দীপান্বিতা মার্টিন /ফাইল ছবি
প্রতিভা থাকলে কদর মেলে। কথাটি নতুন করে প্রমাণ হলো দীপান্বিতা মার্টিনের ক্ষেত্রে। যিনি সমান তালে কাজ করছেন এখন নাটক, সিনেমা, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে। ওটিটিতেও জনপ্রিয় মুখ তিনি। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আছে এ তারকার ঝুলিতে। দীপান্বিতা মার্টিন তারঅভিনয়জীবন ও ব্যক্তিজীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে।
প্রশ্ন: আপনি থিয়েটার থেকে পর্দায় এসেন। দুই জাগার পার্থক্য কি মনে হয় আপনার কাছে?
দীপান্বিতা মার্টিন: ক্যামেরা শিল্পীর কাছে আসে। কিন্তু থিয়েটারে শিল্পীকে দর্শকের কাছে যেতে হয়। মঞ্চের কাজটা লাউড। গ্যালারির শেষ দর্শকের কাছে শিল্পীর সংলাপ পৌঁছাতে হয়। তবে ক্যামেরার সামনে অভিনয় করতে গেলে ছোট ছোট এক্সপ্রেশনগুলোও খুব ডিটেইলে দেখাতে হয়।
প্রশ্ন: অভিনয়ের ক্ষেত্রে আপনার কাছে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং দিক কোনটি?
দীপান্বিতা মার্টিন: সব অভিনেতা-অভিনেত্রীর কথা বলব না, তবে আমার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে চরিত্রের সঙ্গে ব্যক্তিজীবনে আমার পার্থক্য। কারণ যেটা আমি না সেটা নিজের মাঝে উপস্থাপন করা একজন আর্টিস্ট হিসেবে আমার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যেমন মনে করা যাক ব্যক্তিজীবনে আমি খুব বেশি রাগি না, কিন্তু চরিত্রে যদি রাগ দেখানো দরকার হয়, তবে আমাকে সেটা করতে হবে। চরিত্রের প্রয়োজনে ওই চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ধারণ করাটা কঠিন কাজ।
প্রশ্ন: গত বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এই প্রাপ্তি আপনাকে কতটা এগিয়ে দিতে পরেছে?
দীপান্বিতা মার্টিন: আমি দেশের মানুষ আর ইন্ডাস্ট্রির প্রতি কৃতজ্ঞ, তারা আমাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মতো সম্মাননা দিয়েছেন। কাজ করার সময় আমার কেবল একটাই আশা থাকে দর্শক যেন কাজটা ভালোবাসেন। এটাই একজন আর্টিস্টের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি আর অ্যাওয়ার্ড তাতে ভিন্ন মাত্রা নিয়ে আসে। এটা ভালো কাজ করার অনুপ্রেরণা। এখন মনে হচ্ছে অভিনেত্রী হিসেবে আমার জন্ম সার্থক। আন্তর্জাতিক মহলে আমার অনেক কাজ পরিচিতি পেয়েছে, কিন্তু দুঃখের বিষয় নিজের দেশের অনেকেই আমার কাজ খুব বেশি দেখেননি। একটা সময় আমাকে শুনতে হয়েছে, আমি থাকলে দর্শক কাজটা দেখবে না। আমি ফাইট করে গিয়েছি। আজ আমি টিকে আছি মানে কাল অন্য একটা মেয়ে এ ধরনের কাজ করতে সাহস পাবে। গত কয়েক মাসে আমি লক্ষ্য করেছি এ পুরস্কার আমাকে একটা পরিচিতি দিয়েছে। এটা অনেক বড় স্বীকৃতি।
প্রশ্ন: ‘গোর’ সিনেমায় কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
দীপান্বিতা মার্টিন: আমার অসাধারণ অভিজ্ঞতা আছে ‘গোর’ নিয়ে। হানুফার চরিত্রটা করতে আমাকে নিজেকে তৈরি করতে হয়েছে। এখানে মায়ের চরিত্রে আমাকে অভিনয় করতে হয়েছে। এজন্য মোটা হতে হয়েছে, ভাষা শিখতে হয়েছে। এখানে আমার মেয়ের চরিত্রে দ্যুতি অভিনয় করেছে। ক্যামেরার বাইরেও দীর্ঘ সময় থাকতে হয়েছে ওর সঙ্গে, থাকতে হয়েছে পর্দায় মা-মেয়ের কেমিস্ট্রি নিয়ে আসতে। একটা পর্যায়ে এমন হলো যে ও আমাকে ওর মা ভাবতে শুরু করল। শুটিং শেষ হওয়ার কিছুদিন আগে আমি ওকে ডেকে নিয়ে বলি, আমি তোমার মা না, শুধু সিনেমার পর্দায় তোমার মা।
প্রশ্ন: চরিত্রের ভিন্নতাকে কিভাবে দেখেন?
দীপান্বিতা মার্টিন: একটা চরিত্র থেকে বের হয়ে আসা অনেকটা প্রেমের বিচ্ছেদ হওয়ার মতো কষ্ট। আমার অনেক সময় লাগে চরিত্র থেকে বোরোতে। একটা টেলিভিশন নাটকে জন্য একজন অটিস্টিক মানুষের চরিত্রে আমি অভিনয় করেছিলাম। ওই চরিত্রটা থেকে বের হতে আমার কমপক্ষে দুই মাস লেগেছে। দেখা যাচ্ছিল যে আমি বাস্তব জীবনেও ওভাবেই ব্যবহার করছিলাম। অনেক মানুষ বলে যে ভালো পরিচালকের কাজ করি বলেই আমি ভালো করি। কিন্তু আসলে ভালো পরিচালকদের কাজ করা আরো কঠিন। কারণ তাদের কোনোভাবে ফাঁকি দিয়ে কাজ করা যায় না। আমি চরিত্রের সঙ্গে মিশে যেতে পেরেছি বলেই কিন্তু প্রশংসা আসে। তবে মানুষের এ কথা আমাকে অনেক কষ্ট দেয়।
প্রশ্ন: কাইজারের মুনিরা চরিত্র থেকে বের হতে পেরেছেন?
দীপান্বিতা মার্টিন: মুনিরার প্রতি আমার দুর্বলতা রয়েছে। বলা যায়, এ প্রজেক্টটা আমার জন্য প্রেম। পুরো কাইজার টিমের সঙ্গে অদ্ভুতভাবে আমি জড়িত। কাইজারের পরিচালক তানিম নূর আমার বন্ধু। তাই কাজ করতে গিয়ে মনে হয়েছে এটা আমার নিজের কাজ। মুনিরা খুব পাওয়ারফুল ওমেন ক্যারেক্টার। এটা আমার খুব পছন্দের একটা চরিত্র। আমার মনে হয় আমি এটার ঘোর থেকে এখনো বের হতে পারিনি।
প্রশ্ন: অভিনয়ের চ্যালেঞ্জগুলো কিভাবে মোকাবেলা করেন?
দীপান্বিতা মার্টিন: এটা আসলে আমার কাছের মানুষ বলতে পারবে। আমার বোন বলে, আমি ধৈর্যশীল। মোটামুটি ধৈর্য আছে বলা যায়। তবে কাজের ক্ষেত্রে আমি খুবই ধৈর্যশীল। আমার জীবনের প্রেম হচ্ছে ফিল্ম আর অভিনয়।
প্রশ্ন: অভিনয় করার সময়ে পরিচালক যেভাবে বলেন সেভাবেই কাজ করেন নাকি আগে নিজেই একটা ভাবনা মানে এঁকে নেন?
দীপান্বিতা মার্টিন: কাজের ক্ষেত্রে আমার প্রথম গুরুত্ব পরিচালকের ভাবনা। কারণ তিনি তো চরিত্রটা সবার আগে দেখেন। যদি আমি আমার পছন্দমতো করি তাহলে ছন্দপতন হয়। কারণ পুরো সিনেমা একটা গানের মতো। আমি মনে করি ‘ইন দ্য সেট ডিরেক্টর ইজ গড’। তাই সে আমাকে যা বলবে আমি সেটাই করার চেষ্টা করি।
প্রশ্ন: ওটিটি প্লাটফর্মেও আপনি জনপ্রিয়। ব্যক্তিগতভাবে ওটিটি নিয়ে আপনার ভাবনা?
দীপান্বিতা মার্টিন: আমি ব্যক্তিগতভাবে ওটিটি প্লাটফর্মে কাজ করতে পছন্দ করি। কারণ এখানে স্টোরিকে গুরুত্ব দেয়া হয়। আর প্রতিটি চরিত্র সমানভাবে এখানে গুরুত্ব বহন করে। এখানে গল্প মূল হিরো। আমি মনে করি, যখন গল্পটাই মূল হিরো তখন প্রতিটি চরিত্র হিরো। এজন্য আমি ওটিটি প্লাটফর্ম পছন্দ করি।
প্রশ্ন: কাইজারে পুলিশ (গোয়েন্দা) অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন কীভাবে?
দীপান্বিতা মার্টিন: মুনিরা চরিত্রটি ঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে আমি নিয়মিত পরিচালক আর লেখককে প্রশ্ন করেছি। আমি নিয়মিত এক্সারসাইজ করি। তবে এমন মারামারি তো করা হয় না। এ চরিত্রটা করতে গিয়ে আমি একটু অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম। ডাবল এজেন্ট চরিত্রটা তুলে ধরা চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ বাস্তব জীবনে এটা তো আমি না। মুনিরা হয়ে উঠতে আমাকে স্টাডি করতে হয়েছে। শুটিংয়ে অনেক নার্ভাস ছিলাম। পুরো কাইজার টিম অনেক বেশি সাহায্য করেছে।
প্রশ্ন: সামনে আপনার কি কাজ পাবে দর্শক?
দীপান্বিতা মার্টিন: সামনে আসতে যাচ্ছে নুরুল আলম আতিকের ‘মানুষের বাগান’, সাইফুল ইসলাম মান্নুর ‘পায়ের ছাপ’, নূর ইমরান মিঠুর ‘পাতালঘর’। আর একটা সিনেমা নিয়ে কথা চলছে। তবে সেটা নিয়ে এখনই কিছু বলতে পারছি না করব কিনা। আর সামনে দেখা যাক কী আসে।
প্রশ্ন: এখন অনেক কাজের প্রস্তাব আসে, বাছাই করেন কীভাবে?
দীপান্বিতা মার্টিন: প্রথমে দেখি আমি আগে কখনও এমন চরিত্রে অভিনয় করেছি কি না। যদি করে থাকি তাহলে আগ্রহবোধ করি না। দ্বিতীয়ত দেখি, গল্প থেকে এই চরিত্রটা বাদ দিলে গল্পটা আগাবে কি না। গল্পের ক্ষতি হবে কি না। যদি দেখি, গল্পে চরিত্রটা অনবদ্য। তাকে লাগবেই, তখনই হ্যাঁ বলি।
