ইসরায়েলকে বয়কট করার আহ্বানে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি আরোপের উদ্দেশ্যে প্রস্তাবিত একটি বিতর্কিত বিল যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস থেকে প্রবল প্রতিবাদের মুখে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল গভর্নমেন্টাল অর্গানিজশন (ইগো) আন্টি-বয়কট এক্ট নামে পরিচিত এই বিলটি ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান মাইক ললার এবং ডেমোক্র্যাট জশ গটহেইমার উপস্থাপন করেন। বিলটিতে ২২ জন কংগ্রেস সদস্য সহ-উপস্থাপক হিসেবে যুক্ত ছিলেন। বিলটির আওতায়, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি আন্তর্জাতিকভাবে আহূত ইসরায়েল বিরোধী বয়কটের সাথে যুক্ত হয়, তাদেরকে এক মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত জরিমানা এবং সর্বোচ্চ ২০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ২ মিলিয়ন ডলারের জরিমানা দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছিল। এই শাস্তির বিধানগুলো আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইনের অধীনে নির্ধারিত ছিল।
কিন্তু এই বিলটি কংগ্রেসে ভোটের জন্য তোলার আগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। রিপাবলিকান দলের মধ্য থেকেই বিলটির বিরোধিতা আসে। বিলটির বিরোধিতায় মুখর হন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষাকারী সংগঠন ও প্রো-প্যালেস্টিনিয়ান অ্যাকটিভিস্টরা। আমেরিকান-ইসলামিক সম্পর্ক বিষয়ক কাউন্সিল এই বিলকে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী লঙ্ঘন এবং নাগরিক অধিকার হরণ হিসেবে আখ্যা দেয়। কেবল প্রগ্রেসিভ ডেমোক্র্যাট নয়, এই বিরোধিতায় অংশ নেন ট্রাম্পপন্থী রিপাবলিকানরাও। প্রভাবশালী মিডিয়া ব্যক্তিত্ব চার্লি কার্ক এবং সাবেক ট্রাম্প উপদেষ্টা স্টিভ ব্যানন এই বিলের বিরোধিতা করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বাকস্বাধীনতা আমাদের জন্মগত অধিকার।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলের প্রতি রিপাবলিকানদের দীর্ঘস্থায়ী সমর্থন থেকে সরে আসার এই ধারা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ নতুন দিকের সূচনা করছে। ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালের হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপ অনুযায়ী, এপ্রিল ২০২৪ পর্যন্ত ৫৩ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করছেন, যা ২০২২ সালের মার্চে ছিল ৪২ শতাংশ। এই প্রেক্ষাপটে বিলটি প্রত্যাহার যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে ইসরায়েল বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিলটি মার্জোরি টেলর গ্রিন, থমাস ম্যাসি, আনা পলিনা লুনা এবং ম্যাট গেটজসহ রিপাবলিকান নেতাদের সমালোচনার মুখে পড়ে। তারা বিলটিকে প্রথম সংশোধনী লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যা দেন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি হুমকি হিসেবে দেখেন।কংগ্রেসওম্যান মার্জোরি টেলর গ্রিন এক্স -এ পোস্ট দিয়ে জানান, “আমি জানতে পেরেছি, এই বিলের উপর আর ভোট হচ্ছে না। এটি প্রত্যাহার করা হয়েছে।” একইভাবে, রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান থমাস ম্যাসিও নিশ্চিত করেন যে, বিলটি এই সপ্তাহের কংগ্রেসীয় এজেন্ডা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।