২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০২:৪৫:৩৪ অপরাহ্ন


বিসিবির ক্রিকেট পরিকল্পনা এখনো স্পষ্ট না
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৭-২০২২
বিসিবির ক্রিকেট পরিকল্পনা এখনো স্পষ্ট না


ওয়েস্টইন্ডিজ সফরে ওডিআই সিরিজ জয়ের পাশাপাশি টেস্ট সিরিজ এবং টি২০ সিরিজ বিপর্যয় দুটোই কিন্তু বাস্তবতা অনুযায়ী যথার্থ হয়েছেই বলবো। ওডিআই সিরিজের ধবল ধোলাই অর্জনকে বিন্দুমাত্র খাটো করবো না। কিন্তু এই জয় ওপর দুটি ফরম্যাটে বাংলাদেশের দৈন্যতাকে আড়াল করেছে বলা যাবেনা। এখন আলোচনার বিষয় হলো ওডিআইতে পারলে টেস্ট এবং টি২০ ফরম্যাটে কেন এতো ব্যর্থতা, দৈন্যতা। এখনো কেন এ ফরম্যাটে বাংলাদেশ এখন তলানিতে? 

যদি এই প্রশ্ন বাংলাদেশ ক্রিকেটের বোদ্ধাসমাজকে করলে নানা মত প্রদান করবেন। কেউ বলবেন টেস্ট ক্রিকেটে টেকসই সাফল্য অর্জনের জন্য স্বল্প,মধ্য বা দীর্ঘস্থায়ী যথাযথ পরিকল্পনা নেই বিসিবির। যারা পরিকপল্পনা করবেন তাদের এটি করার যোগ্যতা, দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা আছে কিনা সেটিই প্রশ্নের? 

অন্যদের কথা নাইবা বলি। নাজমুল হাসান পাপনের নেতৃত্বাধীন বিসিবির কার্যকাল ১০ বছর পেরিয়েছে। এ সময়ে কতটুকু অর্জিত হয়েছে? কয়জন নতুন খেলোয়াড় সৃষ্টি হয়েছে টেস্ট খেলার জন্য? মাশরাফি ছেড়ে দিয়েছে, টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছে মাহমুদুল্লাহ। সাকিব, তামিম, মুশফিক খেলবে হয়তো আরো কিছু দিন। এরপর লিটন, মেহেদী মিরাজ ছাড়া কাউকে দেখছি না। কীভাবে থাকবে বাংলাদেশের লংগার ভার্সন ক্রিকেট খেলা থেকে প্রতিভাবান নবীন খেলোয়াড়দের বিকশিত হবার কি পরিবেশ আছে? 

রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, যশোর, ফরিদপুরে ক্রিকেট মৃতপ্রায়। দায় ছাড়া হয় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট। সেখানে খেলার সুযোগ হয় না জাতীয় ক্রিকেটারদের। যারা ভালো খেলেন, তাদের সুযোগ হয় না জাতীয় দলে খেলার। এতোদিন হয়ে গেলো পাণ্ডবদের ওপর চাপ সৃষ্টি করার মতো খেলোয়াড় আসলো না। 

ভারতের দিকে তাকালে দেখা যাবে টেন্ডুলকার, গাঙ্গুলি, দ্রাবিড়, শেবাগ, লাক্সামান চলে যাবার পর দ্রুত উঠে এসেছে পরবর্তী প্রজন্ম। তেমনি জয়াবর্ধনে, সাঙ্গাকারা, দিলশান, চলে যাবার পর আবারো উদয়ের পথে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট। অনেক কথা বলা বিসিবি কি বলতে পারবে কোটি টাকা খরচ করেও আজ পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে একটি টেকসই অবস্থান সৃষ্টি করতে পারছে না? 

অনেকেই বলেন, অবকাঠামোর কথা। অবকাঠামো বলতে খেলার মাঠ, স্পোর্টিং উইকেট, পর্যাপ্ত টুর্নামেন্ট, আধুনিক অনুশীলন, প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা। অভিজ্ঞতার আলোকেই বলতে পারি আইসিসি কুলিন দেশের মতো বাংলাদেশের অবকাঠামো গড়ে ওঠেইনি। কারণ যাদের এই দায়িত্ব তাদের কোনো যোগ্যতা নেই বা জবাবদিহিতা নেই। ৭টি বিভাগভিত্তিক আঞ্চলিক ক্রিকেট সংগঠনগুলো ক্রিয়াশীল নয় কেন? নির্মাণ স্কুল ক্রিকেট আদলে ক্রিকেট হচ্ছে না। এখন পেশাদারিত্বের সময়। দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার মাপকাঠি পারফরমেন্স। 

মাঠে ব্যর্থতার পরও কিছু খেলোয়াড় পরিবর্তন হচ্ছে না। কিছু প্রান্তিক খেলোয়াড়দের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না।  কিছু সিনিয়র খেলোয়াড়দের সঙ্গে বিসিবির টানাপড়েন এখন প্রকাশিত। একযুগ হয়ে গেলো একজন উন্নত মানের লেগ স্পিনার পাওয়া গেলো না। যারা ছিল,তাদের উপেক্ষা করে ক্যারিয়ার শেষ করে দেয়ার মতো কাজ হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়া সবার আছে দুই বা ততোধিক রিস্ট স্পিনার। 

বিপিএল আয়োজনে স্বচ্ছতার অভাব। আইপিএল, পিএসএল, সিপিএল, বিগব্যাশ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ক্রিকেট উন্নয়নে ভূমিকা রাখলেও বাংলাদেশ কিছুই অর্জন করছে না। টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখন তলানিতে।  

কক্সবাজার বাজার শেখ কামাল স্টেডিয়ামকে ঘিরে আধুনিক ক্রিকেট কেন্দ্র গড়ে তোলার সুযোগ থাকলেও কিছুই করেনি বিসিবি। যেপথে চলছে ক্রিকেট এখন প্রশ্ন জাগে এই বিসিবি পরিষদ দিয়ে আদৌ টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে কিনা। ক্রিকেট এখন জাতির আবেগ, ভালোবাসা।কিন্তু সোনালি প্রজন্মের সবাই চলে গেলে কি হবে এখনো নিশ্চিত নয়। দায় কিন্তু শুধু বিসিবির নয়। রকিবুল, হীরা, আশরাফুল হক, তানভীর মাজহার, ওমর  খালেদ, জাহাঙ্গীর শাহ বাদশা, আমিনুল হক, গাজী আশরাফ লিপু- ওনাদের দায়-দায়িত্ব আছে। 

 

শেয়ার করুন