২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৩:৪৭:৫০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


আগামী সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ জ্বালানি নিরাপত্তা
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০১-২০২৪
আগামী সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ জ্বালানি নিরাপত্তা


৩১ ডিসেম্বর সূর্যাস্তের মধ্য দিয়ে কালের গহ্বরে হারিয়ে গেছে ২০২৩। শেষ হয়ে আসছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের সরকারের তিন টার্মের ১৫ বছরের শাসনকাল। ৭ জানুয়ারি ২০২৪ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসবে এটি দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। সবাই জানে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো বাংলাদেশ গভীর অর্থনৈতিক সংকটে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অন্যতম মূল সংকট জ্বালানিনিরাপত্তা। আমলানিয়ন্ত্রিত এবং সিন্ডিকেট প্রভাবিত জ্বালানি কৌশলের কারণে দেশের প্রাথমিক জ্বালানি (কয়লা, গ্যাস) মাটির নিচে রেখে ভুল পথে জ্বালানি আমদানির পেছনে ছুটে তীব্র জ্বালানি সংকটের সৃষ্টি করেছে সরকার।

জলে-স্থলে প্রয়োজনের তুলনায় যৎসামান্য গ্যাস অনুসন্ধান করে প্রমাণিত গ্যাস সম্পদ নিঃশেষ হওয়ার পথে। জ্বালানি আমদানির পর্যাপ্ত অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি। ডলার সংকটে জ্বালানি কিনতে পারছে না বিপিসি, বিপিডিবি এবং পেট্রোবাংলা। জ্বালানি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর জমানো টাকা সরকার তুলে নিয়েছে। উচ্চমূল্যে জ্বালানি আমদানি করায় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় বিপুল বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা থাকায় অলস রেখে বিপুল পরিমাণ ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়ে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে বিপিডিবি। সরকারি সংস্থাগুলোর বিপুল বকেয়া রয়েছে। 

বর্তমান বাস্তবতায় আগামী মার্চ এপ্রিল ২০২৪ নাগাদ সংকট তীব্রতর হবে। অনাগত সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে জ্বালানি সংকট মোকাবিলা করা। জ্বালানি সংকটের কারণে অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হবে। ১৫ বছর একাধারে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না। দায় রয়েছে জ্বালানিমন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী, জ্বালানি-বিদ্যুৎ বিভাগ ও সংস্থাগুলোর। 

কেউ কি ভেবেছে পিএসএমপি ২০১০ এবং পিএসএমপি ২০১৬ কেন বাস্তবায়ন হলো না? তথাকথিত গণতান্ত্রিক দেশে জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ আইনের মোট কালাকানুন কেন এখনো বহাল আছে? কত দিন থাকবে সেটাও জানা নেই। ১৬ হাজার মেগাওয়াট সর্বোচ্চ ক্ষমতার বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে কেন ২৭ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতা অর্জন করে সংকট সৃষ্টি করা হলো? এর জবাব নেই। নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এ আইন কি রদ হবে? এটাই এখন বড় প্রশ্ন। 

পেট্রোবাংলা এক সময় দক্ষ, কার্যকরি সংস্থা ছিল। ২০০১ পর্যন্ত পর্যাপ্ত গ্যাস উৎপাদন হতো চাহিদা মেটাতে। ১৯৯৬-২০০১ বেশ কয়েকটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছিল। ২০০২ থেকে সরকার পেট্রোবাংলাকে ক্রমাগত আমলা নির্ভর করে পঙ্গু করে ফেলেছে কোম্পানিগুলোকে। বোর্ডসমূহ চলছে সম্পূর্ণভাবে আমলাদের নিয়ন্ত্রণে। কয়লা উত্তোলনে কোনো কার্যকরি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বাপেক্সকে কার্যকরিভাবে দক্ষ করা হয়নি। গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা না করেই কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে জিটিসিএলকে পঙ্গু করা হয়েছে। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিসমূহে চলছে গ্যাস চুরির মহোৎসব। 

পেট্রোবাংলার গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে থেকে চেয়ারম্যান এবং পরিচালকরা কোনো ভূমিকায় রাখতে পারেনি। তাই সমুদ্রসীমা জয়ের একযুগ পরেও গভীর সাগরে অনুসন্ধান শুরু হয়নি। এগুলোর দায় অবশ্যই সরকারকে নিতে হবে। 

দেখলাম, এতোদিন দিবানিদ্রায় থাকা পেট্রোবাংলা হঠাৎ করে পাঁচটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পরিবর্তন আনলেন। সবাই আমার প্রাক্তন সহকর্মী। সবার বিষয়েই আমার বিস্তারিত জানা আছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে অনেক সিনিয়রদের ডিঙিয়ে জুনিয়র কর্মকর্তাদের পদায়ন করে কি বার্তা দিতে চাচ্ছে পেট্রোবাংলা। বিষয়টি আরো ভেবেচিন্তে নেওয়া উচিত ছিল। ২০২৪-২০২৫ কিন্তু মহাসংকটে পড়বে পেট্রোবাংলা। তখন না ঘরকা, না ঘাটকা পেট্রোবাংলা প্রশাসন কিন্তু মহাসংকটে পড়বে। 

আশা করি, সরকারপ্রধান বুঝতে পারছেন জ্বালানি সেক্টরের মোট কারিগরিঘন সংস্থায় আমলাদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ করতে দেওয়া মারাত্মক ভুল হয়েছে। নতুন টার্মে সরকারকে ভুলের মাশুল দিতে হবে। 

সংকট মোকাবিলা করতে সরকারকে কিছু অজনপ্রিয় জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জ্বালানি প্রশাসনে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। দেশের প্রাথমিক জ্বালানি অনুসন্ধান এবং উন্নয়নে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। নবায়ণযোগ্য জ্বালানি প্রসারে অনেক প্রণোদনা দিতে হবে।

শেয়ার করুন