১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৫:৫১:৬ পূর্বাহ্ন


জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ
এজেডএম সাজ্জাদ হোসেন
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৭-২০২২
জ্বালানি সংকট মোকাবিলায়  সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ


বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ এর ধাক্কা যখন বাংলাদেশসহ প্রায় প্রতিটি দেশ কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছিলো তখনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি সারা বিশ্বকেই গভীর এক সংকটে ফেলেছে। এই সংকট শুধু উন্নয়নশীল দেশেই না অনেক উন্নত দেশেও এর আঁচ লেগেছে। যুদ্ধের প্রভাব জ্বালানি মার্কেট চরম অস্থিতিশীল করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক খাদ্যপণ্যের বাজারও বেসামাল। বৈশ্বিক এই সংকট বাংলাদেশকেও বিপদে ফেলে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বে সম্প্রতি বাংলাদেশ ৫২ বিলিয়ন ডলারের রফতানির অনন্য মাইলফলক অর্জন করেছে। অর্থাৎ গত একযুগে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের কারণে দেশে শিল্পায়ন অতীতের সকল সময়কে ছাড়িয়ে গেছে।

জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ‘দিন বদলের ইশতেহারে’ প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিবেন। সেই রূপকল্প সরকার বাস্তবায়ন করেছে। মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস বিদ্যুতের কোনো বিকল্প নেই। সরকার সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে হঠাৎ করেই কিছুটা ছন্দপতন সব জায়গাতেই। বিশ্বব্যাপী চলমান জ্বালানি সংকটের কারণে অর্থনৈতিভাবে সমৃদ্ধ অনেক উন্নত দেশও তাদের জনগণকে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সুবিধা দিতে পারছে না। অনেক দেশকেই এই সংকটকালীন সময়ে রেশনিং করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন ১৬০০-১৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন। কিন্তু সেখানে প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। কারণ সরকারকে অগ্রাধিকার দিতে হচ্ছে কৃষি ও শিল্পখাতকে। কৃষির জন্য সার অপরিহার্য। সার উৎপাদনেও সরকারকে অনেক পরিমাণ গ্যাস দিতে হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে দৈনিক গ্যাসের উৎপাদন ২৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদার বাকি বৃহৎ অংশ এলএনজি আমদানি করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সময়ও গ্যাসের উৎপাদন ছিল মাত্র দৈনিক ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট। সেখান থেকে সরকার উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়েছিল দৈনিক ২৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত। ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকার এ সক্ষমতায় গ্যাস উৎপাদন করেছে।

কিন্তু খনিগুলোর রির্জাভ কমে যাওয়ার কারণে নিজস্ব গ্যাস উৎপাদন কমতে শুরু করেছে। এলএনজি আমদানির জন্য কাতার ও ওমানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় বর্তমানে বাংলাদেশ এলএনজি পাচ্ছে। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকেও এলএনজি আমদানি করতো সরকার। কোভিড-১৯ এর আগে সরকার এক ইউনিট এলএনজি ৪ ডলারেও আমদানি করেছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটা ৪১ ডলারও ছাড়িয়ে গেছে। এতো উচ্চমূল্যে আমদানি করলে দেশের অর্থনীতির ওপর বিশাল চাপ তৈরি হবে। শুধু গ্যাসের দামই না। বেড়েছে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম।

২০২১ সালের জুলাইয়ে ডিজেল ব্যারেল প্রতি ৭৭ ডলার ছিল, সেটা এ বছরের জুনে ১৭১ ডলারে দাঁড়িয়েছে। সরকার নিজস্ব জ্বালানির অনুসন্ধান, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বিদ্যমান ক‚পগুলোতে আরো গভীরে খনন করে গ্যাসের অনুসন্ধান কাজ চালাচ্ছে। এরই মধ্যে আগামী ৩ বছরের একটা আপগ্রেডেশন, ওয়ার্কওভারের স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে যাতে করে ৪৬টি ক‚প থেকে দৈনিক ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস নতুন করে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হতে পারে।

গত ১৩ বছরে জ্বালানি খাতে সরকারের ব্যাপক বিনিয়োগ ও উন্নয়নের ফলে দেশের জনগণ লোডশেডিং কি তা ভুলতেই বসেছিল। কিন্তু করোনা-পরবর্তী বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং তার ওপর দিয়ে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী তীব্র জ্বালানি সংকট তৈরি হয়েছে এবং জ্বালানির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। যে কারণে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বেশি থাকার পরও জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং জনগণ আবার অনাকাক্সিক্ষত লোডশেডিংয়ের মধ্যে পড়েছে।

সরকার আশা করে এই পরিস্থিতি খুব বেশিদিন থাকবে না। এ বছরের মধ্যেই পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ভারত থেকে ১৬০০ মেগাওয়াট আমদানিকৃত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। দেশবাসীর সবার নিশ্চয়ই মনে আছে বিএনপি ও কেয়ারটেকার সরকারের শাসনামলে (২০০১-২০০৮) দেশের বিদ্যুৎব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল এবং দিনে ১৬-১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকতো না। সেই কঠিন সময়ে জনগণ জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেই স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে বিদ্যুৎখাতের ব্যাপক উন্নয়ন করেছে।

শত প্রতিক‚লতা সত্তে¡ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার একটি কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও জনগণের মঙ্গলের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।  বৈশ্বিক সংকট, মহামারী, মন্দা সত্তে¡ও এই সরকার কখনো তার মূল আদর্শ থেকে এক চুলও বিচ্যুতি হয়নি। জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার আশা করে এই সংকটকালীন সময়েও জনগণ আগের মতোই সরকারের প্রতি বিশ্বাস অব্যাহত রাখবে।

সরকার আশা করে সবাই মিলেই এই সংকটের সমাধান সম্ভব হবে। এই পরিস্থিতিতে সবার কাছে সরকারের একটাই অনুরোধ, ’আসুন আমরা সবাই গ্যাস-বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হই।’

একনজরে ১৩ বছরে জ্বালানি খাতে সরকারের উন্নয়ন

 মোট নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ : ১২৫, বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি (মে.ও.) : ২০ হাজার ৬২৪ (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ), সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন (মে.ও.) ১৪ হাজার ৭৮২ (১৬ এপ্রিল, ২০২২), মোট নতুন সঞ্চালন লাইন (সা.কি.মি.): ৫ হাজার ৫৪৪, গ্রিড সাব-স্টেশন ক্ষমতা বৃদ্ধি (এমভিএ) : ৩৯ হাজার ৯১৭, বিদ্যুৎ আমদানি (মে.ও.): ১ হাজার ১৬০, নতুন বিদ্যুতায়িত বিতরণ লাইন (কি.মি.) : ৩ লাখ ৬৭ হাজার, বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত নতুন জনগোষ্ঠী : ৫৩ শতাংশ (অর্থাৎ ১০০ শতাংশ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত), মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি (কি.ও. ঘণ্টা) : ৩৪০ (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ- ২০২০-২০২১ অর্থবছর), নতুন বিদ্যুৎ গ্রাহক : ৩ কোটি ২১ লাখ, নতুন সেচ সংযোগ : ২ লাখ ১২ হাজার, সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বরাদ্দ (কোটি টাকায়) : ২৫ হাজার ৮৪ (২০২১-২০২২ অর্থবছর), বিতরণ সিস্টেম লস কমেছে :  ৫.৮৫ শতাংশ।

প্রেস মিনিস্টার, ওয়াশিংটন বাংলাদেশ দূতাবাস

শেয়ার করুন