করোনা মহামারীর পর ২০২০ সালে আমেরিকার রিয়াল এ্যাস্টেট মার্কেটে বেচাকেনায় তেজীভাব শুরু হয়। কারণ একদিকে ৩০ বছরের মধ্যে ফিস্কড মর্টগেজ নেমে আসে ২.৬৮%, অপর দিকে করনাকালীন সময়ে বৈধ বা অবৈধভাবে বেকার গ্রহণ এসবিএ লোনের অপব্যবহার এবং অবৈধভাবে পিপিপি লোন হাতিয়ে নিয়ে ক্রয় সক্ষমতা বৃদ্ধি অন্যতম বলে অনেকে মনে করেন। ফলে পরবর্তীতে ২০২১ সাল বাজার অস্থির হতে থাকে। বিশেষ করে নিউইয়র্কে বাড়ির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে এবং চরম অস্থিরতা দেখা দেয়। বাড়ি বেচা কেনা এমন এক পর্যায়ে যায় যে বিক্রেতা যে দামে বাড়ি বিক্রি করতে চায় ক্রেতা তার চেয়ে বেশি দামে বাড়ি কেনার অফার দেয়। এর আরেকটি কারণ হচ্ছে অসুস্থ্য প্রতিযোগিতা। আর এ অসুস্থ প্রতিযোগিতায় একটা শ্রেণী অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেয়। ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে হঠাৎ করেই মর্টগেজ ইন্টারেস্ট রেট ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। সেই সাথে মে মাসে ২৮ বছরের মধ্যে ফেডারেল রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৭৫% বৃদ্ধি পাওয়ায় মর্টগেজ রেটসহ বিভিন্ন ইন্টারেস্ট রেটের উপর প্রভাব পড়তে থাকে এবং মর্টগেজ রেট লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। বছরের প্রথম দিকে ইন্টারেস্ট রেট ছিল ৩০ বছরের জন্য ফিক্সড ৩.১১% কিন্তু ৬ মাসের ব্যবধানে তা বেড়ে দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ৬.২৬% ।গত ৪ দশকে সর্বোচ্চ মুদ্রাস্ফীতি দফায় দফায় বেড়ে বর্তমানে ৯.১% এবং আশংকা করা হচ্ছে। এ বছরের শেষের দিকে তা ১০% ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন। ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতির ফলে আর্থিক মন্দাভাব কাটাতে এবং ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ মুদ্রাস্ফীতি ঠেকাতে আরেক দফা বড় ধরনের ইন্টরেস্ট রেট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। এর পরিমাণ .৫০% থেকে ১% পর্যন্ত হতে পারে ধারণা করা হচ্ছে। একদিকে মর্টগেজ ইন্টারেস্ট রেট বৃদ্ধি অপরদিকে আর্থিক মন্দাভাব ক্রেতারা ক্রয় ক্ষমতা হারাতে থাকেন এবং ক্রেতাদের বাড়ি ক্রয়ে শঙ্কিত করে তোলে।
সারা আমেরিকায় গড়ে ১৭.৮% বাড়ি বেচা বেনা কমে যায়। বাড়ির দাম কমে যায় গড়ে ৪.৩%। রিয়েলএ্যােেস্টর ক্ষেত্রে একটি কথার প্রচলন রয়েছে। আর সেটি হলো যখন ইন্টারেস্ট রেট বাড়ে তখন বাড়ির দাম কমে আর যখন মর্টগেজ ইন্টারেস্ট রেট কমে তখন বাড়ির দাম বাড়ে। ফলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন নিয়মানুযায়ী বাড়ির দাম কমতে বাধ্য। এদিকে মুদ্রাস্ফীতির কারণে দৈনন্দিন জীবনে ব্যয় বৃদ্ধির ফলে কেউ কেউ মর্টগেজের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছেন, আর বাড়ি যাচ্ছে ফরক্লোজারে। বাড়ি ক্রেতাদের পিছু হটার কারণে বা স্থবিরতায় রিয়েল এ্যাস্টেট মার্কেটে একটা ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বাড়ির দাম কমানো এবং নতুন গৃহনির্মাণে ধীর গতি অবলম্বন করছে বলে এক সমীক্ষায় প্রকাশ পেয়েছে। গৃহ নির্মাতারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে আছেন। এক তথ্যে জানা যায় নতুন বাড়ি বিক্রি কমেছে প্রায় ৩২%। আগের বছরের তুলনায় জুন মাসে ক্রয় চুক্তি বাতিল বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪.৫%। যা গত এক বছর আগে ছিল ৬.৫%। সর্বোচ্চ বাড়ি বেচাকেনা কমেছে টেক্সাসে ২৭%। আর সর্বোনিম্ন কমেছে সাউথ ইস্টে ৮%। অতিরিক্ত মর্টগেজ ইন্টরেস্ট রেট বেড়ে ভয়াবহ আর্থিক মন্দার কারণে একটা বড় অংশ বাড়ি কেনা থেকে সরে যাওয়ায় বিভিন্ন স্টেটে গত ২/৩ মাস লিস্টিংয়ের বাড়ি বিক্রি হচ্ছে না। রিয়েলএ্যাস্টেট কোম্পানী রেডফিনের সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে দেখা যায়, আমেরিকার দুই-তৃতীয়াংশ মহানগরের ২৫% এর উপরে বাড়ি বিক্রেতারা বাড়ির বিক্রির আস্কিং প্রাইজ কমিয়েছে। বাড়ি বেচাকেনা কমার কারণে কম্পাস ও রেডফিন ব্রোকারেজ যথাক্রমে ১০% ও ৮% কর্মচারিকে লে অফ ঘোষণা করেছে। অপর দিকে শেয়ার বাজারে বিশাল ধ্বস নেমেছে। শেয়ারের মূল্য পতনে অনেকের পথে বসার অবস্থা তৈরি হয়েছে। রেডফিনের বিক্রি কমার পাশাপাশি ৯৭ ডলারের শেয়ার ৮ডলারে নেমেছে। জুন মাসে ৩০ বছরের জন্য মর্টগেজ ইন্টারেস্ট রেট হয়েছিল ৬.২৮% যা জানুয়ারিতে ছিল ৩.১১% অর্থাৎ মাত্র ৬ মাসে রেট বৃদ্ধি পেয়েছে ৩%। সে হিসাবে ৩০০,০০০ হাজারের বাড়ি ৩০ বছরের ফিক্সড রেট ৩.১১% হারে মাসিক পেমেন্ট হতো ১২৮৩ ডলার কিন্তু রেট বৃদ্ধি হয়ে ৬.২৮% হওয়ায় মাসিক কিস্তি ৫৭০ ডলার বেড়ে হবে ১৮৫৩ ডলার। লাইফ টাইম পেমেন্ট বাড়বে ২,০৫,৩০৮ ডলার যা কিনা গোদের উপর বিষ ফোঁড়া। কেননা মূল্যস্ফীতির কারণে পার হাউজ হোল্ডের খরচ ৭০০ থেকে ১০০০ ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক সপ্তাহে মর্টগেজ লোনের জন্য আবেদন কমেছে ৬.৫% আর গত ২২ বছরের মধ্যে ১ বছরের ব্যবধানে রিফাইনান্সের জন্য আবেদন কমেছে ৭৫%। সামনে ভয়াবহ আর্থিক মন্দার আশংকা রয়েছে। ফলে সব দিক বিবেচনা করে অনেকেই বলেছেন এখন বাড়ি কেনায় উপযুক্ত সময় নয়।
উল্লেখ্য, গত ১৮ জুলাই ২০২২ সালের তথ্য মোতাবেক বর্তমান গড় মর্টগেজ ও রিফাইন্যান্স রেট ৩০ বছর ফিক্সড ইন্টারেস্ট রেট ৫.৫৭৮% এবং বার্ষিক পার্সেন্টিজ রেট (এপিআর) ৫.৬৬২%। ২০ বছর ফিক্সড ইন্টারেস্ট রেট ৫.২০৮% এবং বার্ষিক পার্সেন্টিজ রেট (এপিআর) ৫.৩২১%। ১৫বছর ফিক্সড ইন্টারেস্ট রেট ৪.৬২০% এবং বার্ষিক পার্সেন্টিজ রেট (এপিআর) ৪.৭৭১%। ১০ বছর ফিক্সড ইন্টারেস্ট রেট ৪.৯২২% এবং বার্ষিক পার্সেন্টিজ রেট (এপিআর) ৫.১১৮%। ৭ বছরের এডজাস্টেবল রেট মর্টগেজ (এফআরএম) ৫.৫৩৪% এবং বার্ষিক পার্সেন্টিজ রেট (এপিআর) ৪.৭৯৬%। ৫ বছরের এডজাস্টেবল রেট মর্টগেজ (এফআরএম) ৫.২২৩% এবং বার্ষিক পার্সেন্টিজ রেট (এপিআর) ৪.৪৭৪%। ৩ বছরের এডজাস্টেবল রেট মর্টগেজ (এফআরএম) ২.৩৪০% এবং বার্ষিক পার্সেন্টিজ রেট (এপিআর) ৩.৩৭১%, ৩০ বছর ফিক্সড ইন্টারেস্ট রেট এফএইচএ ৪.৬৬৬২% এবং বার্ষিক পার্সেন্টিজ রেট (এপিআর) ৫.৪৭৩%। ৩০ বছর ফিক্সড ইন্টারেস্ট রেট ভিএ ৪.৮২৬% এবং বার্ষিক পার্সেন্টিজ রেট (এপিআর) ৫.২০৮%।
এছাড়া মর্টগেজ বা ব্যাংক লোন নির্ভর করে চাকরির ধরন, আয়ের পরিমাণ, ক্রেডিট স্কোর, ব্যাংক ব্যালেন্স, ক্রেডিট হিস্ট্রি ইত্যাদি উপর লেনের পরিমাণ এ সুদের হার নির্ধারিত হয়।