২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৯:৫০:৪১ অপরাহ্ন


বিএনপিকে নির্বাচনে রাজি করাতে কঠোর চাপ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৯-২০২৩
বিএনপিকে নির্বাচনে রাজি করাতে কঠোর চাপ


কঠোর চাপে রেখে বিএনপি’কে নির্বাচনে রাজি করাতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য ক্ষমতাসীনরা যেমন দেশের ভেতরে বিএনপি’র বিরুদ্ধে চাপ বাড়াচ্ছে, তেমনি প্রয়োজনে প্রতিবেশীসহ শক্তিশালি দেশের সহায়তা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

মুখে এক অন্তরে আরেক

এবছরের শুরুতে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, দেশে সংবিধান অনুযায়ী সময়মতো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। বিএনপি বা কেউ নির্বাচনে না আসলে তাতে কিছু যায়-আসে না। এর পর আরো অনেকেই এমন কথা বলেছেন। তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, নির্বাচনের ট্রেন কারও জন্য অপেক্ষা করবে না, যথাসময়ে নির্বাচন হবে। সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, নির্বাচন নির্দিষ্ট কোনো দলের জন্য অনুষ্ঠিত হয় না বা কোনো দলের জন্য থেমে থাকে না। সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শাসকদলের এমন বক্তব্যে ধরে নেয়াই যায় যে আওয়ামী সরকার আসলে বিএনপিকে নির্বাচনী মাঠে দেখতেই চায় না। কিন্তু খোঁজ খবর নিয়ে দেখা গেছে, সরকারের বিভিন্ন চ্যানেল বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে রাজি করাতে বিভিন্ন ধরনের গোপন কৌশল নিয়েছে।  এসবের মধ্যে রয়েছে যেমন বিভিন্ন ধরনের কঠোর পদক্ষেপ তেমনি কূটকৈৗশলও আছে। 

যে কারণে বিএনপি’কে চায় নির্বাচনে

ক্ষমতাসীনরা বুঝেছে যতোই চেষ্টা করা হোক না কেনো এবারে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিততব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন সত্যিকারের অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। একদিকে আমেরিকা বা ইউরোপিয় ইউনিয়নভুক্ত শক্তিধর দেশগুলি যেমন চায় তেমনি বর্তমানে ভারতের মতও পরিবর্তন হয়ে গেছে। তারা আগের মতো যেনতেনভাবে একটি নির্বাচন এই প্রতিবেশী দেশটির বেলায় অন্ততপক্ষে এবারে মেনে নেবে না-এমনটাই খবর মিলছে। এমন তথ্য মিলেছে ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টেও। প্রত্যেকটি প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভাষা বিশ্লেষণেও দেখা গেছে যে, ভারতও বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।  বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন যেনো সহিংসতামুক্ত হয় এবং যথাযথ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অনুষ্ঠিত হয়- তা নিশ্চিত করতে নিজের আগ্রহও দেখিয়েছে ভারত। গত ৩ আগস্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী এমনটাই জোর দিয়ে বক্তব্য রেখেছেন। 

যদিও কূটনৈতিক সূত্রগুলো থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে  ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে হয়রানি, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং সহিংসতার বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন এবং নির্বাচন-দিনের অনিয়ম নিয়ে অনেক দেশ কথা বলেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগও প্রকাশ করেছিল। কিন্তু ওই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর দৃশ্যপট পাল্টে যায়। সরকারতে দ্রুত অভিনন্দন জানায় ভারত। এতে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের মোড় ঘুরে দাঁড়ায়। এতে আওয়ামী লীগ সরকারকে কোনো গুরুতর আন্তর্জাতিক চাপের সন্মুখীন হতে হয়নি। অন্যদিকে ভারতের এমন ভূমিকায় বলা চলে মাঠের বিএনপিও বেকায়দা পড়ে। কিন্তু ২০২১ সালের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করে। কোনোভাবেই আওয়ামী লীগ সরকার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া এগুতো পারছে না। আর এজন্য তারা এখন মুখে বিএনপি’কে না চাইলেও অন্তরে তাদেরকে চায়। চায় বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিক। 

বিএনপি’কে আনতে কঠোরতার নমুনা

বিভিন্ন গণমাধ্যমেই  প্রকাশিত হচ্ছে যে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে দায়ের করা নতুন এবং পুরানো মামলা সচল হচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে বেশ কয়েকটি স্থানে বিএনপি কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে হামলা মামলার শিকার হচ্ছে দলের নেতা কর্র্মীরা। বিএনপি’র বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা এই প্রতিবেদকে জানান ২০০৯ সাল থেকেই শুরু হওয়া এসব মামলা মাথায় নিয়েই বিএনপি’র নেতাকর্মীরা রাজনীতি করে যাচ্ছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিএনপি তেমন জোরালো কর্মসূচি না নিলেও তাদের বিরুদ্ধে কঠোর দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। সম্প্রতি বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এমন কর্মসূচিতেও ছাড় দেয়নি সরকারি দলটি। কর্মসূচিতে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দল ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন অভিযোগে সম্প্রতি ছয় জেলায় মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপির ৪ হাজার ৪৫৩ জনের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত ৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গায়েবি অভিযোগে হয়রানি করতেই এসব মামলা ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির নেতারা। তবে সূত্র জানায় নির্বাচনী ট্রাকে উঠতেই বিএনপি’র প্রতি এমন আচরণ ক্ষমতাসীদের।

শেষ কথা

প্রায় টানা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ সরকার। আর মাত্র কয়েক মাস পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন দেশবাসী আশা করে। এর পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন বন্ধু রাষ্ট্রও এবারে বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে আছে। সবার লক্ষ্য একটা। তা হলো- বাংলাদেশে এবারে একটি সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় তারা। কিন্তু এবারে বিএনপি’কে কোনোভাবেই নির্বাচনে আনতে পারছে না ক্ষমতাসীনরা। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি’কে বাদ দিয়ে কোনো আয়োজনকেই যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলা যাবে না তা-ও ক্ষমতাসীনরা বুঝেছে। আর একারণে শাসকদল এখন যেভাবেই হোক বিএনপিকে এবারের মতো নির্বাচনে নিয়ে আসতে। আর একারণে পুরনো মামলা সচল করে পাশাপাশি বিএনপি’র বিভিন্ন ছোট-খাটো কর্মসূচিতেও বাধা সৃষ্টি করে তাদেরকে নির্বাচনমুখী করতে চায় ক্ষমতাসীনরা। এছাড়াও ঘনিষ্ট বন্ধু রাষ্ট্রকে দিয়ে রাজি করাতেও তারা নানান ধরনের কূটনৈতিক তৎপরতাও চালাচ্ছে। তবে একদিকে কঠোর পদক্ষেপ অন্যদিকে কূটনৈতিক  কর্মকাণ্ড চালিয়ে ক্ষমতাসীনরা কতটা সফল হবে তা সময় বলে দেবে। আর এটাই দেখার অপেক্ষায় দেশবাসী।

শেয়ার করুন