২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৫:৫০:০০ পূর্বাহ্ন


বাংলাদেশ স্ট্রিটে চাঁদরাতে উচ্ছ্বাসের বাঁধ ভেঙেছে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৪-২০২৩
বাংলাদেশ স্ট্রিটে চাঁদরাতে উচ্ছ্বাসের বাঁধ ভেঙেছে বাঁধভাঙা মানুষের উচ্ছ্বাস


বাংলাদেশে একসময় চাঁদরাতটি বেশ জনপ্রিয় ছিল। ঈদের আগের দিন সবাই চাঁদরাত করতো। বাংলাদেশের সেই চাঁদরাতের ঢেউ নিউইয়র্কে এসে পৌঁছেছে। জ্যাকসন হাইটসসহ নিউইয়র্কে যেভাবে চাঁদরাত উদযাপন করা হয় বাংলাদেশে এভাবে চাঁদরাত বর্তমান সময়ে হয় কি না সন্দেহ রয়েছে। বিশেষ করে জ্যাকসন হাইটসের চাঁদরাত সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। গত ২০ এপ্রিল সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটস এলাকাবাসীর উদ্যোগে জেবিবিএ ও ফাহাদ সোলায়মানের সহযোগিতায় জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশ স্ট্রিটে (৭৩ স্ট্রিট) রাস্তা বন্ধ করে আনন্দ উচ্ছ্বাসের চাঁদরাত উদ্্যাপন করা হয়। এছাড়াও নিউইয়র্কে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা জ্যামাইকা, ব্রঙ্কস, ওজনপার্ক, ব্রুকলিনসহ অন্যান্য বাংলাদেশি অধ্যুষিত এবং নিয়ন্ত্রিত এলাকায় চাঁদরাত পালন করা হয়। চাঁদরাতের এসব অনুষ্ঠানে ছিল হাজার হাজার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। বিশেষ করে জ্যাকসন হাইটসের চাঁদরাত ছিল সবকিছুর ঊর্ধ্বে। বরাবরের মতো চাঁদরাতের জন্য পুলিশের অনুমতি নেওয়া হয়। চাঁদরাত মানেই কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতি, আনন্দ, উচ্ছ্বাস, উল্লাস সেই সঙ্গে গান-বাজনা। বাড়তি ছিল আতশবাজি। আতশবাজি নিষিদ্ধ থাকলেও কে শোনে কার কথা। নতুন প্রজন্মের উচ্ছ্বাসে পুলিশি নিষেধাজ্ঞা ছিল উপেক্ষিত। পুলিশ উপস্থিতি ছিল যেন সহযোগিতার জন্য। রাত ১০টা পর্যন্ত সময় থাকলেও বলা যায় ভোররাত পর্যন্ত আনন্দ-উল্লাস, আতশবাজি। পুলিশ নিষেধ করেছিল আতশবাজি হবে না। কিন্তু পুলিশের সামনেই চলে সেই আতশবাজি। পুলিশ যে চেয়ে চেয়ে দেখলো। এতো মানুষের সামনে পুলিশের কিছু করার সাহসও ছিল না। মানুষের অবস্থা দেখে মনে হয়েছিল চাঁদরাত যেন সারারাতের জন্য। গান-বাজনার অনুষ্ঠান রাত সোয়া ১০টায় বন্ধ হলেও বাংলাদেশ স্ট্রিট ছিল লোকে লোকারণ্য। তাদের যেন বাসায় যেতে মানা। বাংলাদেশ স্ট্রিট তাদের দখলে চলে যায়, চলে স্ট্রিটেই বসে গান-বাজনা, আনন্দ-উল্লাস।

সন্ধ্যার পর থেকেই নিউইয়র্কের বিভিন্ন এলাকা থেকে জ্যাকসন হাইটসে মানুষজন আসতে থাকে। যদিও দুপুরের পর থেকেই চলছিল হাতে মেহেদী লাগানো এবং কেনাকাটার বিষয়টি।

পুলিশ প্রিসেক্টের পক্ষ থেকে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেওয়া হয়। এই অনুমতি নিয়েছিলেন জ্যাকসন হাইটস বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফাহাদ সোলায়মান। কিন্তু অনুষ্ঠানটিকে সর্বজনীন করতে দায়িত্ব দেওয়া হয় জ্যাকসন হাইটস এলাকাবাসীকে। এই সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। জ্যাকসন হাইটস এলাকাবাসীর সভাপতি সাকিল মিয়ার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলম নমি ও অনুষ্ঠানের সদস্য সচিব মিয়া মোহাম্মদ দুলালের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে লক্ষ করা যায় সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেবিবিএর উভয় অংশের কর্মকর্তারা। উপস্থিত ছিলেন জেবিবিএর সভাপতি হারুণ ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক ফাহাদ সোলায়মান, অপর অংশের সহসাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, সাবেক সভাপতি শাহ নেওয়াজ, অনুষ্ঠানে স্পন্সর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সরওয়ার খান বাবু, এলাকাবাসীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মীর নিজামুল হক, দেওয়ান মনির, শিল্পী আফতাব জনি, বারী হোম কেয়ারের প্রেসিডেন্ট আসেফ বারী টুটুল, কুইন্স ডেমোক্রেটিক পার্টি ডিস্ট্রিক্ট লিডার অ্যাট লার্জ অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, স্থানীয় পুলিশ প্রিসেক্টের কর্মকর্তাবৃন্দ, কবির চৌধুরী জোসি, মোহাম্মদ মানিক বাবু, হোসেন সোহেল রানা, এম রহমান, সাখাওয়াত বিশ্বাস, আলমগীর খান আলম, শামস জনি, মোহাম্মদ সায়েম উল্লাহ, লিটু চৌধুরী, শফি উদ্দিন মিয়া, মামুন মিয়াজি, হাসান জিলানী, মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, ম্যাক, শাহ চিশতি, শেখ নোমান পলাশ, দেবাশীষ দাস বাবলু, আমিনুর রশিদ বাবু, ড. রফিকত আহমেদ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এ এফ মিসবাহউজ্জামান, ইশতিয়াক রুমি, গোলাম এন হায়দার মুকুট, লায়ন্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট আহসান হাবিব, সাধারণ সম্পাদক হাসান জিলানী প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শাকিল মিয়া, শাহ গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহ জে চৌধুরী, মোহাম্মদ আলম নমি, হারুণ ভুইয়া, আসেফ বারী টুটুল, ফাহাদ সোলায়মান, জামিল আল তাহেরী, সরওয়ার খান বাবু প্রমুখ।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরু হয় ও মোর রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ গানটি পরিবেশন করে প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পী শাহ মাহবুব। তার সঙ্গে সমস্বরে গেয়ে ওঠেন অতিথি এবং দর্শকরা। এর পর একটানা অনুষ্ঠান চলতে থাকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পী কামরুজ্জামান বকুল, আমানত হোসেন আমান, কৃষ্ণাতিথি। টানা তিন ঘন্টার এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঙ্গে হাজার হাজার দর্শক কন্ঠ মিলান এবং ঈদের খুশিতে ঈদ আনন্দ মেলাকে রঙিন করে তোলেন। রাত সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হলেও মানুষের উচ্ছ্বাসে তা মধ্যরাত পর্যন্ত গড়ায়। বাংলাদেশ স্ট্রিটে যে যার মতো করে বসে গাইতে থাকেন, আতশবাজিতে পুরো এলাকা আলোকিত করে তোলেন। যদিও আয়োজকদের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছিল আতশবাজি না করার জন্য। আয়োজকদের সময়সীমার মধ্যে আতশবাজি হয়নি, কিন্তু উচ্ছ্বাস বলে কথা? আনন্দ প্রকাশে বাধা দেবে কে? বাধা ছিল পুলিশের, তারাও বাধা দেয়নি, এমন উচ্ছ্বাসে বাধা দেওয়ার মতো পুলিশ নিউইয়র্কে নেই। অসহায় পুলিশও ছিলেন যেন আনন্দের ভাগীদার। তরুণ প্রজন্মের উন্মাদনায় পুরো জ্যাকসন হাইটস এলাকা যেন থমকে দাঁড়িয়েছিল।

শেয়ার করুন