০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১০:৫৯:৫৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


আমেরিকা-ভারত
‘টু প্লাস টু’ টক অব দ্য কান্ট্রি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-১১-২০২৩
‘টু প্লাস টু’ টক অব দ্য কান্ট্রি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্যরা


টক অব দ্য কান্ট্রিতে রূপ নিয়েছে দিল্লির ‘টু প্লাস টু’ বৈঠক! সর্বত্র জানার আগ্রহ-‘কী হলো? ভারত যুক্তরাষ্ট্রের বৈঠক, অথচ সেখানে কোনো এক পর্বের প্রসঙ্গে বাংলাদেশ। বৈঠকে কী হলো? আওয়ামী লীগ সরকার কী দিল্লির আশীর্বাদ নিয়ে টিকে যাবে? নাকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা অনুসারে গণতান্ত্রিক পদ্ধতির ভোট হয়ে ক্ষমতায় আসবে যে কেউ বা জনগণ যাকে চায়, তাকে প্রতিনিধি করতে পারবে দেশ পরিচালনায়। নাকি পুরোনো ধারায় তত্ত্বাবধায়ক নাকি অন্য কেউ।’

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা সন্নিকটে। কিন্তু সেটা নিয়েও সন্দেহের দোলাচল। তফসিল না হয় হয়ে যাবে। যথাসময় ভোটটা কি হবে, নাকি সমস্যা তৈরি হবে। বিএনপির অবরোধ কর্মসূচি তো রানিং। হুঁশিয়ারি দিচ্ছে অসহযোগের-এমন হাজারো কথা। আসলে এসব কথার কোনো কূলকিনারা নেই। তবে ‘টু প্লাস টু’ বৈঠক শেষে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করে কিছু না বললেও ভারতের একজন মুখপাত্র যে কথা বলেছেন, তার সারমর্ম হলো, বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভারতের চিন্তাধারা, প্রত্যাশা যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাহলে সে জানিয়ে দেওয়াটা আসলে কী-সেটা কেউই জানান দিচ্ছে না।

সেই অস্পষ্টতায় পুড়ছে সব পক্ষ। পূর্বের মতো গতানুগতিক কিছু কথা বলেছে বৈঠক শেষে ভারতের পক্ষ থেকে। কিন্তু ওসব পুরোনো। তবে ভারতের অবস্থান জানিয়ে দেওয়ার যে কথা বলা হয়েছে, তার বিশদ অর্থ দাঁড়ায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রসঙ্গে যে সিদ্ধান্ত ঠিক করে রেখেছে দীর্ঘদিন আলাপ-আলোচনা করে সে প্রসঙ্গে ভারতের অভিমত। আরো খোলাসা করে বললে বলতে হয়, ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেই দেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে। তবে বাংলাদেশ যেহেতু আমাদের পাশের বন্ধু রাষ্ট্র, সেহেতু সন্ত্রাসের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। এর কোনো মধ্যে কোনো কিছু লুকানো নেই। অথচ আওয়ামী লীগ এর মধ্য থেকেই নানা পথ খোঁজার চেষ্টা করছে। বাস্তবতা হলো, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিনটি বৈঠকের পর তিনটি টুইট করেছেন, সেখানে বাংলাদেশের কথা উল্লেখ নেই। তবে টুইটে লিখেছেন কোয়াডের কথা, ওই অঞ্চলের গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের কথা। তাতেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বিশ্লেষণ হচ্ছে, বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এক। অর্থাৎ তারা বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা আরো পরিষ্কার হলো তিন প্রধান দলকে ডোনাল্ড লুর চিঠির মাধ্যমে। যেহেতু দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার দেখার ইচ্ছা ব্যক্ত করে আসছে এবং সেটা ভারতকে সঙ্গে নিয়েই যতদূর জানা গিয়েছিল অসমর্থিত বিভিন্ন সূত্র থেকে। যে সূত্র ধরে এবং বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহু কর্মকর্তা উড়ে এসেছেন বাংলাদেশে, বৈঠক করে গেছেন মন্ত্রী, সচিব, সুশীলসমাজসহ সমাজের নানা শ্রেণির লোকজনের সঙ্গে। পরিস্থিতির কঠোরতা বোঝাতে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা ও সেটা আবার আরেক ঘোষণায় প্রয়োগেরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য যে ভিসানীতি এবং সেটা ভোটের অনেক আগে এমনটা যুক্তরাষ্ট্র আর কখনো বিশ্বের কোথাও করেনি। শুধু যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তা-ও তো নয়। তাদের সঙ্গে রয়েছে ইইউ ও তাদের মিত্রদেশসমূহ। ফলে মার্কিন ও তাদের মিত্রদের কাছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও আসন্ন নির্বাচনটা যে ভীষণ গুরুতপূর্ণ সেটা আর নতুন করে ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। হয়তো এর মধ্যে মার্কিনিসহ পশ্চিমা জোটের কোনো স্বার্থ লুকিয়ে। কারণ ইন্দো-প্যাসিফিকে চীনের প্রভাব কমাতে যে কোয়াড তার সুফল তো ওইসব দেশও ভোগ করবে। ভারতও সে কোয়াডে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের লাভক্ষতি জড়িয়ে তাদেরও। কারণ যেখানে চীনের সঙ্গে ভারতের সখ্য সুখকর নয়। ভারতের সীমান্তাঞ্চলে নানা জটিলতা তৈরির ফলে চীনের কাছে একরকম কোণঠাসা ভারত। ফলে বাংলাদেশের দেশ পরিচালনায় কোন দল থাকবে সেটার নীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্রের সঙ্গে কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশসমূহের নীতির বাইরে যাবে কি ভারত? গেলই না হয়। কিন্তু সেটা কি ধোপে টিকবে ওই বিশাল পরাশক্তিদের প্রত্যাশার বিপরীতে। টিকলে সেটাও-বা কতক্ষণ-এ প্রশ্নগুলো উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে।

তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের চাওয়া তো অগণান্ত্রিক নয়। একটা স্বাধীন দেশে গণতান্ত্রিক দেশে সঠিক গঠনতন্ত্র-এটাই তো। তাছাড়া ২০১৪ ও ২০১৮ সনের যে নির্বাচন হয়েছে বাংলাদেশে সেটা তো গ্রহণযোগ্য নয়। যদি সেটাকে এসব দেশ সাপোর্টই দিতো, তাহলে তো তাদের নতুন মাত্রায় নতুন আঙ্গিকে কেন দ্বাদশ নির্বাচন অনুষ্ঠান চাইবে। এমন হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে এখন বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট করে একটা কথা বারবার বলে যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র যা চাইছে সেটা বাংলাদেশের জনগণেরও চাওয়া। একথাই যদি সঠিক হয়, তাহলে এ মতের বাইরে যারা যা প্রত্যাশা করবে সেটাকে কি গণতন্ত্র বলা যাবে? হয়তো তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে সেটাই সঠিক।

গত ২৮ অক্টোবরে বিএনপির মহাসমাবেশ প- হওয়ার দিন থেকেই মূলত ঘরছাড়া বেশির ভাগ বিএনপি নেতাকর্মী। ২৯ অক্টোবরে দেশব্যাপী হরতাল এরপর বিএনপির মহাসচিব থেকে শুরু করে শীর্ষনেতা একের পর এক গ্রেফতার হওয়ায় বিএনপি এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। যারা বাইরে রয়েছেন, তারাও আড়ালে আবডালে। অবরোধ সফল হতে এসব নেতাকর্মীকে বিশেষ করে যারা তৃণমূলে এবং বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনের তল্লাশিতে টিকতে পারছেন না, তারাই এখন অবরোধ সফলে মরিয়া হয়ে রাস্তায়। অভিন্ন বক্তব্য তাদের বাড়িতে বসে থাকলেও আটক হতে হয় বিভিন্ন মামলায়, তার চেয়ে রাস্তা থেকে আন্দোলন করা অবস্থায় আটক হওয়া ভালো। বিএনপির নেতাকর্মীদের এমন গণআটক নিয়ে সম্প্রতি দ্য গার্ডিয়ানও রিপোর্ট করেছে। এসব লোকই শুধু নয়, সাধারণ মানুষ এমনকি খোদ আওয়ামী লীগের সমর্থনে থাকা মানুষের জিজ্ঞাসা হচ্ছেটা কী আসলে।

বাংলাদেশের রাজনীতি এখন দেশে সীমাবদ্ধ নেই। অনেকেই বলার চেষ্টা করেন, ‘আমার দেশ, আমার সিদ্ধান্ত। আমার রাজনীতি, আমি বুঝবো।’ এ কথাটা নির্মল সত্য। কিন্তু আমার দেশ আমার সিদ্ধান্ত, আমার রাজনীতি আমি বুঝবোÑএমন কথার অর্থ একটি জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশের একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল এবং যাদের বিশাল সমর্থক রয়েছে বাংলাদেশে সেই দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় দুই সপ্তাহ ধরে তালাবদ্ধ। মহাসচিবসহ শীর্ষনেতারা কারাগারে। চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সবাই দণ্ডিত-এমনটা কী হয়। অপরাধ করতেই পারে দু-চারজন। তাই বলে তার দায়ভার সবার ওপর গণহারে চাপিয়ে যে বার্তা দিতে দেওয়া হচ্ছে, তা সত্যিকার অর্থেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা মানছে না বা তাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সমস্যার মূল এখানেই।

অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ দুর্বল। অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশের অর্থনীতি। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্রদের কাছেই বাংলাদেশের অর্থনীতি নির্ভরশীল। ফলে তারা যদি বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের গণতন্ত্র চায় বা প্রত্যাশা করে সেটা মানতে বাংলাদেশ বাধ্য। তাদের কথা উড়িয়ে ‘আমার দেশ আমার সিদ্ধান্ত, আমার রাজনীতি আমি বুঝবো’-এ জাতীয় কথায় যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা বাংলাদেশ থেকে যদি মুখ ঘুরিয়ে নেয়, তাহলে আমাদের রেমিট্যান্স, গার্মেন্টসসহ বিশাল রফতানি কোথায় হবে? বৈদেশিক মুদ্রা কোথা থেকে আসবে? ওইসব দেশের বাইরে ভারত, চীন, সৌদি আরব, ইরান, তুরস্ক, পাকিস্তান, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপসহ যারা বন্ধুপ্রতিম রয়েছেন, তারা কী বাংলাদেশের পণ্য নিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা দেবে? কোটি টাকার প্রশ্ন।

স্বাধীন সর্বভৌম বাংলাদেশ কারো তাঁবেদারির জন্য লাখ লাখ মানুষ বুকের তরতাজা রক্ত দিয়ে স্বাধীন করেনি। বৈশ্বিক নানা ঘটনায় অর্থনীতিতে উদীয়মান বাংলাদেশ একটু পেছনে পড়েছে আর কি। এখানে রয়েছে কিছুটা দুর্বলতা। বাংলাদেশও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের তোয়াক্কা হয়তো একদিন করবে না। কিন্তু তার আগে নিজেদের অবস্থান, অর্থনীতি সব দিক থেকে পরনির্ভরশীলতা কাটিয়ে শক্তিশালী হতে হবে, সময় লাগবে। স্বাধীনচেতা বাংলাদেশ অচিরেই সেটা করে দেখাবে এ বিশ্বাস ১৭ কোটি মানুষের। তার আগে এসব সরল বক্তব্য দিয়ে চিড়া ভেজানো যায় না এটাই হলো বাস্তবতা। তাছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা তো সবারই মুখের প্রধান ভাষ্য। তো সেটা প্রতিষ্ঠা করতে পশ্চিমাদের তো প্রয়োজন নেই, দেশের সব দল বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করলেই তো সেখানে বিদেশিরা আর নাক গলানোর সুযোগ পায় না। কেন আমরা সেটা করছি না, কেন বিদেশিরা এমন অমতের সুযোগটা নিয়ে ভেতরে আসার সুযোগ পাচ্ছে-এ প্রশ্নের উত্তরটা কে দেবে?

শেয়ার করুন