২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০১:২৮:০৮ পূর্বাহ্ন


বদিউল আলম বললেন
আমরা অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আছি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-১১-২০২২
আমরা অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আছি বদিউল আলম মজুমদার


বাংলাদেশে এসডিজি স্থানীয়করণ ত্বরান্বিত করার উপায়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় দি হাঙ্গার প্রজেক্টের গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, আমরা এখন একটি অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আছি। এর থেকে উত্তরণ করতে হলে গ্রাম পর্যায়ে, তৃণমূলে সংগঠিত করতে হবে। আমাদের কাজটা মূলত মানুষকে ক্ষমতায়িত করা, যাতে তারা স্থানীয় পর্যায়ে পরিবর্তনের রূপকার হয়ে উঠতে পারে।

রাজধানীর আগারগাঁওস্থ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গত ১৩ নভেম্বর রোববার এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।  আলোচনা সভার প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিশু অধিকার সংক্রান্ত সংসদীয় ককাসের ভাইস চেয়ারম্যান এ্যারোমা দত্ত এমপি, প্রধামন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, সিপিডির ডিসটিংগুইসড ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ। এছাড়া দি হাঙ্গার প্রজেক্টের গ্লোবাল বোর্ডের ডিরেক্টর এবং সদস্যগণ আলোচনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দি হাঙ্গার প্রজেক্টের গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন দি হাঙ্গার প্রজেক্টের গ্লোবাল বোর্ড অফ ডিরেক্টরের চেয়ারম্যান শেরি স্টমবার্গ।      

বদিউল আলম মজুমদার আরো বলেন, আমাদের প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাব্রতীরা স্থানীয়ভাবে স্থানীয় সম্পদ কাজে লাগিয়ে পর¯পরের কাধে কাধ রেখে সমস্যা সমাধান করে যাচ্ছে। আমরা তৃণমূল পর্যায়ে সবাইকে নিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়ের মতো যার যা আছে তা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এসডিজি স্থানীয়করণের লক্ষ্যে হাঙ্গার প্রজেক্ট স্বেচ্ছাব্রতীরা স্থানীয় জনগণ, নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আমরা সবাইকে যুক্ত করে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করি, কেউই বাদ থাকে না।  

অন্যদিকে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ড. শামসুল আলম বলেন, উপর থেকে পরিকল্পনা ও কৌশল তৈরি করা হয় কিন্তু বাস্তবে রূপ নিবে যদি পরিকল্পনাটি আমরা তৃণমূলে নিয়ে যেতে পারি। শুধু এসডিজি না, যেকোনো কিছু তৃণমূলে নিয়ে যেতে না পারলে সুফল পাওয়া যাবে না। সরকার এসডিজি বাস্তবায়নে অনেক পরিকল্পনা ও কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে, ন্যাশনাল এ্যাকশন প্ল্যান প্রণয়ন করেছে। হাঙ্গার প্রজেক্টও এসডিজি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে। হাঙ্গার প্রজেক্টের সফলতা হচ্ছে সংস্থাটি তরুণদের সংগঠিত করতে পেরেছে, আমি নিজে এটি দেখেছি। পাশাপাশি তারা স্থানীয় সরকারকেও ব্যবহার করছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের সমন্বয় করে কাজ করছে। অনেকে স্থানীয় সরকার অতি রাজনীতিকরণ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করছেন, কিন্ত আমি মনে করি জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে পারলে এটি বড় কোনো সমস্যা না। রাজনীতির মাধ্যমেই রূপান্তর ঘটাতে হবে। বাংলাদেশকে ব্যান্ডিং করার জন্য এসডিজি হলো সবচেয়ে বড় মাধ্যম। বিদেশিরা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বুঝে না। এসডিজি বাস্তবায়নের মাধ্যমেই আমাদের বিশ্বের কাছে নিজেদের অর্জন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।  

শেরি স্টমবার্গ বলেন, ২০০৫ সালে আমি প্রথম বাংলাদেশে আসি। এরপর ২০১৪ সালে আবার বাংলাদেশে আসি। এই ৯ বছরে বাংলাদেশে অসাধারণ পরিবর্তন লক্ষ করেছি। নারী নেতৃত্ব, বাল্যবিয়ে রোধ, পুষ্টি, স্যানিটেশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। আমি আশা করি এসডিজি স্থানীয়করণের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।  

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এসডিজি স্থানীয়করণ অধিকারবোধ, মালিকানাবোধ এবং সক্রিয় নাগরিকত্ববোধের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এখানে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা একটি বড় বিষয়। সোশ্যাল একাউন্টিবিলিটি টুলস প্রয়োগ করতে হবে। আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিকেন্দ্রীকরণের অভাব বাংলাদেশে এসডিজি স্থানীয়করণের পথে একটি বড় বাধা। আরেকটি বড় প্রতিবন্ধকতা হলো স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার রাজনীতিকরণ। স্থানীয় সরকারে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করা ছিল একটি বড় ধরনের ভুল, কারণ এর মাধ্যমে স্থানীয় সরকার আগে যতটুকু অবদান রাখতে পারত এখন তাও পারছে না।    

আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিশ্বজুড়ে এসডিজি বাস্তবায়নের ইন্ডিকেটরগুলোতে বাংলাদেশ সবচেয়ে ভালো করেছে। বাংলাদেশের এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জাতীয় নীতি হচ্ছে হোল সোসাইটি এপ্রোচ। কমিউনিটি ইন্টারবেশন হচ্ছে যে কোনো সমস্যার কার্যকর সমাধান।

ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা দিন দিন অকার্যকর হয়ে পড়ছে। স্থানীয় পর্যায়ে প্রচুর টাকা যাচ্ছে, কিন্ত  টাকাগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। হাঙ্গার প্রজেক্ট বহুদিন ধরে স্থানীয় পর্যায়ে গুরত্বপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছে কিন্ত কেউ শুনছে বলে মনে হচ্ছে না। কেউ বুঝারও চেষ্টা করছে না এই কাজের শক্তির জায়গাটা কোথায়।

রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে দেশের বিভিন্ন আর্থসামাজিক উন্নয়নে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার ভূমিকা ভুলে গেলে হবে না। পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে আমরা অনেক সময় ব্যাকগ্রাউন্ড ভুলে যাই; এজন্য পরিসংখ্যান ব্যুরোকে শক্তিশালী করতে হবে। হাঙ্গার প্রজেক্টের কাজটি একটি মডেল, এখানে সরকারি সহায়তা লাগবে।

এ্যারোমা দত্ত বলেন, শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী খুব অল্পতেই তুষ্ট থাকে। সীমিত স¤পদ দিয়েও তারা চমকপ্রদ কিছু করে দেখাতে পারে। আমাদেরকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির সাথে সমন্বয় করে কাজ করে যেতে হবে। সরকার একা পারবে না, সরকারি বেসরকারি সংস্থা  থেকে শুরু করে দাতা সংস্থা ছোট বড় এনজিও সবাইকে হাতে হাত ধরে কাজ করতে হবে, চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে হবে।

শেয়ার করুন