২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৪:৪৬:১৭ পূর্বাহ্ন


মার্কিন নীতির কঠোর সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-১০-২০২২
মার্কিন নীতির কঠোর সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


শক্তিধর আমেরিকান প্রশাসনের কিছু নীতির কঠোর সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান ও  জাতিসংঘ অধিবেশন যোগদানে ১৮ দিনের সফর শেষ করে দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে ওই সমালোচনা করেন তিনি। অন্যদিকে জাতিসংঘের ভাষণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিশ্ব বিবেকের কাছে আমার আবেদন, অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ, স্যাঙ্কশন বন্ধ করুন। শিশুকে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা দিন। শান্তি প্রতিষ্ঠা করুন।’ প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে, সংঘাতের মূল কারণগুলো সমাধান না করে আমরা শান্তি বজায় রাখতে পারি না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইউক্রেন ও রাশিয়ার সংঘাতের অবসান চাই। নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে একটি দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে নারী, শিশুসহ ও গোটা মানবজাতিকেই শাস্তি দেয়া হয়। এর প্রভাব কেবল একটি দেশেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং সকল মানুষের জীবন-জীবিকা মহাসংকটে পতিত হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। মানুষ খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। বিশেষ করে, শিশুরাই বেশি কষ্ট ভোগ করে। তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে হারিয়ে যায়। 

ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক মানুষ যে ক্ষতিগ্রস্ত সেটা বন্ধের আহ্বান জানান তিনি। ওই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আমেরিকার স্যাঙ্কশন দেয়ার ফলে রাশিয়া থেকে পণ্য আমদানিতে সমস্যা নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। 

তবে এবার আমেরিকাকে আরেক হাত নিয়েছেন বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শক্তিশালী বলে সাহায্য সহযোগিতা করে বলেই সমালোচনা করা যাবে না বা সত্যকে সত্য না বলে চুপ করে থাকতে হবে- এমন নীতি প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নয়। স্পষ্ট করে সমালোচনা করেই অভ্যস্ত। সেটা যাকে নিয়ে করেন সে যতো বড়ই হোক না কেন।  

র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গ 

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-এর ওপর মার্কিন স্যাঙ্কশন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমেরিকার পরামর্শেই র‌্যাব সৃষ্টি হয়েছে। আমেরিকাই র‌্যাবকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। র‌্যাবের অস্ত্রশস্ত্র, হেলিকপ্টার এমনকি তাদের ডিজিটাল সিস্টেম, আইসিটি সিস্টেম সবই আমেরিকার দেয়া। এ বাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া কি সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়া? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমেরিকা যেভাবে নিষেধাজ্ঞা দেয় বা কথা বলে বা অভিযোগ আনে আমার একটাই কথা, যেমন আপনারা ট্রেনিং দিয়েছেন, তেমন তারা কার্যক্রম করেছে। আমাদের করার কী আছে? 

সন্ত্রাস দমনে কী আমেরিকা নাখোশ? 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা র‌্যাব প্রসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা প্রসঙ্গে বলতে যেয়ে বলেন, ‘আমরা যাদের দিয়ে এ দেশের সন্ত্রাস দমন করেছি, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার অর্থ কী। সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়া? আমার এটাও প্রশ্ন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যে, তাহলে সন্ত্রাস দমনে কি তারা নাখোশ? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে র‌্যাব হোক, পুলিশ হোক বা যে কেউই অপরাধ করে তার কিন্তু বিচার হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশ ইচ্ছেমতো গুলি করে মারলেও তাদের কিন্তু সহসা বিচার হয় না। শুধু একটা বিচার হলো, যখন আমেরিকার লোক সবাই আন্দোলনে নামলো। তখন ওই একটাই বিচার সারাজীবনে তারা করতে পেরেছে। তারা তো কথায় কথায় গুলি করে মেরে ফেলে দেয়।’ 

গুম খুন নিয়ে ওঠা প্রশ্নের জবাবে 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের কতজন বাঙালি মারা গেছে। সেখানে কিন্তু তারা কিছু বলে না। সে কথাগুলো আমি স্পষ্ট করে তাদের বলেছি। আমি কিন্তু বসে থাকিনি। আমি মনে করি এটা আমাদের বলার কথা। দ্বিতীয় কথা যে কয়টা আন্তর্জাতিক সংস্থা খুব তুললো গুম, খুন। গুমের হিসাব যখন বেরোতে শুরু করলো তখন দেখা গেল জিয়াউর রহমানের আমলেই শুরু, তারপর থেকে তো চলছেই। তারপর যখন আমরা তালিকা চাইলাম ৭৬ জনের তালিকা পাওয়া গেল। আর এ ৭৬ জনের মধ্যে কী পাওয়া গেল আপনারাই ভালো জানেন।’ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর যে তালিকা আছে সে তালিকায় দেখা যাচ্ছে, ভারত থেকে কিছু নাগরিক পলাতক আসামি। তাদের নামও সেই তালিকায়। এটা কেমন করে হয়? আবার এরকমভাবে বেশকিছু নাম আছে, যারা আমেরিকাতেই লুকিয়ে আছে। সে রকম তথ্যও আছে। সে বিষয়গুলোও আমরা তাদের সামনে তুলে ধরেছি যে, এই যে গুম গুম করেন, তাহলে সেটা দেখেন কী কারণে। 

‘নিজেদের ব্যর্থতার কথা তারা বলে না’

যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আমেরিকার সমালোচনা করে বলেন, আফগানিস্তানের তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সেই তালেবানের হাতেই ক্ষমতা দিয়ে চলে এলো আমেরিকার সেনারা। বাইডেন সাহেব তুলে নিয়ে গেলেন সবাইকে। আবার সেই রাষ্ট্র চলে গেল আফগানিস্তানে তালেবানদের হাতে। ৪০ বছর তো তারাই রাজত্ব করলো। নিজেদের ব্যর্থতার কথা তারা বলে না তো। 

ভিয়েতনাম প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘ভিয়েতনামে ৩০ বছর যুদ্ধ করলো। বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের মদদ দিলো। আমরা কিন্তু আমাদের দেশ স্বাধীন করেছি। তাদের নিজেদের চিন্তা নিজেদের করা উচিত।’ এখন আবার আমেরিকা, ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধে সমানে মদদ দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কার ক্ষতি হচ্ছে? সাধারণ মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। একটা দেশ আরেকটা দেশকে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এটা কেমন কথা। আমি আমার বক্তব্যে স্পষ্ট করে বলে এসেছি, যুদ্ধ থামাতে হবে। শুধু অস্ত্র প্রতিযোগিতা আর যুদ্ধ করে শুধু অস্ত্র প্রস্তুতকারী বা অস্ত্র বিক্রিকারী দেশ লাভবান হবে আর আমাদের মতো সাধারণ দেশের মানুষ না খেয়ে মরবে, কষ্ট পাবে। শুধু বাংলাদেশ কেন, ইউরোপের মানুষ তো কষ্টে আছে। আজকে ব্রিটেনে বিদ্যুতে, চুলাও জ্বলে বিদ্যুতে। আমাদের তো তা না। আমেরিকারও একই অবস্থা। প্রত্যেক জিনিসের দাম বেড়েছে।’

শেয়ার করুন