চিঠিতে প্রশাসন বলেছিল, ক্যাম্পাসে গত বছর গাজার যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অ্যান্টিসেমিটিজম (ইহুদিবিরোধী মনোভাব) বেড়ে গিয়েছিল, যা তারা আরেকটি বড় উদ্বেগ হিসেবে তুলে ধরেছে। সরকার বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের শিক্ষক এবং ছাত্রদের মধ্যে রাজনৈতিক বৈচিত্র‍্য নিশ্চিত করতে এবং ‘আমেরিকান মূল্যবোধের প্রতি শত্রুতা’ পোষণকারীদের শনাক্ত করতে বলেছে। এ চিঠির পর ১২ এপ্রিল প্রশাসন হার্ভার্ডের গবেষণা তহবিল ২.২ বিলিয়ন ডলার ফ্রিজ করে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় এর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং প্রশাসনের চাপের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সিদ্ধান্ত নেয়।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট এলান গার্বার বলেন, আমরা প্রশাসনের এসব দাবির বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নিয়েছি। এটি আমাদের একাডেমিক স্বাধীনতা এবং প্রথম সংশোধনী অধিকার লঙ্ঘন করে। আমরা এসব অযৌক্তিক চাপের সামনে মাথা নত করবো না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবীরা মামলায় যুক্তি তুলে ধরেছেন, সরকারের পদক্ষেপটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় মারাত্মক প্রভাব ফেলবে এবং তা অযৌক্তিক ও মনগড়া।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র হ্যারিসন ফিল্ডস হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে বলেছেন, হার্ভার্ডের মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারি সহায়তা একটি বিশেষ সুবিধা, যা জনগণের ট্যাক্সের টাকায় চলে। এর মাধ্যমে হার্ভার্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অতি উচ্চ বেতন প্রদান করা হচ্ছে।

হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপের পর আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি প্রফেসরস সরকারের পদক্ষেপকে বেআইনি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তারা আদালতে এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে। এছাড়াও আমেরিকান কাউন্সিল অন এডুকেশন হার্ভার্ডের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছে, এটি স্পষ্ট যে, সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর অযৌক্তিক চাপ সৃষ্টি করছে এবং তাদের গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ করছে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা প্রশাসনের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে এবং একাডেমিক স্বাধীনতা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট এলান গার্বার বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি, আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সরকারি হস্তক্ষেপের থেকে মুক্ত থাকতে হবে এবং এই লড়াই দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপ কেবল একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা নয়, বরং পুরো দেশের একাডেমিক স্বাধীনতা এবং শিক্ষার মৌলিক মূল্যবোধের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং একাডেমিক সংস্থাগুলোর সমর্থন হার্ভার্ডের পাশে থাকায় এ আইনি লড়াইটি শুধু হার্ভার্ড নয়, বরং পুরো দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থার স্বাধীনতা এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।

শেয়ার করুন