০৬ মে ২০১২, সোমবার, ০৯:১৪:০৮ পূর্বাহ্ন


নতুন নিবন্ধনকৃত ‘তৃণমূল বিএনপি’ নিয়ে কৌতুহল
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৯-২০২৩
নতুন নিবন্ধনকৃত ‘তৃণমূল বিএনপি’ নিয়ে কৌতুহল তৃণমূল বিএনপির কাউন্সিলে নেতৃবৃন্দ


তৃণমূল বিএনপি নামের একটি রাজনৈতিক দলের কাউন্সিল নিয়ে গরম খবর বেড়িয়েছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে। বিএনপি বেশ কিছু সিনিয়র ও নিষ্কৃয় নেতা দলটিতে যোগ দেবেন এটাই ছিল আলোচনার মুখ্য বিষয়। গত কয়েকদিন এ নিয়ে ছিল কৌতুহল। কারণ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে যে সব দল নিয়ে নির্বাচন করতে চান, তার মধ্যে এ দলটিকেও বিবেচনা করছেন অনেকে। কেউ কেউ বিএনপি বিকল্প হিসেবে দেখানোর জন্যই তৃণমূল বিএনপির নিবন্ধন দেয়া হয় চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারিতে। সঙ্গত কারণেই আলোচনা ছিল তুঙ্গে। কিন্তু দলটির প্রথম কাউন্সিল গত ১৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। 

কাউন্সিলে বিএনপিতে এক সময় রাজনীতি করা দুই নেতা নারায়ণগঞ্জের অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও মৌলভীবাজারের শমসের মবিন চৌধুরী ছাড়া আর তেমন কাউকেই দেখা যায়নি। দলটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে শমসের মবিন চৌধুরীকে আর মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার। এ দুইজনের মধ্যে শমসের মবিন ২০১৫ সনে বিএনপি থেকে শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন, রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন বলে। 

তৈমূর আলম বিএনপির বহিষ্কৃত। ফলে এ দুইয়ের ব্যাপারে বিএনপির কোনো আগ্রহই ছিল না। মির্জা ফখরুল এদের সম্পর্কে বলেছেন, তারা বিএনপির কেউ না। তারা কোথায় যোগ দিল এটা বিএনপির দেখার কিছু নেই। 

তবে আলোচনা চলে আরো বেশ ক’জন ডাকসাইটে নেতার ক্ষেত্রে। যাদের নামও প্রকাশিত হয় বিভিন্ন মিডিয়ায়। এর মধ্যে মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, এহসানুল হক মিলন, খুলনার বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু, আবদুল্লাহ আল নোমানসহ বেশ কয়েকজন নেতার তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনার গুঞ্জন রয়েছে। তবে এদের অনেকেই তাদের যোগ দেয়ার ব্যাপারটি বা সম্ভাবনার কথাও নাকচ করে দিয়েছেন। 

এদিকে কাউন্সিলে ২৭ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক জাতীয় নির্বাহী কমিটি নির্বাচন করা হয়। দলের প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদার মেয়ে সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অন্তরা সেলিমা হুদা নতুন কমিটিতে এক্সিকিউটিভ চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন মো. আক্কাস আলী খান। ভাইস চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়েছেন কেএ জাহাঙ্গীর মজুমদার, মেজর (অব.) ডা. হাবিবুর রহমান, মোখলেসুর রহমান ফরহাদী, দীপক কুমার পালিত, মেনোয়াল সরকার ও ছালাম মাহমুদ প্রমুখ। 

তৃণমূল বিএনপির প্রথম জাতীয় সম্মেলন ও কাউন্সিল মঙ্গলবার সকাল ১১টায় রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অন্তরা সেলিমা হুদা এতে সভাপতিত্ব করেন। এ সম্মেলনে বিএনপির সাবেক নেতা শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমুর আলম খন্দকার তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেবেন বলে অন্তরা হুদা জানিয়েছেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য পরবর্তী সময়ে দল থেকে বহিষ্কৃত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ‘তৃণমূল বিএনপি’ প্রতিষ্ঠা করেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দলটিকে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন দেয়। এর কয়েকদিন পর তিনি মারা গেলে দলটির নেতৃত্বে আসেন তার মেয়ে অন্তরা সেলিমা হুদা। দলটির বর্তমানে যে এক্সিকিউটিভ চেয়ারপার্সন অন্তরা অবশ্য বলেছেন, নির্বাচনে যোগ দেয়ার প্রস্তুতি অনেকের রয়েছে। এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যোগ দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। 

প্রয়াত নাজমুল হুদা

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী ছিলেন নাজমুল হুদা। ওয়ান ইলেভেনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তার বিরুদ্ধে তিনটি দুর্নীতির মামলা হয়। ২০১০ সালের ২১ নভেম্বর তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেসময় দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন নাজমুল হুদা। তবে বহিষ্কৃত হলেও দলীয় কাজ করতে থাকেন তিনি। ফলে ২০১১ সালের ৫ এপ্রিল তার সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ২০১২ সালে ৬ জুন বিএনপি থেকে স্থায়ীভাবে পদত্যাগ করেন নাজমুল হুদা। পরে ১০ আগস্ট আবুল কালাম আজাদকে নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট (বিএনএফ) নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন তিনি। 

কিন্তু কয়েক মাস পর নাজমুল হুদাকে বিএনএফ থেকে বহিষ্কার করেন আবুল কালাম। ২০১৪ সালে এমপি হন তিনি। ২০১৪ সালের ৭ মে বাংলাদেশ জাতীয় জোট (বিএনএ) গঠন করেন নাজমুল হুদা। ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি (বিএমপি) নামে দল গঠন করেন তিনি। ২০১৫ সালের ২০ নভেম্বর তৃণমূল বিএনপি নামে আরও একটি নতুন দল গঠন করেন নাজমুল হুদা। সেটার নিবন্ধন লাভ করে বর্তমান হাবিবুল আউয়াল কমিশনের কাছ থেকে। 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর 

বিএনপি একটা বিশাল প্রবাহমান নদীর মতো ‘কেউ চলে গেলে তাতে দলের কিছু আসবে যাবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘তৃণমূল বিএনপি’ নামে নতুন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের বিএনপির সাবেক নেতা শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমুর আলম খন্দকার যোগ দিচ্ছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘‘তৈমূর আলম খন্দকার এখন আমাদের দলের সদস্য নন, শমসেন মবিন চৌধুরী আমাদের দলের সদস্য নন। সুতরাং তারা তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন। এটা তাদের ব্যাপার। আমরা শুধু এইটুকু বলতে চাই, আগেও আমি তার উত্তর দিয়েছি, বিএনপি হচ্ছে একটা বিশাল প্রবাহমান নদীর মতো। সেখানে কত খড়কুটো আসে, কত খড়কুটো যায়- তাতে বিএনপির কিছু যায় আসে না। দ্যাট ইজ বিএনপি।”

‘বিএনপি বাকশাল নয়’

এ প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, ‘বিএনপি তো বাকশাল নয়। বিএনপি সবাইকে স্বাধীনতা দেয়, যার যার ইচ্ছামতো রাজনীতি করবে। যারা বিএনপি করতে চায় করবে, যারা নতুন দল করতে চায় করবে। আমরা বাকশাল নই যে, সারাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে আমরা জোর করে বলব যে, তোমরা একটাই দল করবে, তোমরা শুধু বিএনপি করবে-সেই রাজনীতি বিএনপি করে না।’ তৃণমূল বিএনপিতে আপনাদের দলের অনেকে যোগ দিতে পারেন এরকম প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের দল থেকে পদত্যাগ করে তো একজন যোগ দিয়েছেন তিন আসনের সংসদে। তাতে রাজনীতিতে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে, কোনো মৌলিক পরিবর্তন এসেছে, সরকারের এতে কি বিরাট বিজয় হয়েছে।’

শেয়ার করুন