১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৬:২৫:০৯ পূর্বাহ্ন


দুর্নীতি কলুষিত বিমানের সংকট ঘনীভূত হচ্ছে
জাডিক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৬-২০২২
দুর্নীতি কলুষিত বিমানের  সংকট ঘনীভূত হচ্ছে


 সব দেশের সরকারি বিমান সংস্থা সময়ের সাথে আগুয়ান হয় পেছায়, একের পর এক রুট চালু করে, গুরুত্বপূর্ণ রুটে ট্রিপ বৃদ্ধি করে। কিন্তু সে তুলনায় ক্রমাগত পিছিয়ে যায় শুধুই বাংলাদেশের বিমান। চোখের সামনেই তরতরিয়ে এগিয়ে গেলো সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস, মালয়েশিয়ান এয়ার সিস্টেম, কাতার এয়ারওয়েজ, এমিরেটস, থাই এয়ারওয়েজ। বিমানবন্দরগুলো বিশ্বমানের হওয়ার পাশাপাশি বিমানসংস্থাগুলো বিশ্বমানের হয়েছে তাদের। এমনকি ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনস এবং পিআইএও অনেক এগিয়েছে। কিন্তু মহাদুর্নীতি আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে বিমান এগোয়নি কাক্সিক্ষত গতিতে।

বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রবাসী এখন শিডিউল বিভ্রাট, টিকেট সংগ্রহে সমস্যা, বিমান সেবা, গ্রাউন্ড ব্যবস্থাপনার কারণে বেশি খরচ করে বিদেশি বিমানে দেশে যাতায়াত করে থাকেন। দেশে উন্নয়নের জোয়ার বলে বহুল প্রচার হলেও বিদেশিদের কথা বাদ রাখুন, দেশে ফিরে প্রবাসীরাও নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। 

সমগ্র বিষয়টি বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এবং দায়িত্বে। ঢাকাসহ সকল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিদ্যমান অব্যবস্থা অব্যাহত থাকলে শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করেইবা কি লাভ হবে।

বিমানের বড় দুর্নীতি হয় বিভিন্ন সময়ে বিমান স্বল্পসময়ে লিজ নেয়া, বিমান ক্রয়ে। টিকেট বিক্রয়, নিয়োগ বদলি-বাণিজ্যে। এছাড়া ঢাকা বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হেডলিঙ্গের দায়িত্ব বিমানের ওপর অর্পিত। বিমানের দুর্নীতি, অব্যবস্থা নিয়ে নিয়মিত মিডিয়ায় প্রতিবেদন আসলেও রহস্যজনক কারণে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ কৌশলের কারণে দুর্নীতিবাজরা রয়ে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার আড়ালে। তাই দুর্নীতিবাজরা নতুন দুর্নীতি করছে। 

আমরা সবাই জানি একশ্রেণির তাত্ত্বিকদের আন্দোলনের মুখে আঁড়িয়াল বিলে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনের উদ্যোগ থেকে সরে আসে বর্তমান সরকার। পদ্মাসেতুর পাশাপাশি পড়ায় নতুন বিমানবন্দর তৈরির উদ্যোগ এগোয়নি। আর বিশ্বজোড়া মন্দায়নের প্রেক্ষাপটে এতো বিশাল বিনিয়োগের দিকে বাংলাদেশ এগোনো সমীচীন হবে না। যানজটে স্থবির ঢাকার হৃদয় কেন্দ্রে অবস্থিত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল কতটুকু কাক্সিক্ষত অবদান রাখবে এটি দেখার বিষয়। তবে এটা ঠিক, এটা একটা ভালো উদ্যোগ। বর্তমানে বিমানবন্দরে যে সমস্ত জট,তা এটা চালু হলে কমে যাবার কথা। 

আশা করি, নানা যাতায়াত মাধ্যম মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে, সারফেস রেল, অভ্যন্তরঢু বিমানসংযোগ দিয়ে ঢাকা বিমানবন্দরে আগমন-নির্গমন সহসাই উন্নত হবে। সর্বোপরি বিমানকে সত্যিকার অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের দিয়ে ঢেলে সাজানো হবে। আজ বাদে কাল নিঃসন্দেহে আশপাশে একটি সয়ংসম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গড়ে উঠবে- এ আশা করাই যায় ভবিষ্যতের চাহিদা পর্যালোচনা করলে। 

একটি বিশেষ সার্ভিসের স্বল্প অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের হাতে বিমান এবং বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়কে মুক্ত করা না হলে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মিলন হাবে পরিণত হবার সুযোগ হারাবে। দেশ-বিদেশে বিমানের কার্যক্রমকে মেধাভিত্তিক সংগঠনে পরিণত করা। সেটা কবে হবে সে আশা এখন সাধারণ মানুষের। বিমান মানেই লোকসান গোনে আসছে তারা। 

অথচ অপচয় আছেই। বিশেষ করে গত ২৬ মার্চ ’২২ ঢাকাটরন্টো সরাসরি বিমান চালুর উদ্যোগ নিয়ে যে উচ্চবাচ্য হলো। একটি বিমান সরকারি সব কর্মকর্তা ও তাদের অনেকের পরিবারবর্গ নিয়ে অনটেস্ট গেল টরন্টো সেটার কোনো আপডেট শোনা যাচ্ছেনা। অথচ তখন বলা হয়েছিল সম্ভাব্যতা যাচাই করতে ওই বিশেষ ফ্লাইট, যা ড্রিমলাইনারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তখন কর্তৃপক্ষ আরো বলেছিলেন, জুন থেকে ওই ফ্লাইট নিয়মিত চালু হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে। কিন্তু সেটার কোনো খবর নেই। অগ্রগতির কথাও শোনা যায়না। মে শেষ, জুন তো শুরু। কই সে ফ্লাইট। 

আমরা দেখেছি, ঢাকা-টরন্টো রুটে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করতে চার কোটি টাকার বেশি খরচ হবে বলে সেসময় জানিয়েছিলেন বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘ঢাকা টরন্টো রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা আমাদের জন্য প্রেস্টিজ ইস্যু। পৃথিবীর অনেক দেশ কানাডার সাথে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারেনি, কিন্তু আমরা পেরেছি। এটা আমাদের প্রয়োজন। এই ফ্লাইটে আসা-যাওয়ায় ৪ কোটি টাকার বেশি খরচ হবে।’ 

ঢাকা-টরন্টো রুটে ফ্লাইট চালু নিয়ে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। ‘ঢাকা-টরন্টো ফ্লাইট প্রমোদ ভ্রমণ’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী অবশ্য বলেছিলেন ওইসব কথা। 

বিমানের টরন্টো ফ্লাইট চালুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কানাডার মতো একটি দেশে ফ্লাইট চালুর বিষয়টি অত্যন্ত সম্মানের। এছাড়া প্রবাসী ভাইদের দীর্ঘদিনের চাওয়া ছিল এই ফ্লাইট। আমি আশা করি এই ফ্লাইটের মাধ্যমে দু’দেশের বন্ধুত্ব আরো গভীর হবে। আমি এই ফ্লাইটের সাফল্য কামনা করছি।’ 

লোকসানের ভারে নিউইয়র্ক ফ্লাইট পরিচালনা করা যাচ্ছেনা। অথচ টরন্টোর চেয়ে ইউএসএতে অনেক বেশিবাংলাদেশির আবাসস্থল। সেখানে টরন্টো নিয়মিত ফ্লাইট চালাতে প্রয়োজনীয় যাত্রী পাওয়া যাবে তো? সে প্রশ্নটা উঠেছে, উঠেছে বিমান পরিচালনায় আনুষাঙ্গিক খরচ মিটিয়ে লাভের মুখ দেখা নিয়েও। অতীত অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা না করেই হুট করে টরন্টো ফ্লাইট নিয়ে প্রচুর সমালোচনাও হয়েছে। যার ভালো উত্তর দিতে পারেনি বিমান। এখন নতুন ওই প্রজেক্ট চালু হবে নাকি অঙ্কুরে বিনাশ। নাকি একটি ফ্লাইট পরিচালনার গোটা অর্থই জলে সেটাইবা কে জানে!


শেয়ার করুন