২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৬:২৫:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


স্বপ্নের মেট্রোরেলের আজ উদ্ধোধন
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-১২-২০২২
স্বপ্নের মেট্রোরেলের আজ উদ্ধোধন


বহু প্রত্যাশিত মেট্রোরেলের উদ্ধোধন আজ। সকালে স্বপ্নের এ মেট্রোরেলের উদ্ধোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। প্রথমত সীমিত আকারে চলাচলের মাধ্যমে শুরু হবে এ ট্রেন। এরপর ধীরে ধীরে বাড়বে সময় ও অণ্যান্য স্টেশনে সার্ভিস দেয়ার বিষয়ও। এ ব্যাপারে বেশ ক’মাস ধরেই চলছে ট্রেন পরীক্ষামূলকভাবে। যার সফল সমাপ্তিতে এ সূচনা। 

আজ থেকে শুরু হলেও এটা উত্তরা থেকে চলবে আগারগাঁও পর্যন্ত।  শুরুতে মেট্রোরেল চলবে দিনে চার ঘণ্টা। সকাল ৮ থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলার সময় ট্রেনগুলো মাঝপথে কোথাও থামবে না। মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ধীরে ধীরে মেট্রোরেল চলাচলের সময় ও ট্রেন সংখ্যা বাড়ানো হবে। মুলত উত্তরা থেকে এ ট্রেনের শেষ গন্তব্য মতিঝিল হয়ে কমলাপুর ট্রেনস্টেশন। তবে সেটা ধীরে ধীরে সংযুক্ত হবে। 

যেহেতু আজ বুধবার মেট্রোরেলের উদ্ধোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে আজ বুধবার তিনি উত্তরায় মেট্রোরেল উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন এবং সেখানে আয়োজিত এক জনসভায় ভাষণও দেবেন। এরপর মেট্রোরেলে চড়ে তিনি উত্তরা থেকে আগারগাঁও পৌছুবেন।

যেহেতু বাংলাদেশে মেট্রোরেল প্রথম। তাই সাধারন মানুষকে অভ্যস্ত করতে প্রথমত ওঠানামায় অভ্যস্ত করে প্রতিটা ষ্টেশনে ১০ মিনিট বিরতি দেবে। ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ ট্রেন চালিয়ে এতে যাত্রী ওঠানামা, ট্রেনের দরজা খোলা ও বন্ধ করার পরীক্ষা চালিয়েছে। দেখা গেছে, টিকিট কেটে যাত্রীদের ট্রেনে উঠতে ও নামতে একটু সময় বেশি লাগছে। তাই আপাতত ১০ মিনিট করে অপেক্ষার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১৫ দিন পর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। আপাতত মেট্রোরেলের চলাচল সপ্তাহে এক দিন, মঙ্গলবার বন্ধ থাকবে। 

দিনে চার ঘণ্টা করে ট্রেন চালানোর কারণ প্রসঙ্গে জানানো হয়, মেট্রোরেলে জনবল নিয়োগ পুরোপুরি শেষ হয়নি। ট্রেন পরিচালনায় যুক্ত সবার প্রশিক্ষণও সম্পন্ন হয়নি। এ ছাড়া ট্রেনগুলো স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় পরিচালিত হবে বলে যাত্রী নিয়ে এর চলাচল কিছুদিন দেখতে চায় কর্তৃপক্ষ। যদিও অন্তত ১২টি ট্রেন চালানোর জন্য প্রস্তুত আছে, যা দিয়ে প্রতি তিন থেকে পাঁচ মিনিট অন্তর ট্রেন ছাড়া সম্ভব।

মেট্রোরেলের প্রথম টিকিট কাটবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি স্থায়ী কার্ড কিনে ভাড়া পরিশোধ করবেন বলে ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সূত্র জানিয়েছে, প্রথম দিকে স্থায়ী ও এক যাত্রার (সিঙ্গেল জার্নি) কার্ড মেট্রোরেল স্টেশন থেকেই কিনতে হবে। বাইরে পাওয়া যাবে না। ১০ বছর মেয়াদি স্থায়ী কার্ড কিনতে হবে ২০০ টাকা দিয়ে। এই কার্ডে যাতায়াতের জন্য টাকা ভরা (রিচার্জ) যাবে। অন্যদিকে এক যাত্রার কার্ড নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধ করে নিতে হবে। ট্রেন থেকে নামার সময় তা রেখে দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে স্টেশনের বাইরেও মেট্রোরেলের কার্ড বিক্রির জন্য কিছু প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সরকার মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করেছে ২০ টাকা। এরপর প্রতি দুই স্টেশন পর ১০ টাকা করে ভাড়া যোগ হবে। উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া হবে ৬০ টাকা। আর মতিঝিল পর্যন্ত বেড়ে হবে ১০০ টাকা। 

সাধারণ যাত্রীদের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার সকাল থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হবে। প্রথমে উত্তরা ও আগারগাঁও স্টেশন থেকে টিকিট কাটা যাবে। তবে টিকিট কাটার আগে সবাইকে নিবন্ধন করে নিতে হবে। বৃহস্পতিবার ডিএমটিসিএলের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া হবে। নিবন্ধন করতে নিজের নাম, পিতা-মাতার নাম, ফোন নম্বর ও ই-মেইল লাগবে।

মেট্রোরেল প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১২ সালে। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল লাইনের দৈর্ঘ্য ২১ কিলোমিটারের কিছু বেশি। আপাতত চালু হচ্ছে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ। মতিঝিল পর্যন্ত ২০২৩ সালে এবং কমলাপুর পর্যন্ত ২০২৫ সালে চালুর কথা। মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। মেট্রোরেল চলবে বিদ্যুতে। চলাচল হবে স্বয়ংক্রিয়। উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেল ডিপোতে একটি পরিচালন নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র (ওসিসি) স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে ট্রেন কোথায় কোথায় থামবে, কত সময় থেমে থাকবে, কত গতিতে চলবে এর সবই আগে থেকে ঠিক করে দেওয়া হবে। স্টেশনে যেখানে ট্রেন থামার কথা, ঠিক সেখানেই থামবে। সর্বোচ্চ ছয় ইঞ্চি এদিক-ওদিক হতে পারে। নইলে ট্রেনের দরজা ও প্ল্যাটফর্মের দরজা বরাবর হবে না।

প্রকল্প বর্ণনা

২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট তথা মেট্রো রেল প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন লাভ করে। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য এমআরটি-৬ নামক ২০.১০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথকে নির্ধারন করা হয়। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে জাইকা দেয় ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো রেল চালু হলে দু'দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। এমআরটি-৬ এর চূড়ান্ত রুট অ্যালাইনমেন্ট হলো- উত্তরা তৃতীয় ধাপ-পল্লবী-রোকেয়া সরণির পশ্চিম পাশ দিয়ে (চন্দ্রিমা উদ্যান-সংসদ ভবন) খামারবাড়ী হয়ে ফার্মগেট-সোনারগাঁও হোটেল-শাহবাগ-টিএসসি-দোয়েল চত্বর-তোপখানা রোড থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত।


এ রুটের ১৬টি স্টেশন হচ্ছে- উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সচিবালয়, মতিঝিল ও কমলাপুর। ট্রেন চালানোর জন্য ঘণ্টায় দরকার হবে ১৩.৪৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যা নেওয়া হবে জাতীয় গ্রিড থেকে। এর জন্য উত্তরা, পল্লবী, তালতলা, সোনারগাঁ ও বাংলা একাডেমি এলাকায় পাঁচটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র থাকবে। ২০১৬ সালের ২৬ জুন এমআরটি-৬ প্রকল্পের নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে শুরু হয় ঢাকা মেট্রোর নির্মাণকাজের সূচনা। 

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বানী 

মেট্রোরেলের উদ্ধোধন উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বানী দিয়েছেন। 

২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল ‘ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬’ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের শুভ উদ্বোধন দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে একটি অনন্য মাইলফলক।

রাষ্ট্রপতি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগসহ প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ইতিহাস ও ঐতিহ্যমন্ডিত জনবহুল মহানগরী ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী জেলার যানজট নিরসনে দ্রুতগামী, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, সময়সাশ্রয়ী, বিদ্যুৎচালিত, পরিবেশবান্ধব ও দূরনিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা প্রবর্তন সরকারের একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ।  


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেয়া বানীতে বলেন, ‘ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬ বা বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধন ঢাকা মহানগরবাসীর বহু প্রতীক্ষিত স্বপ্ন। এমআরটি লাইন-৬ এর উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের শুভ উদ্বোধনের মাধ্যমে আজ মহানগরবাসীর সেই স্বপ্ন পূরণ হল। মেট্রোরেল উদ্বোধনের এ মাহেন্দ্রক্ষণে আমি দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দেশের পরিবহন ও যোগাযোগ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনের উন্নয়ন যাত্রার সূচনা করেছিলেন। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।

আগামী মাসেই বাংলাদেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ শুরু হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা ঢাকা মহানগরী ও তৎসংলগ্ন পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসন ও পরিবেশ উন্নয়নে মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছিলাম। বর্তমান সরকার সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ৬টি মেট্রোরেল লাইনের সমন্বয়ে সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা ২০৩০ গ্রহণ করেছে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের আওতায় ৪টি মেট্রোরেল লাইনের নির্মাণ বিভিন্ন পর্যায়ে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে এবং ২টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। 


শেয়ার করুন