১৬ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০৫:৪০:৪১ অপরাহ্ন


‘জরুরি অবস্থা’
ভাসমান অভিবাসীদের ঢল নেমেছে নিউইয়র্কে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-১০-২০২২
ভাসমান অভিবাসীদের ঢল নেমেছে নিউইয়র্কে নিউইয়র্কে অভিবাসীরা


বাইডেন প্রশাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশনে নাজুক অবস্থা। প্রতিদিন বাধাহীনভাবে অবৈধ ইমিগ্র্যান্টরা আমেরিকায় প্রবেশ করছে। আর সীমান্ত স্টেট থেকে এই সব অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটনসহ অন্য বাসে করে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। যে কারণ এসব স্টেটের পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়েছে। দলে দলে অভিবাসীর আগমন ঘটায় নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস বিশ্বের রাজধানীখ্যাত এবং জাতিসংঘের শহর হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্ক সিটিতে ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছেন।

গত ৭ অক্টোবর সিটি হলে সহকর্মীদের পাশে নিয়ে এ ঘোষণা প্রদানকালে মেয়র বলেছেন, ইতিমধ্যেই ১৭ হাজার অভিবাসীকে টেক্সাস থেকে বাস ভরে পাঠানো হয়েছে। আরো লাখ খানেক পাঠানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে। হঠাৎ করে আসা এতো মানুষকে আবাসন সুবিধা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। গৃহহীনদের জন্য যে সব আশ্রয় কেন্দ্র ছিল সেগুলো আগে থেকেই পূর্ণ হয়ে আছে। নতুন করে ভাসমান তাবু তৈরি করা হচ্ছে।

মেয়র বলেন, আমরা ব্রঙ্কসে অর্চার্ড বিচ পার্কিং লটে অস্থায়ী একটি শিবির নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। সেটি নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বন্যার পানিতে তা ভেসে যাবার আশঙ্কা থাকায় পরিকল্পনাটি স্থগিত রেখে র‌্যান্ডেল আইল্যান্ডে একটি শিবির নির্মাণের কথা ভাবছি। 

মেয়র বলেন, এতো বেশি মানুষের আগমণ ঘটায় বিদ্যমান বাজেটে কুলাচ্ছে না। চলতি অর্থবছর এসব অভিবাসীর আবাসন-খাবার-শিশুদের স্কুলে যাতায়াত ব্যবস্থায় কমপক্ষে এক বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হবে। ফেডারেল এবং স্টেট থেকে অর্থ-সহায়তা ব্যতিত কোনো কিছুই করা সম্ভব হবে না। এ জন্য মেয়র অ্যাডামস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং স্টেট গভর্নর ক্যাথি হোকুলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন অবিলম্বে অর্থ বরাদ্দের জন্য। একইসাথে এসব অভিবাসীর মধ্যে যারা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করবেন, তাদেরকে দ্রুততম সময়ে ওয়ার্ক পারমিট প্রদানের একটি বিল কংগ্রেসে পাশের ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এরিক অ্যাডামস। 

মেয়র বলেন, এ নিয়ে সময়ক্ষেপণের কোনোই অবকাশ থাকতে পারে না। নভেম্বরের ৮ তারিখ মধ্যবর্তী নির্বাচনে অভিবাসনের এই ইস্যুটি ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ অবস্থায় নিউইয়র্কের ডেমোক্রেট মেয়র এরিক অ্যাডামসের এই জরুরি অবস্থা ঘোষণা নিয়েও নানা বিতর্ক শুরু হয়েছে। কারণ মধ্যবর্তী নির্বাচনের দিন নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকুলেরও পুনর্নির্বাচনের ভোট হবে। সামগ্রিক অবস্থার আলোকে মেয়র অ্যাডামস উল্লেখ করেন, বাইডেনকে পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে। 

নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নরের আওতায় অনেক খালি জায়গা রয়েছে, সেগুলোর অনুমতি পেলে জরুরি এই প্রয়োজনে আশ্রয়-শিবির নির্মাণ করা যেতে পারবে বলে উল্লেখ করেছেন সিটি মেয়র। তবে তিনি এসব পতিত জমি সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাননি। মেয়র অবশ্য তার অফিসের মাধ্যমে ওইসব পতিত ভ‚মির ব্যাপারে বিস্তারিত অনুসন্ধান শুরু করেছেন। এর আগে ৫ অক্টোবর নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের স্পিকার আদ্রিয়েনে অ্যাডামস এবং কাউন্সিলের ইমিগ্রেশনবিষয়ক কমিটির চেয়ার শাহানা হানিফসহ কয়েকজন নির্বাচিত প্রতিনিধি আবাসন সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্যে সিটির হোটেল-মোটেলের কক্ষ ভাড়ার কথা বলেছেন। এমন প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে মেয়রও জানতে চেয়েছেন ওইসব হোটেল-মোটেলের নাম-ঠিকানা।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে নেমেছে ভাসমান অভিবাসীদের ঢল। গত ছয় মাসে নিউইয়র্ক সিটিতে এসে জড়ো হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার অভিবাসী। শূন্য হাতে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত পেরিয়ে টেক্সাসে প্রবেশ করেছে এবং টেক্সাসের অভিবাসী-বিরোধী রিপাবলিকান প্রশাসন তাদের স্টেটের খরচে বাস ভাড়া করে ডেমোক্রেট স্টেটগুলোর বড় বড় সিটিতে পাঠিয়ে দিচ্ছে।

নিউইয়র্ক সিটির পক্ষ থেকে তাদের বড় আশ্রয়ের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে খাদ্য সরবরাহ, বস্ত্র ও চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারণ এসব অভিবাসী কার্যত গত ছয় মাসে টেক্সাস থেকে নিউইয়র্ক সিটিতে ১৪ হাজার ৬০০ ভাসমান অভিবাসী এসে পৌঁছেছেন। তাদের মধ্যে ১১ হাজারই সহায় সম্বলহীন। ফলে সিটিকে তাদের সবকিছুর যোগান দিতে হচ্ছে। গত মঙ্গলবার আরো ৬টি বাস ভর্তি অভিবাসী এসে পৌঁছেছে পোর্ট অথরিটি বাস টার্মিনালে। মেয়র অ্যাডামস এ পরিস্থিতিকে একটি মানবিক সংকট বলে বর্ণনা করেছেন এবং দ্রুত সমাধান কামনা করেছেন। বিভিন্ন স্থানে বড় বড় তাবু টানানো হচ্ছে। ক্রুজশিপে ইমিগ্র্যান্টদের অস্থায়ীভাবে রাখার প্রস্তাবও এসেছে। কিন্তু অভিবাসীবান্ধব প্রবক্তারা নবাগত অভিবাসীদের জন্য গৃহীত ব্যবস্থাকে অপ্রতুল বলে সিটিকে আরো উদারভাবে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন।

সীমান্ত অতিক্রম করার পর সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ডিটেনশন সেন্টারে থাকাকালে তারা কোথায় যেতে আগ্রহী জানতে চাওয়া হলে অনেকের গন্তব্য টেক্সাসের কোনো সিটির কথা জানিয়েছেন। তবে টেক্সাসে কাউকে রাখা হয়নি। টেক্সাস যেহেতু তাদের স্থান দেয়নি অতএব উদ্ভ‚ত পরিস্থিতিতে তারা তাদের অগ্রাধিকার গন্তব্য হিসেবে নিউইয়র্কের কথাই বলেছেন। টেক্সাস প্রশাসন মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে যেসব ইমিগ্র্যান্টকে ডেমোক্রেট সিটিগুলোতে পাঠিয়েছে তাদের সিংহভাগই এসেছে নিউইয়র্ক সিটিতে। অভিবাসীদের জন্য সিটির দায়িত্ব থাকার কথা মেয়র এরিক অ্যাডামস স্বীকার করলেও এতো বিপুল সংখ্যক অভিবাসীর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া সিটির জন্য দুর্বহ হয়ে উঠেছে। এখন এটি শুধু সিটির সমস্যা নয়, ডেমোক্রেটদের জন্য এক রাজনৈতিক সংকটে পরিণত হয়েছে। কারণ ডেমোক্রেটদের ইমিগ্রেশন নীতিকে রিপাবলিকানরা কখনো মেনে নেয়নি এবং রিপাবলিকানরা তাদের কট্টর ইমিগ্রেশন নীতি মেনে নিয়ে সে অনুযায়ী, কর্মপন্থা গ্রহণের জন্য চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই অভিবাসীদের সরাসরি ডেমোক্রেট সিটিতে পাঠিয়ে দেয়ার নজিরবিহীন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ডেমোক্রেটদের প্রতি বিদ্রুপ হিসেবে।

শেয়ার করুন