২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০৩:০৪:২৮ অপরাহ্ন


তথ্য ও সম্প্রচার সচিবকে অবসরে পাঠানোতে গুঞ্জন
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-১০-২০২২
তথ্য ও সম্প্রচার সচিবকে অবসরে পাঠানোতে গুঞ্জন মকবুল হোসেন


নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ডিসি-এসপিদের বাগবিত-ার রেশ কাটতে না কাটতেই একজন সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো নিয়ে সচিবালয় পাড়া থেকে শুরু করে সর্বত্র ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। চাকরির মেয়াদ অন্তত এক বছর বাকি থাকতে বাধ্যতামূলক অবসর কেন? এ প্রশ্ন সর্বত্র। অবশ্য সরকারি চাকরির ২০১৮-এর ধারা ৪৫ অনুসারে কোনো সরকারি কর্মচারীর চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর যেকোনো সময় সরকার জনস্বার্থে প্রয়োজন মনে করলে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই তাকে চাকরি থেকে অবসর দিতে পারবে। তবে যেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। মকবুল হোসেন ২০২১ সনের ৩১ মে তথ্য ও সম্প্রচার সচিব পদে নিয়োগ পান। এর ঠিক আগে তিনি যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদফতরে রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ১০ম ব্যাচের কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন মকবুল। গত রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে ওই অবসরে পাঠানোর কথা জানানো হয়। 

এদিকে কী কারণে চাকরির মেয়াদ থাকার পরও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হলো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের এক সচিবকে এ নিয়ে সরকার পক্ষ থেকে কোনো ইনফরমেশন দেয়া হচ্ছে না। তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এমন ঘটনা সরকারের মধ্যে অতীতেও ঘটেছে। এর পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দিতে পারবে।’ 

সচিব মকবুল হোসেনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর পরের দিন সোমবার এটা নিয়ে সবচে বেশি আলোচিত হয়েছে। এ ব্যাপারে মকবুল হোসেন তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এর মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিল গত মার্চে ইংল্যান্ড সফরে তিনি বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন কিনা সে সংক্রান্ত। এটা তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি কখনই তারেক রহমানকে সরাসরি দেখেননি। তবে টিভিতে দেখেছেন। মো. মকবুল হোসেন আরো বলেন, ‘একটা কথা আছে, হাতি যখন পাঁকে পড়ে, চামচিকাও লাথি মারে! আমি তারেক রহমানকে কোনোদিন দেখেছি বলে মনে হয় না। তাকে দেখার ইচ্ছাও আমার নেই।’

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে একটা দূরত্বের বিষয়ও উঠে আসছে। তবে সেটাও তিনি নাকচ করে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘মানুষ অনেক কথাই বলে। অনেক কিছুই শোনা যায়। শোনা কথা বিশ্বাস না করাই ভালো। আমার পক্ষ থেকে মন্ত্রীর সঙ্গে কেন দূরত্ব থাকবে? আমরা তো সবাই মিলেই কাজ করি। দূরত্বের কথা কেন আসছে আমি জানি না। আমি উনাকে সম্মান করি।’

মকবুল এ সময় বলেন, ‘আমাকে কেন অবসরে পাঠানো হলো আমি তা জানি না। যেহেতু এটি সরকার পারে, আইনের ভেতরেই পারে, সেজন্য এটি কার্যকর।’ কয়েকটি মিডিয়ায় অনুমান নির্ভর খবর বেড়িয়েছে যে, কোনো কারণে তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সচিবের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আবার লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তথ্যসচিব সাক্ষাৎ করেছেন এমন দাবিও করছেন অনেকে।

মকবুল অবশ্য বলেন, তাঁর ওপর যে সব অভিযোগ উঠেছে সেগুলো বস্তুনিষ্ঠ হলে প্রকাশ করার জন্য। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি জানি না, কেন আমাকে অবসরে পাঠানো হলো! কিন্তু সরকারের এ রাইট আছে। এ বিষয়ে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে অতৃপ্তি দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। প্রত্যেকটি মানুষ নিজেই সবচেয়ে বড় বিচারক। সুতরাং আমি সেই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে সবসময় প্রস্তুত।’ 

মন্ত্রীর সঙ্গে দূরত্ব বা সরকারের নীতির সঙ্গে অসঙ্গতি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার জানা মতে নেই। আমি যতোদিন এখানে কাজ করেছি, সততার সঙ্গে করেছি, নিষ্ঠার সঙ্গে করেছি, সরকারকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। আমার জ্ঞানের ভেতর নেই, আমার কোনো অপরাধ ছিল কি না বা কোন অপরাধের কারণে অবসরে দেয়া হয়েছে। যেহেতু এটি সরকার পারে, আইনের ভেতরেই পারে; সেজন্য এটি কার্যকর।’

তিনি আরো বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তার একটা প্ল্যান থাকে। আমরা যারা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করি তারা এটা মানি। আমার সরকারি চাকরির রিজিক এই পর্যন্তই ছিল। এর বেশি যাওয়ার সুযোগ নেই।’ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যাপারে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বলার আছে কি না, জানতে চাইলে মকবুল হোসেন বলেন, ‘এটি আপনারা সাংবাদিক হিসেবে অনুসন্ধান করতে পারেন। সরকারবিরোধী কোনো অ্যাকটিভিটিজে আমার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল কি-না? যদি থেকে থাকে সেটি আপনারা প্রচার করতে পারেন, আমার পক্ষ থেকে কোনো অসুবিধা নেই।’

এখানে যে প্রশ্নটা উঠে আসছে সেটা লন্ডনে অবস্থিত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ। কিন্তু যদি করেও থাকে তাহলে এটা কী আসলেই অপরাধ? তারেক রহমান একজন রাজনীতিবিদ। তার সঙ্গে দেখা হওয়া অপরাধ যদি হয়, তাহলে মার্চের সে ঘটনায় শাস্তিটা কেন অক্টোবরে এসে হঠাৎ তিনি পাবেন? 

তবে এ প্রসঙ্গ নিয়ে চলমান নানা বিশ্লেষণ। সামনেই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। সরকারবিরোধী পক্ষ ব্যাপক শক্তিমত্তা নিয়ে নেমে গেছে মাঠে। যা অনুপুস্থিত ছিল ২০১৪ ও ২০১৮ নির্বাচনে। ফলে আগামী নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক টেনশন সর্বমহলে। ইতিপূর্বেও লক্ষ করা গেছে যে, গুরুত্বপুর্ণ নির্বাচনের আগে সচিবালয় থেকে একটা সরকারবিরোধী পদক্ষেপ মাঠে নেমে যাওয়া। যেটা মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও অন্যান্য সচিবরা করে এসেছেন গণতন্ত্র মঞ্চ, বিভিন্ন ব্যানারে। আগামী দ্বাদশ নির্বাচন নিয়েও সরকার যথেষ্ট সতর্ক। সচিবালয় থেকে কোনো কিছু না হয় সেটার দিকেও তারা তীক্ষè নজর রাখবেন সেটাই স্বাভাবিক। মকবুল হোসেনের ঘটনার আড়ালে যে অমন কিছু নেই এটাও ভাববার বিষয়। বিষয়টা স্পর্শকাতর। কারণ মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর আগে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো এটা অন্যান্য সচিব ও সচিব পদমর্যদার চাকরিজীবীদের জন্যও একটা সতর্কবাণীও বটে। সরকার এটাও জানে এ নিয়ে সচিবদের মধ্যে একটা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে। তবুও তারা এমন উদ্যেগ নিয়েছেন জনস্বার্থের খাতিরে। 

এমনিতেই সচিবদের ওপর অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়ায় বেশ ক’মাস আগে সংসদে তুমুল আলোচনা সমালোচনা করেন খোদ সরকার দলের এমপি রা। কারণ বিভিন্ন এলাকায় সরকারি কাজগুলো সবিচতুল্যদের মাধ্যমেই করানো হয়েছিল। এরপরও সরকারের শীর্ষমহল সচিবদের ওপর আস্থা রেখেই দেশের উন্নয়নে অনেক কাজ এগিয়ে নিতে তাদের সহায়তা নেন। সে সকল সচিবদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে, সেটা তারাও চাইবেন না। তবুও এ ঘটনার পেছনে কী অন্তর্নিহিত রয়েছে সেটা জানতে হয়তো আরেকটু সময় লাগবে।

শেয়ার করুন