২০ মে ২০১২, সোমবার, ০৫:৩১:০২ পূর্বাহ্ন


এ কী বললেন ড. সিদ্দিকুর রহমান
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে বিএনপি-জামায়াত!
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৫-২০২৪
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে বিএনপি-জামায়াত! যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান


বিভক্তিই যেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নিয়তি। যখনই কমিটি দেওয়া হয় তার কিছুদিন যেতে না যেতেই বিভক্তি দেখা দেয়। এই বিভক্তির আগুন যেন আর নিভানোর মত নয়। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটি দিয়েছিলেন। সেই কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছিল ড. সিদ্দিকুর রহমানকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদকে। তিন অবশ্য পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করে গিয়েছিলেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সবার সঙ্গে সমঝোতা করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার জন্য। কিন্তু সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নিজেদের পছন্দের লোকজন দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করলে দলের ত্যাগী এবং পরীক্ষিত যেসব নেতাকর্মী বাদ পড়েছেন তারা প্রতিবাদ করতে থাকেন। কিন্তু কোনোভাবেই সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক প্রতিবাদকারীদের কথায় কর্ণপাত না করলে নর্থ আমেরিকা আওয়ামী লীগ নামে আরেকটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। এই সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন ড. প্রদীপ রঞ্জন কর, আব্দুর রহিম বাদশা. মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, চন্দন দত্তসহ অন্যান্য নেতারা। তারা আলাদাভাবে অনুষ্ঠান করতে থকেন। ওই অবস্থায় পরবর্তী বছরে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে এলে তার হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তারই আইটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে সমঝোতা হয় এবং ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়। উপযুক্ত পদ-পদবি না পাওয়ায় ত্যাগীদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল, কিন্তু নেতৃত্বে প্রতি অবিচল থেকে তারা সব কিছু মেনে নেন। এভাবেই চলছিল যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। এর সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে বহিষ্কার করা হয়। ওই অবস্থায় সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটির মেয়াদ ২ বছর হলেও দীর্ঘদিন থেকে কমিটি হচ্ছে না। নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় আবারও বিভক্তি দেখা দেয়। প্রতি বছর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে আসেন, কিন্তু কমিটি না দিয়েই তিনি চলে যান, হতাশায় নিমজ্জিত হয় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। বিভক্তি সবচেয়ে প্রকট আকার ধারণ করলে ২০১৮ সালে। নেতাকর্মীদের বিভক্তির কারণে ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর নাগরিক সংবর্ধনা সভায় সভাপতিত্ব করতে পারেননি সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং পরিচালনা করতে পারেননি ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। ওই অবস্থায় সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান অসহায়ের মতো দর্শকসারিতে বসেছিলেন। সভা শুরু হওয়ার আগ থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এমনকি নেতাকর্মীরা ‘নো মোর সিদ্দিক, নো মোর সিদ্দিক’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেও এই স্লোগান দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী স্লোগান থামানোর চেষ্টা করলেও তা থামছিল না। এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে ধমক দিলে সবাই শান্ত হয়। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিলেন তৎকালীন জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন। সভাপতিত্ব প্রধানমন্ত্রী নিজেই করেছিলেন। ওই নাগরিক সংবর্ধনা শেষে দলীয় গঠনতন্ত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে অনেকেই বলেছিলেন, দলীয় সভাপতি যখন নিজে সভাপতিত্ব করেন তখন জেলা পর্যায়ের কমিটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু কে শোনে কার কথা। যার যার মতো দল চালাতে থাকেন। কয়েক বছর ধরে এভাবেই চলছিল। কমপক্ষে পাঁচটি মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করতে পারেননি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং পরিচালনা করতে পারেননি সাধারণ সম্পাদক। সর্বশেষে ২০২৩ সালের গণসংবর্ধনায়ও সভাপতিত্ব করতে পারেননি ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং পরিচালনা করতে পারেননি সাধারণ সম্পাদক। সংবর্ধনা সভায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফজলুর রহমান এবং পরিচালনা করেন নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ চৌধুরী। অনেকটা ঝি দিয়ে বউ পেটানোর মতো। পুতুলের মতো মঞ্চে বলেছিলেন সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক। চেয়ে চেয়ে দেখলেন তার দায়িত্ব অন্যজন পালন করছেন। তারপরও পদ ছাড়তে কেউ রাজি নয়। অতি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অশান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। আর এই অশান্তির জন্ম দিয়েছেন খোদ সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক। শূন্যপদে অনেক বিতর্কিত নেতাকর্মীকে পদ-পদবি দিয়েছেন। তা করে আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছিলেন সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক।

গত ২ মে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে এক সভার আয়োজন করা হয় জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি হলে। সেখানে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া। এই অনুষ্ঠানে অন্য কারো চেয়ারে বসার এবং বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ ছিল না। অবশ্য এজন্য দায়ী ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নিজেই। তারা ঘোষণা করেছিলেন এই অনুষ্ঠানে যাদের বিতর্কিতভাবে কমিটিতে কোঅপট করা হয়েছে, তাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে। যে কারণে আওয়ামী লীগের আরেকটি অংশের নেতৃবৃন্দও অংশগ্রহণ করেন। উত্তপ্ত পরিস্থিতির তৈরি হয়। পরিস্থিতির কথা আগেই জানানো হয়েছিল বিপ্লব বড়ুয়াকে। তিনি সবার সঙ্গে বৈঠক করেন। কোঅপট কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা দেওয়া হবে এই মর্মে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলে এবং মঞ্চে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ছাড়া কেউ থাকবে না প্রতিশ্রুতি দিলে সবাই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। যে কারণে কাউকে স্টেজে নেওয়া হয়নি, এমনকি বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। তারপরেও পরিস্থিতি ছিল উত্তপ্ত। এই অবস্থায় বক্তব্য দিতে ওঠেন ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। উঠেই তিনি বলেন, আপনাদের কাছে করজোর ক্ষমা চাই, আপনারা একটু শান্ত হোন। তিনি বলেন, আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা সবাই ভালোবাসি। সেই ভালোবাসার কারণেই আমরা একত্রিত হয়েছি। তিনি বলেন, আমাদের ভালোবাসার নাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকে আপনাদের সবাইকে একত্রে দেখে আমার কাছে খুবই ভালো লাগছে।

সভায় হলভর্তি নেতাকর্মীরা। তখনো প্রধান অতিথি এবং বিশেষ অতিথি অনুষ্ঠানে আসেননি। পরিস্থিতি ঘমোট। ওই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান হঠাৎ করেই ঘোষণা দেন। আমি দেখতে পাচ্ছি এই অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াতের অনেক নেতাকর্মী উপস্থিত রয়েছেন। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগেই আপনারা হল ত্যাগ করেন। কিন্তু তিনি কাদের উদ্দেশ্য করে এসব কথা বলেন। এই নিয়ে অনুষ্ঠানে কানাঘুষা শুরু হয়। যারা তার বিরোধিতা করছেন তাদের কী তিনি বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে তুলনা করলেন? এ নিয়ে দলের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে। তাদের প্রত্যাশা এ বছরই প্রধানমন্ত্রী নতুন কমিটি দেবেন।

শেয়ার করুন