০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:১০:০৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


জ্বালানি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-১০-২০২৪
জ্বালানি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয় বিদ্যুৎ লাইন


দুই মাস হতে চললো ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হাজার মানুষের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ। আর কিছুদিন পরই তিন মাস বা ৯০ দিন সময় পেরিয়ে যাবে। দেশে সামরিক শাসন বা জরুরি অবস্থা ঘোষিত হয়নি। অবশ্য তেমন কোনো সমস্যাও নেই, যা টুকটাক সেগুলো থেকে উত্তরণ ঘটানো গেছে। 

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের প্রামাণিক দলিল জনসম্মুখে প্রদর্শিত হয়নি বলাবলি চলছে। তবে রাষ্ট্রপতি স্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের বিষয়টি এবং রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদ ভেঙেও দিয়েছেন। সংসদের স্পিকার পদত্যাগ করেছেন। কনস্টিটিউশন বহাল থাকায় শুধু রাষ্ট্রপতি এখন দেশের একমাত্র কনস্টিটিউশনসম্মত ব্যক্তি। এখন রাষ্ট্র সংস্কারের অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর পাশাপাশি প্রয়োজন দেশের সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য যে অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সব কর্মকা-কে বৈধতা প্রদান করবে। এ সরকার কিন্তু সরকারি কাঠামো পরিবর্তন বা কনস্টিটিউশন পরিবর্তন বা সংশোধন করতে পারবে না। তবে সংশোধন বা পরিমার্জন বিষয়ে সুপারিশ রেখে যেতে পারবে, যেটি নির্বাচিত সরকার ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদে অনুমোদন করবে।

৮ আগস্ট ২০২৪ থেকে এযাবৎ ব্যাংকিং এবং আর্থিক খাতে বেশকিছু পরিবর্তন এবং সংস্কার করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর বেশকিছু সংস্কারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে লুট হয়ে যাওয়া ধ্বংসের দারপ্রান্তে উপনীত বেশ কয়েকটি ব্যাংক জাগিয়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। অনাদায়ী বিপুল পরিমাণ ঋত, পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। রেমিট্যান্স প্রভাবে গতি আশায় বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ে শুভ প্রভাব স্থিতি হয়েছে। এ ধারা বজায় থাকলে রুগ্ণ অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে আশা করা যায়। পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান কর কাঠামো পরিবর্তন এবং অভ্যন্তরীণ খাত থেকে কর আহরণের বাস্তবমুখী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।

কিন্তু হতাশার বিষয় হলো পুলিশ এবং সাধারণ প্রশাসন পুরোপুরি কার্যক্ষম না হওয়ায় দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো অনিশ্চিত। শিল্পাঙ্গন অস্থির, দখলের হাতবদল হয়েছে। সড়ক পরিবহন এবং বাজার সিন্ডিকেট পুরোপুরি ভেঙে ফেলা যায়নি। সড়ক-মহাসড়কে যানজট আগের মতোই অস্বস্তি সৃষ্টি করে চলেছে। তবে অফিস-আদালতে ঘুষের সংস্কার স্থগিত হওয়ায় কাজের গতি স্তব্ধ হয়ে আছে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য এখনো সাধারণ জনসাধারণের আওতায় আসেনি। বরং কিছুটা অশান্ত পরিবেশ চলছে। দাম বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বিদ্যমান। মনিটরিং নেই। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও বাণিজ্যে এখনো প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সংস্কার শুরু হয়নি।

দেশে অন্যতম প্রাধিকারপ্রাপ্ত জ্বালানি-বিদ্যুৎ খাতে কিছু অতি জরুরি অনুশাসন আনা এবং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হলেও সংকট অব্যাহত রয়েছে। সবার জানা আছে, প্রাথমিক জ্বালানি সংকটে ভুগছে দেশ। নিজেদের প্রমাণিত গ্যাসসম্পদ দ্রুত নিঃশেষ হয়ে আসছে। নানা প্রক্রিয়াকরণ এবং অনুমোদন প্রক্রিয়ার জটিলতার জন্য বাপেক্স-পেট্রোবাংলার গ্যাস অনুসন্ধান-উন্নয়ন প্রক্রিয়া গতি পাচ্ছে না। দীর্ঘদিন সাগরে ভাসমান সামিটের এলএনজি টার্মিনালটি পুনরায় সক্রিয় হলেও স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রতায় পড়েছে। 

পেট্রোবাংলার আহ্বানে মাত্র দুটি দরপ্রস্তাব জমা পড়ায় প্রচলিত জাতীয় ক্রয়নীতির আলোকে অনুমোদনে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যমান অবস্থায় ১ হাজার ১০০ এমএমসিএফডি এলএনজি আমদানি নিশ্চিত হলে জ্বালানি-বিদ্যুৎ সরবরাহ ক্ষেত্রে স্বস্তি আসতো। বিশেষ বিবেচনায় পেট্রোবাংলাকে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হলে তিনটি বা তার বেশি দরপ্রতাব পাওয়া যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অথচ গ্যাসসংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, সারকারখানাগুলো দীর্ঘদিন বসে আছে, বিদ্যুৎ-গ্যাস সংকটে শিল্পগুলো সংকটে।

এদিকে পেট্রোবাংলার সঙ্গে গ্যাসকোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বার্থ সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে। আন্দোলন চলছে। কোম্পানিগুলো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পেট্রোবাংলার কথিত খবরদারি মানতে চাইছে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট বৈষম্য রয়েছে। যেগুলো সমাধান জরুরি। কিন্তু জনসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিধায় গ্যাসকোম্পানিগুলোতে বিরাজমান অরাজক অবস্থার আশু নিরসন প্রয়োজন। সরকার দ্রুত জ্বালানি-বিদ্যুৎ সরবরাহ বিশেষ আইন, ২০১০ কার্যকারিতা স্থগিত করেছে। এর অধীনে বিবেচনাধীন সব প্রকল্পের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। কিছু প্রকল্প যেমন সামিট এনার্জি কর্তৃক বাস্তবায়নতব্য তৃতীয় ভাসমান টার্মিনাল অগ্রবর্তী অবস্থানে থাকায় বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি মাতারবাড়ী-মহেশখালী থেকে জাতীয় গ্রিডে তৃতীয় সমান্তরাল গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। অতি জরুরি হয়ে পড়েছে মাতারবাড়ীতে স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ বিষয়ে সৃষ্ট জটিলতা দূর করা।

গ্যাস সরবরাহ চেইন ব্যবস্থাপনায় প্রচলিত আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি অনুসরণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ আছে। ভার্টিক্যালি ইন্টিগ্রেটেড গ্যাস সরবরাহ চেইন উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরণ বিষয়ে বিভক্ত করে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা সৃষ্টির জন্য আপস্ট্রিম, মিডস্ট্রিম এবং ডাউনস্ট্রিম সেগমেন্ট বিভক্ত করা হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যত্যয় থাকায় জটিলতা রয়ে গাছে। এক কোম্পানির মালিকানা থেকে গ্যাস অন্য কোম্পানির কাছে হস্তান্তর অনেক ক্ষেত্রেই আধুনিক মিটারিং ব্যবস্থার মাধ্যমে হচ্ছে। আধুনিক মিটারিং ব্যবস্থা সবক্ষেত্রে না থাকায় গ্যাস সিস্টেম লস নিয়ে উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে পড়ছে। গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ ব্যবহার সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। গ্যাসকোম্পানিগুলোতে দুর্বৃত্তায়ন চলছে। ইদানীং আবার পদায়ন, পদোন্নতি নিয়েও জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। 

পেট্রোবাংলার কোম্পানিগুলোকে আমলা নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করে সঠিক পেশাদারদের মাধ্যমে পুনরায় গঠন গড়ে গতিশীল করা এখন সময়ের দাবি। জ্বালানি মন্ত্রণালয়, পেট্রোবাংলায় কাছে অতীতে অনেক দুর্নীতি হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট প্রমাণ আছে, তাদের অবিলম্বে অপসারণ করে যোগ্য, দক্ষ কর্মকর্তাদের পদায়ন করে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া জরুরি। একই সঙ্গে বেতন বৈষম্য দূর করতে হবে।

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে হলে দীর্ঘস্থায়ী জ্বালানিনিরাপত্তা একান্তই অপরিহার্য। জ্বালানিনিরাপত্তা কিন্তু এখন নাজুক। শুধু কথায় খই ভিজবে না। প্রয়োজন প্রমাণিত অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে জ্বালানি ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার। সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। জ্বালানি খাতে কিছু অপরিহার্য সংস্কার দ্রুত না করলে সমস্যা তৈরি হওয়া অসম্ভব কিছু না।

শেয়ার করুন