২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৩:১৪:৫৭ পূর্বাহ্ন


সাধারণ সভায় গঠনতন্ত্র সংশোধন
জালালাবাদ ভবনের দায়িত্ব ট্রাস্টির হাতে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৩-২০২৪
জালালাবাদ ভবনের দায়িত্ব ট্রাস্টির হাতে সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট প্রদান করছেন মইনুল ইসলাম


প্রবাসের অন্যতম আঞ্চলিক সংগঠন জালালাবাদ এসোসিয়েশন। একটি ভবনকে কেন্দ্র জালালাবাদ এসোসিয়েশন এখন দুই ভাগে বিভক্ত। শাহীন কামালী এবং মইনুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাধারণ সভা গত ৪ মার্চ সন্ধ্যায় এস্টোরিয়ার জালালাবাদ ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। সেই সাধারণ সভায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। যার মধ্যে অন্যতম জালালাবাদ ভবন। এই ভবনের দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয় ট্রাস্ট্রির হাতে। সংশোধন করা হয় সংগঠনের গঠনতন্ত্র। আলোচনা করা হয় আগামী নির্বাচন নিয়ে। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সংথ্যা ৪ এর স্থলে ৮ জন করা হয়। এবং ৮ জনের মধ্য থেকেই চেয়ারম্যান করা হবে একজনকে। এ ছাড়াও বিগত সাধারণ সভায় ( বদরুল-রোকন) সাবেক সভাপতি সৈয়দ শওকত আলী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলামসহ জালালাবাসীকে অপধস্ত করার জন্য ক্ষোভ এবং নিন্দা জানানো হয়। সাধারণ সভায় বদরুল-রোকন কমিটি কর্তৃক কবর বিক্রির জন্য নিন্দা জানানো হয়। সেই সাথে ভবনকে অপরাজনীতি এবং বিভ্রান্তির সৃষ্টির জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। একই সাথে ভবনের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা হয়। সাধারণ সভায় সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের রিপোট উপস্থাপন করা হয় এবং রিপোর্টের উপর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন কামালীর সভাপতিত্বে এবং সহ সাধারণ সম্পাদক আতাউল গনি আসাদের পরিচালনায় মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যতম সদস্য ওহিদুর রহমান মুক্তা, ইঞ্জিনিয়ার ফজলুর রহমান, সাবেক সভাপতি এমন এ কাইয়্যুম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজ, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হেলিম উদ্দিন। অনুষ্ঠানে বেইলি রোড়ে অগ্নিকান্ডে নিহত আতাউর রহমান শামীমসহ অন্যান্যের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। কামাল আহমেদসহ জালালাবাদের আরো যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের জন্যও দোয়া করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন মাওলানা কাজী কাইয়্যূম।

অনুষ্ঠানে সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম তার রিপোর্ট উপস্থাপন করেন। সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম বলেন, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের কার্যকরি কমিটির পক্ষ থেকে সাধারণ সভায় উপস্থিত সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। মার্চ মাস বাঙালী জাতির জন্য একটি ঐতিহাসিকও গুরুত্বপূর্ণ মাস। এই মাসেই লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে রচিত হয়েছিল আমাদের মহান স্বাধীনতা। গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি ত্রিশ লক্ষ শহীদ, দুই লক্ষাধিক মা-বোন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সকল মহান ব্যক্তিবর্গকে।

শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি জালালাবাদের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ অবধি যারা তাদের মেধা, শ্রম ও অর্থ দিয়ে জালালাবাদ এসোসিয়েশনকে এই প্রবাসে একটি বৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী সংগঠন হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, সাথে যারা পরলোক গমন করেছেন মহান আল্লাহর কাছে তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত করছি এবং যারা জীবিত আছেন তাদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।

তিনি উল্লেখ করেন, আপনাদের সকলের অবগতির জন্য জানাতে চাই যে, অদ্যকার সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্টে বিগত সাংগঠনিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি আগামী দিনের যে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন সংগঠনের কিছু সংখ্যক সদস্য সংগঠনের কার্যক্রমের প্রতি চরম অনীহা, অসহযোগিতা ও সংগঠনের স্বার্থবিরোধী কাজে লিপ্ত থাকার কারণে আমরা একাধিকবার মৌখিক ও লিখিতভাবে যোগাযোগ করার পরও তাদের নির্লিপ্ততার কারণে সংগঠনের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছিল। এমতাবস্থায় সংগঠনের কার্যক্রমকে গতিশীল করার লক্ষ্যে বিগত ১৫ জানুয়ারি আমরা শূন্যপদসমূহ পুরণ করি।

কার্যকরি কমিটির প্রথম সভায় আমরা গঠনতান্ত্রিক নিয়ম অনুসারে জালালাবাদের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিদের নিয়ে আমরা একটি বোর্ড অব টাস্টি গঠন করি। (১) ওহিদুর রহমান মুক্তা (সিলেট), (২) আব্দুল মুকিত চৌধুরী মারুফ (সুনামগঞ্জ), (৩) সৈয়দ ফজলুর রহমান (হবিগঞ্জ) ও (৪) সৈয়দ জুবায়ের আলী (মৌলভীবাজার)।

তিনি উল্লেখ করেন আমাদের বৃহত্তর সিলেটের কৃতিসন্তান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সাথে জালালাবাদ ভবনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় তিনি জালালাবাদ এসোসিয়েশনের ভিজিটর বুকে নিউইয়র্ককে জালালাবাদ ভবন ক্রয় একটি ঐতিহাসিক অর্জন বলে মন্তব্য করেন। এছাড়াও জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনেকর বিগত দিনের কার্যক্রমগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম - মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার শামসের নগর হসপিটালের জন্য ফান্ড রাইজিং অনুষ্ঠান করি। “ছায়াতল বাংলাদেশ” অসহায় ও পথশিশুদের নিয়ে কাজ করে। তাদের সাথে মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠান করি।

মানসিক ও স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ক সেমিনার, নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশী কুইন্স ছাত্র ফোরামের সাথে মতবিনিময় বৃহত্তর সিলেটের কৃতিসন্তান গ্রীস, মালটা ও আলবেনিয়য় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ সাথে মতবিনিময়। বৃহত্তর সিলেট তথা বাংলাদেশের গর্ব মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম.এ. জি ওসমানীর রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। জালালাবাদ এসোসিয়েশনের অকৃত্রিম বন্ধু আজীবন সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহিদুল ইসলাম (লোপা) এর স্মরণ সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। প্রবাসে বাংলাদেশী কমিউনিটির আমব্রেলা সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটির বোর্ড অব টাস্টির বার বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান এম.এ. আজিজের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও আমরা ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) পালন করি। প্রবাসে এ প্রজন্মের বাচ্চাদের নিয়ে ঈদ পুনর্মিলনী ও থ্যাঙ্কস গিভিং অনুষ্ঠান করি।

মহান বিজয় দিবস : যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও মহান স্বাধীনতা দিবস, ২৬শে মার্চ ও অমর একুশ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস গুরুত্ব সহকারে জালালাবাদ ভবনে পালন করা হয়।

আগামি দিনের কর্মসূচির মধ্যে ছিলো- ১. বৃহত্তর সিলেটের সকল আঞ্চলিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের লোকে নিয়ে বাংলাদেশের সকল জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা। ২. আগামী ১৭ই মার্চ ২০২৪ ইং রমজান মাসের প্রথম রবিবার ধর্মীয় ভাব গম্বীর্যের সাথে পবিত্র কোরান তেলাওয়াত ও সকল জালালাবাদবাসীর প্রতি দোয়া ও ইফতার মাহফিল এর আয়োজন করা হয়। ৩. বাংলাদেশী কমিউনিটির নতুন প্রজন্মের বাচ্চাদেরকে ভয়াবহ মাদকের হাত থেকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন মাদকবিরোধী সচেতনতা ও কাউন্সিলিং এর ব্যবস্থা করা। আমাদের মনে রাখতে হবে প্রজন্ম বাঁচলে জাতি বাঁচবে, অন্যথায় অন্ধকার গহীন অরণ্যে হারিয়ে যাবে আমাদের আগামী প্রজন্ম। ৪. জালালাবাদবাসীর স্বপ্নের দৃশ্যমান জালালাবাদ ভবনকে মর্টগেজমুক্ত করার জন্য বিশেষ বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। জালালাবাদবাসীর অব্যাহত সহযোগিতা থাকলে বর্তমান জালালাবাদ ভবনের পাশের দুইটি বাড়ি ক্রয় করে “জালালাবাদ কমিউনিটি সেন্টার” নির্মানের পরিকল্পনা আমাদের আছে।

গঠনতন্ত্র সংশোধনের বিষয়গুলো তুলে ধরেন গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটির চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দিন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জালালাবাদ ভবন ট্রাস্ট। তিন ক্যাটাগরিতে জালালাবাদ ভবন থাকবে। ১. গোল্ডেন সদস্য ১৫ হাজার, প্লাটিনাম সদস্য ১০ হাজার এবং সিলভার সদস্য ৫ হাজার। এই সব অর্থ এককালীন পরিশোধ করতে হবে। কার্যকরি কমিটির সংখ্যা ২৫। মেয়াদকাল ৩ বছর। কোষাধ্যক্ষ বাংলাদেশে থাকায় কোষাধ্যক্ষের রিপোর্ট উপস্থাপন করেন মইনুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের এই ভবনের মূল্য এখন ১.৫ মিলিয়ন ডলার। এ ছাড়াও ব্যাংকের এবং ভবনের মর্গেজ, মামলার বিষয়াদি তুলে ধরেন। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মইনুল ইসলাম। সবশেষে সভাপতি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সাধারণ সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

শেয়ার করুন