০১ মে ২০১২, বুধবার, ০৮:০৬:৫৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে এবার বন্দুকধারীর গুলিতে তিন আইনশৃংলাবাহিনীর সদস্য নিহত ‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ


ভুক্তভোগী প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোগান্তি
অনলাইনে প্রতারিত ব্যাংকের অর্থ ফেরত পেতে মামলা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০২-২০২৪
অনলাইনে প্রতারিত ব্যাংকের অর্থ ফেরত পেতে মামলা


মহামারি করোনার পর থেকেই ব্যাংকিং খাতে প্রতারণা এবং জালিয়াতি বেড়েই চলছে। এখনো সেই প্রতারণা চলছে। প্রতারকরা মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাক করে এসব প্রতারণা বা জালিয়াতি করছে। এসব প্রতারকদের খপ্পড়ে পড়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা নানারকম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে। ব্যাংকে নিজের গচ্ছিত অর্থ ফেরত পেতে, তাদের এখন মামলা-মোকদ্দমা পর্যন্ত করতে হচ্ছে। তারপরও স্বস্তি মিলছে না। প্রতারণা বা জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ার পর প্রথমেই ঘটনাটি ব্যাংককে জানানো হয়। ব্যাংককে ঘটনাটি জানানোর পর সঙ্গে সঙ্গেই অ্যাকাউন্ট হোল্ড করা হয় এবং জানানো হয়, পুলিশ রিপোর্ট করার জন্য। পুলিশ রিপোর্ট দেওয়ার মাসের পর মাস তদন্ত চলে। অনেক সময় বছরও পার হয়ে যায় কিন্তু সমস্যার কোনো সমাধান মেলে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে হয়তো অল্পদিনের মধ্যে সমাধান পাওয়া যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সমাধান মিলে না। বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী বাংলাদেশি জানিয়েছেন তারা মাসের পর মাস ব্যাংকে গিয়েছেন, কিন্তু কোনো সমাধান পাননি। উল্টো শেষ পর্যন্ত তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়, তদন্ত শেষ হয়েছে কিন্তু তারা অর্থের কোনো হদিস দিতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে নিজের অর্থ ফেরত পেতে অনেককেই অর্থ খরচ করে মামলা করতে হচ্ছে। মূলধারার রাজনীতিবিদদের কাছে ছুটতে হচ্ছে। মামলা করে কেউ কেউ অর্থ ফেরত পেয়েছে। কোনো ক্ষেত্রে পুরো অর্থ আবার কোনো ক্ষেত্রে অল্প। ভুক্তভোগীরা জানান, যে ব্যাংককে আমরা নিরাপদ মনে করি সেই ব্যাংক থেকে যদি অর্থ চলে যায়, তাহলে আমরা যাবো কোথায়? নিজের অর্থ ফেরত পেতে এতো ভোগান্তি পোহাতে হবে কেন? অনেকেই অর্থ হারিয়ে নিস্ব হয়েছেন এমন ঘটনাও আছে কমিউনিটিতে।

বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রব মিয়ার তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে গত বছর প্রায় ৮৬ হাজার ডলার হাতিয়ে নিয়ে যায় প্রতারক। আব্দুর রব মিয়া জানান, আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিলো চেজ ব্যাংক, টিডি ব্যাংক এবং ক্যাপিটাল ওয়ান ব্যাংকে। প্রতারক এই তিনটি ব্যাংকের আমার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ৮৬ হাজার ডলার নিয়ে যায়। চেজ ব্যাংক থেকেই নিয়ে যায় ৫৪ হাজার ডলার। বিষয়টি আমি তিনটি ব্যাংককেই জানিয়েছি। তারা তদন্ত করেছে। তারা জানায় আমি নাকি নিজে অর্থ দিতে ফোনে সম্মতি জানিয়েছি। তিনি বলেন, প্রতারক যে আমার ফোন নম্বর হ্যাক করেছে সেটাও আমি ব্যাংককে জানিয়েছি। কিন্তু কোনো সদুত্তর পাইনি। তদন্ত শেষে তারা জানিয়েছে, তাদের কিছু করার নেই। আব্দুর রব মিয়া বলেন, এই কথা শোনার পর আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। পরে অনেকের পরামর্শে চেব ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং গত সপ্তাহে মামলা করেছি। এখন অপেক্ষা করতে হবে মামলার নিষ্পত্তির জন্য।

বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান এবং সাবেক ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য অ্যাডভোকেট জামাল আহমেদ জনিও প্রতারণার শিকার হয়েছে। গত নভেম্বর মাসে তার চেজ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ৪৩ হাজার ডলার প্রতারক নিয়ে যায়। তার অর্থগুলো রুবিনহুড শেয়ার বাজারে ট্রান্সফার করা হয়েছে। তিনি বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে জানিয়েছেন। ব্যাংককে জানানোর সঙ্গে সঙ্গে তারা তদন্ত করে। কয়েক মাস তদন্ত শেষে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তাকে জানানো হয় তাদের কিছু করার নেই। এখন তিনি ব্যাংকের তদন্ত রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন। তিনি জানান, তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর আমি মামলা করবো। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ব্যাংকে টাকা গচ্ছিত রেখে যদি নিরাপদবোধ না করি, প্রতারকরা অর্থ নিয়ে যায় তাহলে আমাদের সিকিউরিটি কোথায়? তিনি আরো বলেন, যারা অর্থ প্রতারণা করছে বা জালিয়াতি করতে তাদের ধরা হচ্ছে না, উল্টো আমাদের নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

তিনি কথা প্রসঙ্গে বলেন, জ্যামাইকায় বসবাসকারি আমার এক আত্মীয় এভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন, অনেক দিন ব্যাংকে গিয়েছেন কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। অবশেষে তিনি ৬ হাজার ডলার খরচ করে ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। সিটি ব্যাংক থেকে প্রায় ৪০ হাজার ডলার প্রতারণা করা হয়েছিল। মামলার পাশাপাশি আমার আত্মীয় সিনেটর চাক শুমারের অফিসে গিয়েছিল। মামলা করার ৯ মাস পর আইনজীবী ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা করে ১২ হাজার ডলার আদায় করেছিলেন। অন্যদিকে মামলা চলাকালেই তার অ্যাকাউন্টে আরো প্রায় ৩০ হাজার ফেরত আসে। মামলা করে কিছু গচ্চা দিলেও অর্থ ফেরত পেয়ে তিনি বেশ খুশি।

এই ধরনের প্রতারণা কমিউনিটিতে এখনো চলছে। সুতরাং সবার সমাধান হওয়া উচিত। অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, নিজের ব্যক্তিগত তথ্য কোনোভাবেই ফোনের মধ্যে রাখা উচিত নয় এবং কাউকে দেওয়া উচিত নয়। আবার যেখানে সেখানে ফোনের বিল দেওয়া উচিত নয়। কারণ বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতারকরা মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য ক্রয় করে নেন। অন্যদিকে ব্যাংকে কোনোভাবেই অলনাইনে লেনদেন করা উচিত নয়। অনলাইনে ব্যাংকে লেদদেন করলে সঙ্গে সঙ্গে নোটিফিকেশনের ব্যবস্থা রাখা এবং ভয়েস রেকর্ড রাখা।

শেয়ার করুন