১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ০৬:১০:১৬ পূর্বাহ্ন


‘মিট দ্য প্রেস’-এ ট্রাম্প
সংবিধান রক্ষা করা আমার দায়িত্ব কি না, নিশ্চিত নই
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৫-২০২৫
সংবিধান রক্ষা করা আমার দায়িত্ব কি না, নিশ্চিত নই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করছেন এনবিসি নিউজের প্রবীণ সাংবাদিক ক্রিস্টেন ওয়েলকার


প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৫ মে এনবিসি নিউজের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘মিট দ্য প্রেস’-এ দেওয়া এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন, তিনি নিশ্চিত নন সংবিধান মেনে চলা তার দায়িত্ব কি না। অনুষ্ঠানে উপস্থাপক ক্রিস্টেন ওয়েলকার তাকে প্রশ্ন করেন, একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে আপনার কি সংবিধান রক্ষা করা প্রয়োজন? জবাবে ট্রাম্প বলেন, আমি জানি না। আমি কোনো আইনজীবী নই, আমি জানি না। ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ‘বহিষ্কার অভিযান’ পরিচালনা করবেন। সেই লক্ষ্যে তার প্রশাসন চায় ভেনেজুয়েলার কুখ্যাত গ্যাং ট্রেন দে আরাগুয়ার সন্দেহভাজন সদস্যদের বিচার ছাড়াই দ্রুত বহিষ্কার করতে। অথচ মার্কিন সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বলছে, কোনো ব্যক্তিকে তার জীবন, স্বাধীনতা বা সম্পত্তি আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া কেড়ে নেওয়া যাবে না। এই অধিকার শুধু নাগরিকদের নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী সব ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে, যা সুপ্রিম কোর্ট একাধিকবার নিশ্চিত করেছে।

এই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প বলেন, তিনি চান যুক্তরাষ্ট্রে থাকা কয়েক মিলিয়ন অনিয়মিত অভিবাসীকে যাদের তিনি ‘পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ’ বলে আখ্যা দেন, দ্রুত দেশ থেকে বের করে দিতে। আমাকে নির্বাচিত করা হয়েছে এদের এখান থেকে বের করে দিতে- বলেন ট্রাম্প। ‘কিন্তু আদালত আমাকে তা করতে দিচ্ছে না।’

তিনি আরো বলেন, যদি আপনাকে বিচার করতে হয়, তাহলে আমাদের এক বা দুই বা তিন মিলিয়ন বিচার করতে হবে। এটা সময় নষ্ট। সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তিনি আইনজীবীদের পরামর্শে চলেন এবং তার আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী কাজ করছেন। যদিও বাস্তবে সুপ্রিম কোর্ট তার প্রশাসনের একাধিক নীতিকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। কারণ এতে অভিবাসীদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছিল। ১৮ শতকের এলিয়েন এনেমিজ অ্যাক্ট মূলত যুদ্ধকালীন সময়ের জন্য প্রণীত আইন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, ট্রেন দে আরাগুয়া গ্যাংটি ভেনেজুয়েলার সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং একে ‘যুদ্ধকালীন শত্রু’ হিসেবে বিবেচনা করে বিচার ছাড়াই বহিষ্কার করা যায়। এই পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট একাধিকবার প্রশাসনের পদক্ষেপ আটকে দিয়েছে।

একটি আলোচিত ঘটনায়, কিলমার আব্রেগো গার্সিয়া নামে এক সালভাদর নাগরিককে, যাকে ২০১৯ সালে আদালতের আদেশে দেশে ফেরত পাঠানো নিষিদ্ধ ছিল, তাকে ট্রাম্প প্রশাসন ‘প্রশাসনিক ভুলে’ সালভাদরে ফেরত পাঠায়। সুপ্রিম কোর্ট পরে নির্দেশ দেয়, গার্সিয়াকে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে দিতে হবে, তবে এখনো সরকার কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

ওই সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, আমি আইনজীবী না, আইনগত দিকগুলো দেখা আমার কাজ না। আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বোনডি এই বিষয়ে দায়িত্বে আছেন এবং তিনি খুবই ভালো কাজ করছেন। ওয়েলকার প্রশ্ন করেন, গার্সিয়াকে ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের কেউ কি সালভাদর সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে? জবাবে ট্রাম্প বলেন, জানি না, অ্যাটর্নি জেনারেলকে জিজ্ঞাসা করতে হবে।

সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে, কিছু মার্কিন নাগরিককে ভুলভাবে অভিবাসী ভেবে আটক করা হয়েছে। ওয়েলকার জানতে চান, সাধারণ মানুষকে কি এখন থেকে পরিচয়পত্র নিয়ে চলাফেরা করতে হবে? ট্রাম্প বলেন, আমার মনে হয় না তা দরকার।’ তবে পরে তিনি বলেন, অনেক মানুষ খুন হয়েছে, আহত হয়েছে, জেল বা মানসিক প্রতিষ্ঠানে থাকা অপরাধীরা এসেছে। সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যাক্স সুবিধা বাতিলের হুমকিও দেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি অভিযোগ করেছে, প্রশাসন তাদের ওপর মতাদর্শগত চাপ দিচ্ছে। ফেডারেল আইনে প্রেসিডেন্টের আইআরএসকে ট্যাক্স সুবিধা বাতিলের নির্দেশ দেওয়া নিষিদ্ধ হলেও ট্রাম্প দাবি করেন, আমার আইনজীবীরা বলেছে এটা বৈধ। আমি আইনের মধ্যেই কাজ করছি।

ট্রাম্পের এই মন্তব্য ও অবস্থান তার প্রশাসনের অভিবাসন নীতির নৈতিক ও সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন তুলেছে। সংবিধান, আদালতের সিদ্ধান্ত এবং মৌলিক মানবাধিকার বিষয়ে প্রেসিডেন্টের এমন অনিশ্চিত ও দায় এড়ানো মন্তব্য মার্কিন রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

সাক্ষাৎকারে ক্রিস্টেন ওয়েলকারকে ‘অসৎ’ আখ্যা দিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ‘মিট দ্য প্রেস’-এর সঞ্চালক ক্রিস্টেন ওয়েলকার গত ৪ মে এক বিতর্কিত সাক্ষাৎকারে ট্যারিফ এবং অর্থনীতি নিয়ে তীব্র আলোচনা করেছেন, যেখানে প্রেসিডেন্ট ওয়েলকারকে সরাসরি ‘অসৎ সাক্ষাৎকার’ আখ্যা দেন। ট্যারিফ নীতির বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হলে ট্রাম্প বলেন, এটা এতো অসৎ সাক্ষাৎকার যে, আমি বলবো, মুদি পণ্যের দাম কমেছে, তেলের দাম কমেছে, শক্তির দামও ব্যাপকভাবে কমেছে, গ্যাসোলিনের দামও কমেছে।

ওয়েলকার যখন টায়ার এবং স্ট্রোলারের মতো পণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরেন, তখন ট্রাম্প সেগুলোকে ‘খুব সামান্য’ বলে আখ্যা দেন এবং বলেন, গ্যাসোলিনের দাম কমেছে, যা হাজার হাজার গুণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটি পণ্য, তার চেয়ে এসব কম গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়া তিনি দাবি করেন যে তার ট্যারিফ নীতির ফলে আমেরিকার অর্থনীতি লাভবান হচ্ছে এবং আমেরিকানরা ইতিমধ্যে কমে আসা মর্টগেজ রেট এবং শক্তির দামের কারণে আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন। এদিকে ওয়েলকার যখন বললেন যে, ওয়াল স্ট্রিটের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো ট্যারিফ নীতির কারণে মন্দার আশঙ্কা করছে, তখন ট্রাম্প তা নাকচ করে দিয়ে দাবি করেন যে, তিনি অনেক ওয়াল স্ট্রিট সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছেন, যারা বলছেন তার নীতির ফলে অর্থনীতি আরো শক্তিশালী হবে। ট্রাম্প আরো বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই প্রতিদিন অর্থ উপার্জন করছি, শিগগিরই এমন এক সময়ে পৌঁছাবো, যখন আমরা প্রতিদিন লাভ করতে শুরু করবো।

প্রেসিডেন্ট তার ট্যারিফ নীতি নিয়ে দাবি করেছেন, এর ফলে আমেরিকা ধনী হয়ে উঠবে এবং তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন ৫ বিলিয়ন ডলার হারাচ্ছি, কিন্তু শিগগিরই আমরা এমন একটি পয়েন্টে পৌঁছাবো, যেখানে আমরা প্রতিদিন লাভ করতে থাকবো। এভাবে এই বিতর্কিত সাক্ষাৎকারটি মার্কিন রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে রয়ে গেল, যেখানে প্রেসিডেন্ট তার নীতির পক্ষে সাফাই গাইলেন। প্রবীণ সাংবাদিক ক্রিস্টেন ওয়েলকার।

শেয়ার করুন