করোনা সারা বিশ্বকে বিশাল এক ধাক্কার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বদলে দিয়েছে মানুষের জীবনযাত্রা। চরম অর্থনৈতিক সংকটে বিশ্বের মানুষ। বিশ্ব যখন করোনা মহামারীর অভিঘাত কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় রত, তখনই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। বলার অপেক্ষা রাখে না, দীর্ঘস্থায়ী এ যুদ্ধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতি। অনিশ্চিত হয়ে গেছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) বাস্তবায়ন। কাজেই এ সংকট থেকে উত্তরণের একটি উপায় খুঁজে বের করা জরুরি হয়ে পড়েছে। মোড়ল দেশগুলোর মোড়লিপনাই এই যুদ্ধের সূত্রপাত এবং দীর্ঘস্থায়িতা।
এই রকমই এক পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের ৭৭তম অধিবেশন বসে। এই অধিবেশনে গত ২১ সেপ্টেম্বর বুধবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস আয়োজিত গেøাবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রæপ (জিসিআরজি) চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছয়দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ এ প্রস্তাবগুলোর প্রথম দফায় বলা হয়েছে, বিশ্বনেতাদের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা মোকাবিলা করতে হবে। জি-৭, জি-২০, ওইসিডি, আইএফআই ও এমডিবিকে তাৎক্ষণিক উদ্বেগগুলো মোকাবিলা করার প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- এসডিজি অর্থায়নের অভাব, সীমিত আর্থিক সংস্থান, ক্রমহ্রাসমান ওডিএ ও ঋণ পরিষেবা। দ্বিতীয় দফায় বলা হয়েছে, আমরা সংঘাতের সময় খাদ্য উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থাকে ক্ষতির হাত থেকে দূরে রাখার জন্য ভবিষ্যতের যে কোনো উদ্যোগকে সমর্থন করতে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। তৃতীয় প্রস্তাবে হলো, বিশ্ববাণিজ্য পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সাহসী ও ব্যাপক পদক্ষেপের প্রয়োজন এবং বিশ্ববাণিজ্য ও রফতানি আয়ে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ন্যায্য অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা অপরিহার্য। চতুর্থ প্রস্তাবে বলা হয়েছে, উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং কার্যকর খাদ্য সংরক্ষণ ও বিতরণ ব্যবস্থার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর কৃষিখাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। নতুন ব্যবসার সুযোগ তৈরি করতে প্রযুক্তি সহায়তা, বর্ধিত ওডিএ এবং রেয়াতি অর্থায়নের লক্ষ্যে আমাদের আরো জি২জি ও বি২বি সহযোগিতার প্রয়োজন। পঞ্চম প্রস্তাব হলো, জলবায়ু সহযোগিতার জন্য বৈশ্বিক কাঠামোকে আরো কার্যকর ও ন্যায্য করতে হবে। আসন্ন কপ-২৭-এর সুযোগটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর উদ্বেগ নিরসনে কাজে লাগানো উচিত। সবশেষ প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আমরা আমাদের অংশীদারিদের সঙ্গে কাজ করতে চাই, যাতে সার্বিক উপায়ে জ্বালানি নিরাপত্তার সমস্যা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় উদ্দীপনা সৃষ্টি করা যায়।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এসব প্রস্তাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আমরা দেখেছি, বিশ্বের অন্যতম খাদ্যশস্য উৎপাদনকারী এ দুটি দেশ থেকে অন্য দেশে খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়েছিল। পরে এ সংকট কিছুটা কাটলেও খাদ্য সংকট পরিস্থিতি এখনো অব্যাহত আছে এবং অনেক ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তা। বিশেষ করে সারা বিশ্বে বৃদ্ধি পেয়েছে খাদ্যের দাম। সেই সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে জ্বলানি সংকটসহ অন্যান্য সমস্যা। নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ববাণিজ্যের ক্ষেত্রেও। হুমকির মুখে পড়েছে জ্বালানি নিরাপত্তা। আর এসবের ফলে সবচেয়ে সংকটে পড়েছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো এবং এর জনগণ। এই কথাগুলোর বিশ্বের আর কোনো রাষ্ট্রপ্রধান উল্লেখ করেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ এই জন্য যে, তিনি বিশ্বের সকল মানুষের কথা বলেছেন, মানবতার কথা বলেছেন। বাংলাদেশে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে সারা বিশ্বে মানবতার দূত হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবগুলো বিশেষ প্রণিধানযোগ্য বলে আমরা মনে করি। প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়নে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা হলে শুধু মানুষ নয়, রাষ্ট্র্রও উপকৃত হবে। এই প্রস্তাবগুলো বাস্তায়ন করা অত্যন্ত জরুরি। আমরা আশা করবো, জাতিসংঘ মহাসচিব এ ব্যাপারে বাস্তব পদক্ষেপ নেবেন। কারণ মানবতার জয় হলেই বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব শান্তির প্রস্তাব করেছেন সে জন্য তাকে ধন্যবাদ। বিশ্ব শান্তির পাশাপাশি তিনি যেন বাংলাদেশেও শান্তির ব্যবস্থা করেন। মানুষের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেন, বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে দেন। নিজ দেশকে অশান্তিতে রেখে বিশ্ব শান্তি কামনা হাস্যকরই বটে!