২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৩:১৪:১৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :


সরকারের ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতার কারণ
ঢাকা ‘বিস্ফোরণমুখ’ ও ‘বিপদজনক’ নগরী- মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৩-২০২৩
ঢাকা ‘বিস্ফোরণমুখ’ ও ‘বিপদজনক’ নগরী- মির্জা ফখরুল


সরকারের ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতার কারণেই ঢাকা ‘বিস্ফোরণমুখ’ ও ‘বিপদজনক’ নগরীতে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার সকালে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের র‌্যালীপূর্ব সমাবেশে গতকালে সিদ্দিকবাজারে সংঘটিত বিস্ফোরণের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ গত কয়েকদিন ধরে দেখছেন শুধু বিস্ফোরণ হচ্ছে। কিভাবে বিস্ফোরণ হচ্ছে? ওই ভবনের যে নির্মাণ কাজ বা সেখানে যে রক্ষনা-বেক্ষনার কোনো দেখাশুনা হয় না, নজরদারি নাই। সরকারের যে ডিপার্টমেন্টগুলো আছে যাদের এসব ভবন দেখাশুনা করার কথা, যাদের নজরদারি করার কথা তারা কাজ করে না-সব দুর্নীতির সাথে জড়িত।  যার ফলে এই ভবনগুলোতে নিরাপত্তা নেই বিস্ফোরণকে প্রতিরোধ করবার, আগুনকে প্রতিরোধ করবার কোনো ব্যবস্থা না থাকার কারণে আজকে এই ধরনের ভয়াবহ বিস্ফোরণ সংগঠিত হয়ে সেখানে মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, শতাধিক মানুষ আহত হচ্ছে এবং ঢাকা মহানগর এখন একটা বিস্ফোরণমুখ নগরীতে পরিণত হয়েছ্, সবচাইতে বিপদজনক নগরীতে পরিণত হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ শুধু তাই নয়, ঢাকা মহানগরের যে বাতাস সেই বাতাসকে বলা হচ্ছে, পৃথিবীর সবচাইতে দুষিত বাতাস। ইংল্যান্ডে প্রকাশিত ইকোনোমিক্সট পত্রিকা সেখানে বলা হচ্ছে যে, এই দুষিত মহানগরীকে ছাড়িয়েও দুর্নীতির যে তোষন, দুর্নীতির যে বাতাস- এটা এখন বাংলাদেশকে পুরোপুরি গ্রাস করে ফেলেছে।”

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল বর্ণাঢ্য র‌্যালী উপলক্ষে এই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। মহিলা দলের নেতা কর্মীরা বেগুনি শাড়ি, বেগুনি বেলুন ও খালেদা জিয়ার ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে এই শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। শোভাযাত্রাটি নাইটেঙ্গল রেস্তোরাঁর মোড় হয়ে আবার নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়।

‘অনুন্নত দেশের তালিকা প্রসঙ্গে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এরা(সরকার) সব সময় বলতে থাকি যে, এথন আমরা নাকী উন্নয়নশীল দেশ। উন্নয়নশীল দেশে যাচ্ছি। আজকে ইনকিলাব পত্রিকায় দেখলাম যে, জাতিসংঘের সম্মেলন কাতারের দোহাতে হয়ে গেলো সেখানে অনুন্নত দেশের যে তালিকা সেই তালিকাতে বাংলাদেশের নাম হচ্ছে দ্বিতীয়।  কোথায় গেলো উ্ন্নয়ন, কোথায় গেলো ফানুস। এতো যে সব সময় গলাবাজি করছে আওয়ামী লীগের নেতারা-মন্ত্রীরা যে বাংলাদেশ এখন সিঙ্গাপুর হয়ে গেছে, মালয়েশিয়া হয়ে গেছে। গেলো কোথায়? আমার প্রশ্ন মানুষকে প্রতারনা করে ভুল বুঝিয়ে এভাবে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন, তাদের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন, নিজেদের জীবনধারণ থেকে বঞ্চিত করছেন।”

বিভিন্ন খাতে বিশেষ করে পোষাক শিল্পে শুধুমাত্র নারীদের অবদানের কারণেই রেমিট্যান্স আসছে বলে বাংলাদেশের নারীদের অভিনন্দন জানান বিএনপি মহাসচিব। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে মহিলা দলকে আরো সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি নারীদের অধিকার আদা্য়ে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাদের মহিলারা যাতে নির্যাতিত না হয়, তারা অন্যায়ভাবে নির্যাতিত না হয় সে ব্যাপারে আপনাদের সোচ্চার হতে হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারীরা নির্মমভাবে নির্যাতিন করা হচ্ছে। কে করছে? দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকারি দলের মহিলারাই করছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে আপনাদের সোচ্চার হতে হবে।”

বতর্মান সরকারের আমলে নারীদের ওপর নির্যাতনের চিত্রও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘‘ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কিভাবে ওরা নির্যাতন করছে-আপনারা দেখছেন। তিনি অসুস্থ তার চিকিতসার সুযোগ পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে না। তার যেটা প্রাপ্য সেই জামিন থেকে তাকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে।”

‘‘ আজকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নারীরা যেভাবে নির্যাতিত হয়েছেন আর অতীতে কখনো এভাবে নির্যাতিত হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই।”

‘দূ:খ হয় নারীরা কেউ প্রতিবাদ করলো না’

নিজের দূঃখের কথা প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সময়ের বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ফখরুল বলেন, ‘‘ আমার একটা দূঃখ আছে। এই যে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যখন তাকে নির্যাতন করা হলো আমার দূঃখ হয় বাংলাদেশের একটা মহিলা সংগঠন তারা কেউ বের হয়ে আসেনি, প্রতিবাদ করেনি। এই কাজগুলো করতে হবে আমাদের(মহিলা দল), আপনাদের করতে হবে। যেখানে নারীদের ওপর নির্যাতন হবে, আপনাদের বেরিয়ে আসতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। এখানে অনেক নারী অধিকার সংগঠন আছে, অমুক অধিকার সংগঠন আছে তাদের কেউ কিন্তু মেয়েরা যখন ধর্ষিতা হয়, মেয়েরা যখন নির্যাতিত হয় তাদের পক্ষে একটাও প্রতিবাদ করে না।”

তিনি বলেন, ‘‘ অন্যায়-অনিয়মের প্রতিবাদ না করলে কিভাবে আমরা অধিকার আদায় করব, কিভাবে আমরা আমাদের ন্যায্য দাবি আদায় করবো। মহিলা দলের কাছে অনুরোধ থাকবে, আপনারা সেই পথ দেখান, আপনারা সেই প্রতিকৃতের ভুমিকা পালন করুন, আপনারা মেয়েদের অধিকার নিয়ে রাস্তায় নামেন, প্রতিবাদ করুন, সোচ্চার হউন। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আপনাদেরকে অভিনন্দন জানাই। আপনারা সুস্থ থাকেন, আপনারা সফল হোন। আপনারা আপনাদের অধিকারগুলো নিয়ে সোচ্চার হোন এই প্রত্যাশা করি।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘‘ আজকে নারী দিবসে যে প্রতিপাদ্য বিষয়: ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, জেন্ডার বৈষ্যম করবে নিরসন’- একথাটা সম্পূর্ণ একটা ফেক কথা-বার্তা। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দেখতে পাই নারীরা কিভাবে লাঞ্ছিত, ধর্ষিত এবং সমতাবিহীন অবস্থায় বাসবাস করছে। আজকে আমরা পত্রিকা খুললে দেখতে পাই, কিছু ভালো ভালো নারী যারা সুবিধা গোষ্ঠির হয়ে যারা অবস্থান করছেন তাদেরকে কিছু ছবি দিয়ে, তাদেরকে কিছু এ্যাওয়ার্ড দিয়ে আমরা তাদের পুরস্কৃত করি। অথচ তৃণমূল পর্যায়ে যে নারীরা আছেন যারা আমাদের খাদ্য উতপাদন থেকে শুরু করে যাদের পরিশ্রমে আজকে আমরা এই সুবিধা জীবন লাভ করছি তাদের কি অবস্থা? সেটা খোঁজ রাখি না। সরকার রাখে না।”

বিএনপির শাসনামলে খালেদা জিয়া তৃণমূল নারীদের ঋণ প্রদান, আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে এবং নারীদের জন্য শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে সমাজে তুলে আনার বিভিন্ন পদক্ষেপও তুলে ধরেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী সেলিমা রহমান।

জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, শাম্মী আখভার, জাহান পান্না, শাহানা আখতার সানু, নায়েবা ইউসুফ ও শাহিনুর নার্গিস বক্তব্য রাখেন।

শেয়ার করুন