২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০৪:২১:৫৯ অপরাহ্ন


স্বাভাবিকভাবে হচ্ছে না ক্ষমতার স্থানান্তর
বিশেষ প্রতিবেদক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৯-২০২২
স্বাভাবিকভাবে হচ্ছে না ক্ষমতার স্থানান্তর


জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন নতুন আয়োজন “গ্রন্থ’ আলাপন - লেখক ও বইয়ের মুখোমুখি” আলোচনসভায় বক্তারা বলেছেন, আমরা চিন্তা করতে অভ্যস্ত নয়, বিপরীত চিন্তাকে আমরা গ্রহণ করতে চাই না। অথচ চিন্তার বহু পীঠ থাকে। প্রত্যেকটা পীঠ থেকে দ্যুতি বের হয়। দেশে দ্বিধাবিভক্তি রাজনীতি প্রবল আকার ধারণ করে আছে। শাসকশ্রেণির মধ্যে ক্ষমতার স্থানান্তর স্বাভাবিকভাবে হচ্ছে না।

ধানমন্ডিস্থ’ বেঙ্গল শিল্পালয়ে অনুষ্ঠিত এঅনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজমের সম্প্রতি প্রকাশিত “সাংস্কৃতিক রাজনীতি ও বাংলাদেশ” বইটি ছিল আলোচ্যবই। 

বক্তৃতাকালে বইয়ের লেখক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, “বাংলাদেশ উদযাপন” পর্যালোচনা উপলক্ষ্যে এই বইয়ের লেখাগুলি বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। “বাংলাদেশ উদযাপন” এখানে জাতি, কিংবা দেশপ্রেম বিবেচনায় নিয়ে আমি ব্যবহার করছি না। দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্কৃতি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংলাপময়তা হারিয়েছে। শাসকশ্রেণির মধ্যে ক্ষমতার স্থানান্তর স্বাভাবিকভাবে হচ্ছে না। বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক উপনিবেশায়ন ঘটেছে। কলিকাতায় উৎপাদিত চিন্তাভাবনা ঢাকায় বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়া গ্রহণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, কলিকাতায় দেড়দুশো বছরে যে বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষতা ঘটেছে তা আবার  ঢাকায় ঘটেনি। বর্তমানে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সাংস্কৃতিকভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। 

লেখকের বক্তব্যের পর আলোচক হিসেবে বই নিয়ে পর্যালোচনা তুলে ধরেন  ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস (ইউল্যাব)-এর গণমাধ্যম অধ্যয়ন ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. সুমন রহমান। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে দ্বিধাবিভক্তি রাজনীতি প্রবল আকার ধারণ করে আছে। একারণে মোহাম্মদ আজম তার একটি প্রবন্ধে মুসলমান ও বাঙালির মধ্যে জল-অচল দূরত্ব আছে বলে মনে করেন।” তাছাড়া সাংস্কৃতিক, কিংবা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে আমরা পশ্চিমা তৈরি বর্গগুলো নির্বিচারে গ্রহণ করি। আধুনিকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা বর্গগুলো পর্যালোচনা না করে কলিকাতা থেকে গ্রহণ করেছি। 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইউল্যাবের ইংরেজি ও মানববিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, আমরা চিন্তা করতে অভ্যস্ত নয়, বিপরীত চিন্তাকে আমরা গ্রহণ করতে চাই না। অথচ চিন্তার বহু পীঠ থাকে। প্রত্যেকটা পীঠ থেকে দ্যুতি বের হয়। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ক্রিটিক করার শিক্ষা দেওয়া হয়নি। বর্তমানে বুদ্ধিজীবী শব্দটি এখানে ঝীর্ণ হয়ে পড়েছে। বই সম্বন্ধে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, আজমের বইয়ে সমাজ থেকে চিন্তা উঠে এসেছে। 

ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক প্রফেসর ইমেরিটাস আহরার আহমদের স্বাগত আলাপের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন দেশীয় লেখক, বুদ্ধিজীবীদের উৎসাহপ্রদানে বুদ্ধিবৃত্তিক বিচিত্র অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। জ্ঞানের বাজারে আমরা এখনো বিদেশিদের উপর নির্ভর করি, যা আমাদের কাম্য নয়। ফাউন্ডেশনের নতুন আয়োজন সম্বন্ধে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে মুক্তচিন্তা, উদার ও প্রশ্নভিত্তিক চিন্তাচর্চাকে বহুগুণে উৎসাহপ্রদান এবং একাডেমিক ও সুসংবদ্ধ আলোচনামুখী চিন্তাপদ্ধতি অবলম্বনে আগ্রহী করে তুলবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বহু তরুণ লেখক ও গবেষক।

শেয়ার করুন