০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১০:২৮:৩৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তন নিয়ে প্রতিবেদন
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৫-২০২৫
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তন নিয়ে প্রতিবেদন ঢাকা বিমানবন্দরে খালেদা জিয়া


লন্ডনে দীর্ঘ চার মাস পর দেশে ফিরে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় পৌঁছেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। গত ৬ মে বেলা ১টা ২৫ মিনিটে তিনি তাঁর বাসভবনে পৌঁছান। খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়ি বিমানবন্দর থেকে শুরু করে ফিরোজায় পৌঁছানো পর্যন্ত পুরা রাস্তায় দলীয় নেতা-কর্মীরা তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। 

এর আগে বেলা ১১টা ১০ মিনিটের দিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর দুই পুত্রবধূকে বহনকারী গাড়ি বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসভবনের দিকে রওনা করে। বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানান বিএনপির নেতা-কর্মীরা। ‘খালেদা জিয়ার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’, ‘খালেদা জিয়া ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’-নেতা-কর্মীদের স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে রাজপথ। কেউ হাতে ফুল, কেউ ব্যানার-প্ল্যাকার্ড, কেউ খালেদা জিয়ার ছবিসংবলিত টি-শার্ট পরে রাজপথে নেমেছিলেন।

খালেদা জিয়ার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বেশ গুরুত্বের সঙ্গে কাভারেজ করেছে আল জাজিরা, স্ট্রেইট টাইমস, টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়াসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। কেউ বলছে, দেশের ‘গণতন্ত্রের জন্য সংকটময় মুহূর্তে’ দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া। আবার কেউ লিখেছে, খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা ‘নির্বাচনে জন্য বাড়তি চাপ’ তৈরি করবে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া শিরোনাম করেছে, ‘যুক্তরাজ্যে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরলেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।’ মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তন নির্বাচনের চাপ বাড়াচ্ছে’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘লন্ডনে চার মাস চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাঁর দেশে ফেরার পর আগামী জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর চাপ আরও বেড়েছে।’ এতে আরও বলা হয়েছে, ‘গত বছরের আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকার এখন দেশের দায়িত্ব পালন করছে। হাসিনার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়ার দল বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো ড. ইউনূসের সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে ডিসেম্বরেই জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার, যাতে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসে।’

এবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘শেখ হাসিনার শাসনামলে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি বিরোধী দল নির্বাচন বয়কট করেছিল অথবা ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলেছিল। অনেকেই হাসিনার পতনকে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে ফেরার একটি সুযোগ হিসেবে দেখেছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নতুন সরকারের নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে কিছুটা সন্দেহ ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।’ এতে আরও বলা হয়, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলেছে, বিভিন্ন খাতে সংস্কারের অগ্রগতির ওপর নির্ভর করে নির্বাচন হয় ডিসেম্বরেই, না হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এই পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার দেশে ফেরাকে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।’

আয়ারল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম আইরিশ নিউজও একই ধরনের শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে। মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম স্ট্রেইট টাইমস ‘বাংলাদেশের অসুস্থ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বাসায় ফিরেছেন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিএনপির দাবির পালে নতুন হাওয়া দিয়েছে। মারাত্মক আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন এবং আগস্টে ভারতে চলে যান। এর পর থেকে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে রয়েছে দেশটি।’

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাও। সংবাদমাধ্যমটি ‘গণতন্ত্রের সংকটপূর্ণ সময়ে দেশে ফিরলেন সাবেক নেতা খালেদা জিয়া’। সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনে চার মাস চিকিৎসার পর ঢাকায় ফিরেছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাঁর এই প্রত্যাবর্তনে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার চাপ বেড়েছে।’

আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা এমন এক সংকটপূর্ণ সময়ে ঘটল, যখন গত বছরের আগস্টে ছাত্র বিক্ষোভে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ একটি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে শাসিত হচ্ছে। খালেদা জিয়ার দেশে উপস্থিতি তাঁর দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) জন্য বিশাল প্রতীকী মূল্য বহন করে। অন্যদিকে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হাসিনা এখন ভারতে নির্বাসিত।

এদিকে, খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার খবরে সকাল থেকেই গুলশানের বাসভবনের সামনে জড়ো হন। সেখানে নিরাপত্তা জোরদারে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।

এর আগে গত ৭ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে রওনা হয়ে ৮ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যে পৌঁছান খালেদা জিয়া। বিশেষায়িত লন্ডন ক্লিনিকে টানা ১৭ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। পরে ২৫ জানুয়ারি থেকে বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। 

শেয়ার করুন