টেক্সাসে ইসলামোফোবিয়া (ইসলামবিরোধী আচরণ) শুধু বাড়ছে না, এটি এখন রাজনীতিকদের দ্বারা একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা মুসলিম সম্প্রদায়কে সুরক্ষাহীন করে তুলছে। রাজ্যের নেতারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এবং ঘৃণামূলক মন্তব্য করে পুরো সম্প্রদায়ের ওপর শারীরিক ও মানসিক চাপ তৈরি করছেন। গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট সম্প্রতি ইস্ট প্লানো ইসলামিক সেন্টারের (ইপিক) আবাসিক প্রকল্পকে ‘শরিয়া সিটি’ হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং মিথ্যা দাবি করেন, এই প্রকল্পটি শরিয়া আইনকে সমর্থন করে। এই মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে তিনি স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্যবস্তু করেছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে বৈদেশিকতা ও ঘৃণার সঞ্চার করেছেন। ইস্ট প্লানো ইসলামিক সেন্টার প্রস্তাবিত ৪০২ একর জায়গার ইপিকসিটি উন্নয়ন প্রকল্পকে ‘শরিয়া সিটি’ বলে টেক্সাস রেঞ্জার্সকে ইপিক এবং তার সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে একটি অপরাধমূলক তদন্ত চালানোর নির্দেশ দেন। অ্যাটর্নি জেনারেল কেন প্যাক্সটন এই প্রকল্পটির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন এবং এরপর সিনেটর জন কর্নিন ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসকে প্রকল্পটি নিয়ে তদন্ত করার আহ্বান জানান। এটি কোনো সাধারণ রাজনৈতিক বক্তৃতা নয়, বরং এটি এমন একটি মিথ্যা প্রচারণা যা মুসলিমদের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। ইপিক এবং প্লানো মুসলিম সম্প্রদায় বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ এবং অপবাদের মুখে পড়েছে, যার কারণে তারা শারীরিক হুমকির শিকার হচ্ছে। মুসলিম শিশু, পরিবার এবং কমিউনিটির সদস্যরা এই অপ্রত্যাশিত আক্রমণের ফলে শারীরিক এবং মানসিকভাবে বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন।
টেক্সাসের মুসলিমদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শুধু এখানেই থেমে থাকছে না। কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (কেয়ার) জানিয়েছে, টেক্সাসের গভর্নর এবং অ্যাটর্নি জেনারেল মুসলিমদের সাংবিধানিক অধিকার এবং স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করার জন্য বিভিন্ন বৈষম্যমূলক বিল প্রস্তাব করেছেন। নতুন কয়েকটি বিল, যেমন সিনেট বিল ২২৩৩ এবং ২৯৭২, মুসলিম শিক্ষার্থী এবং শিক্ষককে তাদের প্যালেস্টাইন ও মানবাধিকার সম্পর্কে মতপ্রকাশের জন্য অন্যায়ভাবে লক্ষ্যবস্তু করতে চায়। অন্যদিকে এসবি ১৭ নামক একটি বিল, যা সম্প্রতি সিনেটে পাস হয়েছে, এটি কিছু দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের ভূমি অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে, ফলে তারা টেক্সাসে স্থিতিশীল জীবন গড়ার অধিকার হারাবে। একই সঙ্গে, কিছু প্রস্তাবিত বিল, যেমন এইচবি ২৩৯১, ধর্মীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংরক্ষিত বিষয় হিসেবে ইসলামোফোবিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করছে না, যা মুসলিমদের বিশেষভাবে লক্ষ্যবস্তু করে। এর ফলে মুসলিমরা তাদের মৌলিক অধিকার এবং সম্মান রক্ষার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন।
২০২৪ সালে কেয়ারের রিপোর্টে দেখা গেছে, তারা ৮ হাজার ৬৫৮টি ইসলামবিরোধী বৈষম্যের অভিযোগ পেয়েছে, যা ১৯৯৬ সাল থেকে তাদের রিপোর্টিং শুরুর পর সবচেয়ে বেশি। ইসলামের বিরুদ্ধে বৈষম্য শুধু একটি বিমূর্ত ধারণা নয়, এটি এখন বাস্তব জীবনে মুসলিমদের নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং অধিকারকে প্রভাবিত করছে। এছাড়া এক বছর আগে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম, ইহুদি, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মের শিক্ষার্থীরা রাজ্য পুলিশ দ্বারা নির্মমভাবে আক্রমডুত হয়েছিল। তারা একটি বিদেশি সরকারের সমালোচনা করেছিল, যা হাজার হাজার নিরীহ নাগরিকের মৃত্যুতে অবদান রেখেছে। এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করছে যে, সরকারের পক্ষ থেকে মুসলিমদের এবং তাদের সমর্থকদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়ছে। তবে আশার কথা হলো, সম্প্রতি আন্তঃধর্মীয় সংহতি প্রদর্শিত হয়েছে, যেখানে মুসলিম, ইহুদি এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতারা একত্রিত হয়ে এই ঘৃণামূলক ভাষণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। তারা ইস্ট প্লানো ইসলামিক সেন্টারের বিরুদ্ধে চলমান তদন্তের প্রতিবাদ জানিয়ে একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠিয়েছেন, তারা বলেছেন, এটি শুধু মুসলিমদের বিষয় নয়, এটি একটি নাগরিক অধিকার বিষয়। এটি একটি সিগন্যাল যে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে একতা এবং সংহতি টেক্সাসে ঘৃণা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে কার্যকর উপায় হতে পারে। টেক্সাসের মুসলিম সম্প্রদায় এখন এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের মধ্যে রয়েছে, যেখানে তাদের চুপ থাকার সুযোগ নেই। সম্প্রতি, মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক ভাষণ এবং বৈষম্যমূলক নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। মুসলিম সম্প্রদায়কে তাদের অধিকার রক্ষার জন্য আরো বেশি সক্রিয় হতে হবে, বিশেষ করে এই রাজ্যে তাদের নিরাপত্তা এবং মৌলিক অধিকারগুলো সুরক্ষিত রাখার জন্য।
রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে আরো জোরালো প্রতিবাদ ও দাবি জানাতে হবে। মুসলিম সম্প্রদায়কে সরাসরি রাজনীতিবিদদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, ফোন কল, পাবলিক মন্তব্য এবং অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। বর্তমানে টেক্সাসে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যেসব আইন এবং নীতি প্রণীত হচ্ছে, তা তাদের জীবন এবং নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করছে।
এ সময়, মুসলিম সম্প্রদায়কে আইনপ্রণেতাদের কাছে তাদের অবস্থান তুলে ধরতে হবে। আইনপ্রণেতাদের কাছে সরাসরি বক্তব্য রাখলে, তারা বুঝতে পারবে যে টেক্সাসের মুসলিমরা একত্রিত, সচেতন এবং নিজেদের অধিকার রক্ষার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। এখন সময় এসেছে যে মুসলিম সম্প্রদায় তাদের অধিকার রক্ষার জন্য একজোট হয়ে কর্মপন্থা গ্রহণ করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে সকল ধরনের ঘৃণা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়বে। এর মাধ্যমে তারা নিজেরা যেমন নিরাপদ থাকবে, তেমনি তাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও একটি নিরাপদ ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।