২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০৪:২১:৪১ পূর্বাহ্ন


বাধ্যতামূলক অবসর : প্রশাসনে উৎকণ্ঠা
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-১০-২০২২
বাধ্যতামূলক অবসর : প্রশাসনে উৎকণ্ঠা


দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধী দলের বিভিন্ন দাবি দাওয়া ও একের পর এক রাজনৈতিক কর্মসূচি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি অন্যান্য দিকেও কড়া নজর রেখেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। 

বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তারা কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে কী না সেদিকেও কড়া নজর। এরই ধারাবাহিকতায় তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর পর পুলিশের শীর্ষ তিন কর্মকর্তাকেও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। পরপর এ দুই ঘটনায় প্রশাসনে থাকা কর্মকর্তা কর্মচারীদের ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সচিবালয় থেকে শুরু করে পুলিশ মহলেও এ নিয়ে আলোচনা। 

এ ব্যাপারে পত্রিকাতে খবরও বেড়িয়েছে যে আরো দুইশ পুলিশ কর্মকর্তার প্রতি গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। এর সঙ্গে সচিব পর্যায়েও ওই নজরদারি বিদ্যমান এটা পুরানো খবর। কারণ ইদানিং সরকারের বিভিন্ন গোপনীয় বিষয় ফাঁস হয়ে যাচ্ছিল। এগুলো কারা করছে সেগুলো খুঁজতে গিয়েই কিছু নজির তারা উদঘাটনে সক্ষম হয়েছে। যার ফল ওই চারজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো। তবে একটি সূত্র বলছে এমন ঘঠনা আরো ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। অবশ্য সরকার যা করছে সেটা নিয়মের মধ্যে থেকেই করেছে। সরকারি চাকুরির ২৫ বছর পূর্ণ হলে জনস্বার্থে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো যায়। এছাড়াও অন্য ক্ষেত্রে সরকার যদি কাউকে প্রশাসনের জন্য হুমকি মনে করে তার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা রাখেন। সবার আগে জনপ্রশাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ ও সরকারের নীতিতে একাগ্রতা বাঞ্ছনীয়। 

সরকারের পলিসি গোপনে ফাঁস করে দেয়া এটা মোটেও সুখকর সংবাদ নয়। তবে এ কার্য হতে পারে বহু ধরনের। কেউ অর্থের বিনিময়ে করে থাকে। কেউবা তার নিজ স্বার্থে, বা নিজ আদর্শের জন্য করে থাকেন। ইতিপূর্বেও এমনটা ঘটেছে। ‘জনতার মঞ্চ’ নামক যে কর্মকান্ড ঘটেছে সেটা মোটেও কোনো সরকারের জন্যই ভাল ছিলো না। সে সুফল কে পেয়েছে কে পায়নি সেটা মুখ্য না। মুখ্য বিষয় হলো প্রজাতন্ত্রের কর্মচারিকে জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত সরকারের আনুগত্য স্বীকার করে কাজ করে যেতে হবে। সে সরকার যেই হোক না কেন। 

কিন্তু এবার সরকার এব্যাপারে সজাগ। ওই সূত্র বলেছে সরকার যে সকল কর্মকর্তাদের দিকে বেশি নজর দিচ্ছেন তাদের একটা তালিকা ইতিমধ্যে তৈরি করে ফেলেছে। এবং গত ছয়মাস ধরেই তাদের বিভিন্ন কর্মকান্ড, তাদের ফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন কানেকশন থেকে উৎস খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। এরকম কর্মকর্তাদের মধ্যে যাদের জামায়াত শিবির বা বিএনপি’র বা অন্যকোনো দলের সমর্থক রয়েছেন তাদেরও চিহ্নিতকরণের চেষ্টা চলছে। ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে প্রশাসনে ঢোকার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত কোন কোন স্থানে তাদের সম্পৃক্ততা ছিল সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আবার এদের মধ্যে অনেকেই নিরপেক্ষ। 

হয়তো সে কোনো রাজনৈতিক দলের সমার্থক। কিন্তু তার সরকারি দায়িত্বটা পবিত্র আমানত মনে করেই সকল গোপনীয়তা রক্ষা করে কাজ করছেন। তাদেরকেও অহেতুক হয়রানি করা হবে না বলে জানানো হয়েছে। তবে যারা সত্যিকারভাবেই রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে যোগসাজোগ রেখে চলেছেন। বিভিন্ন সময়ে গোপনে, আড়ালে আবডালে মিলিত হয়ে খবর বা তথ্য ফাঁস করা থেকে শুরু করে সরকারের ভবিষ্যত প্লান পরিকল্পনা ফাঁস করার মত ন্যাক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তাদেরকে খুঁজে বের করে হয়তো ছাড় দেয়া হবে না। সেটাই ফাইন্ডআউট করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে ওই রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে।  

সরকার গোয়েন্দা বিভাগ যে সকল উন্নত টেকনোলজি ব্যাবহার করছেন এটাতে অভিযুক্তরা পার পেয়ে যাবার সুযোগ পাবে না। তবে এতে নিরীহরা যেন হয়রানির শিকার না হন সেটাই মূলত প্রত্যাশ। অবস্থা অনুসারে বুঝা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল করলে সাত খুন মাফ আর অন্যদল করলে চাকরিচ্যুতি।

শেয়ার করুন