১২ এপ্রিল ২০১২, বুধবার, ৬:৫৭:৪৫ অপরাহ্ন


মিশিগানে স্থায়ী কন্স্যুলেট অফিস না থাকায় লক্ষাধিক বাংলাদেশির ভোগান্তি চরমে
জুয়েল খান, মিশিগান থেকে
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৯-২০২২
মিশিগানে স্থায়ী কন্স্যুলেট অফিস না থাকায় লক্ষাধিক বাংলাদেশির ভোগান্তি চরমে মিসিগানে স্থায়ী বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল অফিস নেই।


যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প এলাকাখ্যাত মিশিগানে লক্ষাধিক বাংলাদেশি অভিবাসীর বসবাস হলেও দেড় দশকে বাস্তবায়ন হয়নি স্থায়ী বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল অফিস। বাংলাদেশের এমপি, মন্ত্রী আর সরকারের উচ্চপদস্ত ব্যাক্তিরা মিশিগানে সফরকালে মিশিগানে স্থায়ী কনস্যুলেট অফিস স্থাপনে আশ্বাস দেন। আশ্বাসে দেড়যুগ চলে গেলেও  প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। বাংলাদেশি নাগরিক হিসাবে ‘নাগরিক সেবা’ পেতে দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন হাজার হাজার রেমিটেন্স যোদ্ধা।

মিশিগানে কলকারখানা থাকায় কাজের সহজলভ্যতা, সামর্থের মধ্যে আবাসন সুবিধা থাকায় লক্ষাধিক অভিবাসী বাংলাদেশি মিশিগানে বসবাস করে আসছেন। মিশিগানে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা দেশে বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্স প্রেরণ করলেও মিশিগানে স্থায়ী কনস্যুলেট জেনারেল অফিস না থাকায় অভিবাসীরা বাংলাদেশিরা ই পাসপোর্ট তৈরি, নো ভিসা রিকোয়ার্ড (এনভিআর), পাওয়ার অব এ্যাটর্নি ও দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদ (ডিএনসি) এর জন্য  মিশিগান থেকে  কনস্যুলেট সেবা পেতে ওয়াশিংটন যেতে হয়। এতে সময় ও অর্থ ব্যায়ের পাশাপাশি নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় বাংলাদেশি অভিবাসীদের। বর্তমানে ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার কারণে এই ঝামেলা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে।

একজন ই-পাসপোর্ট প্রার্থীকে স্বশরীরে ওয়াশিংটন ডিসিতে দূতাবাসে হাজির হতে হয়। ওয়াশিংটন ডিসির মিশিগান থেকে দূরত্ব হচ্ছে প্রায় সাড়ে পাঁচশ মাইল। এতে করে কাজকর্ম ও বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ রেখে ওয়াশিংটনে যাওয়া যেমন দূরহ তেমনি বিপুল ব্যায় ও সময় সাপেক্ষ। এতে অভিবাসী বাংলাদেশিদের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।

জানা যায়, ২০১৩ সাল থেকে মিশিগানে এসে বছরে একবার এক সপ্তাহের জন্য অস্থায়ীভাবে বাংলাদেশ দূতাবাসের লোকজন ওয়াশিংটন থেকে এসে কনস্যুলেট সেবা প্রদান করলেও বিপুল এই জনগোষ্ঠীর জন্য অপ্রতুল বলে অভিযোগ করেন অভিবাসী বাংলাদেশিরা। চলতি বছরের ১৯ থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত ৪ দিন মিশিগানে অস্থায়ীভাবে

কনস্যুলেট সেবা প্রদান করার কথা ছিল কিন্তু শেষদিনে নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে সেবা বন্ধ করে ওয়াশিংটন চলে যান দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এতে বিপাকে পড়েন অনেক সেবা প্রত্যাশি বাংলাদেশি নারী পুরুষরা।

প্রায় ১ লক্ষ বাংলাদেশি প্রবাসী মিশিগানে বসবাস করেন। নিউইয়র্কের পরেই বাংলাদেশিদের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস এখানে। মিশিগানে একটি স্থায়ী কনস্যুলেট প্রতিষ্ঠার দাবি দীর্ঘদিনের। অথচ প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যাধিক্যের আনুপাতিক তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে ৫ নাম্বারে থাকা ফ্লোরিডা রাজ্যে দেয়া হয় স্থায়ী কনস্যুলেট অফিস। মিশিগানের বিভিন্ন সংগঠন ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিষয়টি

নিয়ে অনেক দেন-দরবার করলেও গালভরা আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি। মিশিগানে বসবাসকারী বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিরা বলেন, মিশিগানে স্থায়ী কনস্যুলেট অফিস স্থাপন করলে এখানে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা সহজে সেবা গ্রহণ করতে পারেবেন তেমনি মিশিগানের নিকটবর্তী স্টেট, ওহায়হো, ইন্ডিয়ানা ও উইসকনসিন রাজ্যগুলোতে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা সহজে কনস্যুলেট সেবা পেতে পারেন। 

মিশিগানে কনস্যুলেট অফিস স্থাপনের দাবি উঠে ২০০৭ সালে। মিশিগানের বিশিষ্ট কমিউনিটি লিডার ইঞ্জিনিয়ার আহাদ আহমেদ, মো আহাদ, বিজিত ধর মনি, সৈয়দ মতিউর রহমান শিমু, মাহফুজুর রহমান চৌধুরী, আশফাকুর রহমান চৌধুরী, ইব্রাহিম জাবেদ চৌধুরী, বাবুল মিয়া সোহেল নেতৃত্ব দিয়ে দাবিকে  কমিউনিটিতে বেগবান করেন। কনস্যুলেট অফিস স্থাপনের দাবিকে গণদাবিত পরিণত হয়।

২০২০ সালে মিশিগানে  বসবাসকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতৃস্থানীয়রা  কস্যুলেট অফিস স্থাপনের দাবিতে ২৫ হাজার  সাক্ষর সম্বলিত  আবেদন দায়িত্বশিলদের কাছে হস্তান্তর করলেও এখন পর্যন্ত মিশিগানে কনস্যুলেট অফিস স্থাপনে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। রাষ্ট্রের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি মিশিগানে সফরকালে বিভিন্ন সভা-সমিতিতে বক্তব্যকালে কনস্যুলেট অফিস স্থাপনের  প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করলেও দীর্ঘদিন  অতিবাহিত হওয়ার পরও অভিবাসী বাংলাদেশিদের মিশিগানে স্থায়ীভাবে কনস্যুলেট  স্থাপন না করায় মিশিগানে বসবাসকারী লক্ষাধিক বাংলাদেশি অভিবাসীদের মাঝে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

শেয়ার করুন