এক সময় ছোট পর্দার শীর্ষ নায়কদের একজন বনে যান মাহফুজ আহমেদ। তারপর পথচলা শুরু করেন চলচ্চিত্রে। হুমায়ুন আহমেদের ছবি দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক, শাবনুর, পূর্ণিমা, বিপাশা হায়াত, শমী কায়সার, তারিন, অপি করিমদের সঙ্গে অসংখ্য কাজ করলেও দর্শক যেন তাকে ভুলতেই বসেছিলেন। কারণ- দীর্ঘ বিরতি! এ বিষয়ে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাতকার নিয়েছেন আলমগীর কবির
প্রশ্ন: দীর্ঘদিন পর অভিনয়ে ফিরলেন, তা কি শিল্পীসত্তার তাগিদে, নাকি ভালো কাজের সুযোগ বেড়েছে এখন?
মাহফুজ আহমেদ: শিল্পীসত্তা কিনা জানি না, তবে সবসময় আমি ভালো কাজের অপেক্ষায় থেকেছি। ভালো কাজ করার জন্য ক্ষুধার্ত ছিলাম। এ সময়জুড়ে কে ভালো কাজ করে, কাজ দেখে আপডেটেড থাকতাম। প্রহেলিকার মনা চরিত্রের মতো ক্যামেরার সামনে টেনে নিয়ে আসতে পারে এমন অফার পাইনি বলে এতদিন দূরে ছিলাম। প্রিপারেশনের মধ্যেই ছিলাম। মনা চরিত্র করার পরপরই ওদের সিরিজের অফার পেলাম। এটা আমাকে আরেকটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।
প্রশ্ন: এবার ঈদের ছবিগুলো নিয়ে একটা উৎসব শুরু হয়ে গেছে। এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
মাহফুজ আহমেদ: এটাই তো বাঙালির সংস্কৃতি। বহু বছরের রীতি এটা, ঈদে সিনেমা মুক্তি পাবে আর দর্শকরা দলবেঁধে হলে যাবেন। আমরা শিল্পীরাও এটাই চাই। প্রতিটি সিনেমাপ্রেমীরা এটা চান। হল মালিকরাও চান। সিনেমার মঙ্গল যারা প্রত্যাশা করেন, তারা এটাই চান। কিন্ত ভালো সিনেমা না মুক্তি পেলে দর্শকরা তখন মুখ ফিরিয়ে নেয়। এবার ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোর প্রতি দর্শকদের যেরকম ভালোবাসা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা খুব ইতিবাচক। আমার খুব ভালো লাগছে। বাংলাদেশের সিনেমা হলের এই সুন্দর পরিবেশেটাই দেখতে চেয়েছিলাম, তা হয়েছে। এ জন্য দর্শকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
প্রশ্ন: প্রহেলিকা থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
মাহফুজ আহমেদ: দর্শকদের কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমার মায়ের বয়সী দর্শকরা প্রহেলিকা দেখে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন, আমার জন্য মনভরে দোয়া করেছেন, আমি মনে করি জীবনে যদি কোনো পূণ্য করি তার প্রাপ্য ওটা। পরিবার নিয়ে মানুষজন প্রহেলিকা দেখতে আসছেন। তারা ভূয়সী প্রশংসা করছেন। এই মুগ্ধতার ভাষা আমার জানা নেই। ৮ বছর পর অভিনয়ে ফিরেছি। কী হবে, কী হবে না এই রকম না ভেবে মন দিয়ে শুধু অভিনয়ই করেছি। কিন্তু প্রহেলিকা আমাকে দিয়েছে মানুষের ভালোবাসা। আমার জীবন এখন প্রহেলিকাময়।
প্রশ্ন: শাকিব খান, আফরান নিশোর সিনেমা মুক্তি পেয়েছে এবারের ঈদে। ওনাদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন?
মাহফুজ আহমেদ: দেখুন, শাকিব খানের সঙ্গে আমার খুব ভালো একটা সম্পর্ক। একজন মানুষ একাই বছরের পর বছর ধরে ঢাকাই সিনেমাকে টেনে নিয়ে আসছেন। তার অবদান অনেক। এখনো অভিনয় করছেন। তার একটা বিশাল ভক্ত আছে। আমি মনে করি, শাকিব খান কমার্শিয়াল সিনেমার অপরিহার্য নায়ক। এই কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তার প্রিয়তমার জন্য শুভকামনা। অন্যদিকে আফরান নিশো কাছের ছোট ভাই। ভীষণ ভালো অভিনয় করে। তার প্রথম সিনেমা ‘সুড়ঙ্গ’ মুক্তি পেয়েছে। দর্শকরা দেখছেন। নিশোর জন্য ভালোবাসা। সুড়ঙ্গ নিশোর জন্য বড় একটি উপহার। আমার কথা হচ্ছে শত ফুল ফুটতে দাও। ফুল যদি একটিই হতো তাহলে গোলাপ ছাড়া অন্য ফুলের দরকার ছিল না। আমাদের গোলাপ যেমন দরকার, বুনোফুলও দরকার।
প্রশ্ন: কোন ধরনের সিনেমা এদেশে দরকার?
মাহফুজ আহমেদ: সব ধরনের সিনেমা এ দেশে দরকার। কেউ নাচে-গানে ভরপুর সিনেমা পছন্দ করেন। কেউ সিরিয়াস সিনেমা পছন্দ করেন। কেউ হাসির সিনেমা পছন্দ করেন। কেউ ভালোবাসার সিনেমা দেখতে চান। একই রকম হলে তো হবে না। এবারের ঈদে তাই হয়েছে, ভিন্ন ভিন্ন গল্পের সিনেমা মুক্তি পেয়েছে এবং দর্শকরা তাদের পছন্দের সিনেমাগুলো দেখছেন।
প্রশ্ন: প্রহেলিকা করার পর দর্শকরা ‘মনা’ নামে ডাকছেন, কেমন লাগছে?
মাহফুজ আহমেদ: এটা তো মানুষের ভালোবাসা। অভিনেতা হয়েছি বলেই তারা ডেকেছেন। আমি মনে করি দীর্ঘ অভিনয় জীবনে কিছু ভালো কাজ হয়ত করেছি। ’চৈতাপাগল’ আমার জন্য সেরা একটি কাজ। ‘নুরুল হুদা’ সেরা কাজের একটি। প্রহলিকার মনা চরিত্রটিও সেরা কাজের একটি।
প্রশ্ন: গ্রামে জন্ম ও বেড়ে উঠা, সেই গ্রামকে মিস করেন?
মাহফুজ আহমেদ: গ্রাম আমার সঙ্গেই থাকে। যেখানেই যাই গ্রাম সঙ্গে থাকে। গ্রামকে কখনো ভোলা সম্ভব? বাঁশের সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যাওয়া, বৃষ্টির দিনে বন্ধুরা মিলে কলাপাতা মাথায় দিয়ে স্কুলে যাওয়া, আহারে, সেইসব দিন কি ভুলতে পারব? গ্রাম আমার কাছে প্রেম, ভালোবাসা, সবকিছু। গ্রামের সঙ্গে এখনো আমার দারুণ যোগাযোগ আছে।
প্রশ্ন: আপনি শুরুর দিকে যেমন চাইতেন, সেরকম জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছেন?
মাহফুজ আহমেদ: আমার চৌদ্দগোষ্ঠীতে কেউ নেই যে অভিনয় করে। এই স্বপ্নটা আমার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছেন ইমদাদুল হক মিলন। পরবর্তীতে হুমায়ূন আহমেদ আমাকে তৈরি করেন। আমার পাশে যারা কাজ করতেন, আফজাল হোসেন, হূমায়ুন ফরিদ, সুবর্ণা মুস্তাফা, গোলাম মোস্তফা, আবুল হায়াত, আবুল খায়ের উনারা কী সহজ-সরল অভিনয় করেন। যখন মনে হলো অভিনয় করতে পারছি না, তখন থিয়েটার স্কুলে ভর্তি হই। আমি ছিলাম প্রথম ব্যাচের ছাত্র। পরে পদাতিক নাট্যগোষ্ঠীতে যোগ দিই। কিন্তু আমি স্টেজে কাজ করিনি। যাদের নাম বললাম, তারাসহ অভিনেত্রী বিপাশা হায়াত, শমী কায়সার, তারিন- ওদের প্রশ্রয় পেয়েছি। আমার বেড়ে ওঠায় তাদের অনেক সহযোগিতা ছিল। তারা আমার কাজটা সহজ করে দিয়েছে।
প্রশ্ন: এখনকার কোন নির্মাতাদের কাজ আপনার ভালো লাগে?
মাহফুজ আহমেদ: এই যে মহানগর করেছেন যিনি...আমাদের দেশে একজন আশফাক নিপুণ আছেন। শাওকী, যে কারাগার করেছে। নতুন ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ‘ইন্টার্নশিপ' নামে সিরিজটা বানিয়েছে যে, মুগ্ধ হয়েছি তার কাজে। এরকম আরো অনেক নাম বলতে পারবো। আমি কাজ দেখি। কাজেই মেধাবী ছেলে-মেয়েরা কিন্তু আছে।