২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৯:৫৯:৩৭ অপরাহ্ন


বিএনপিকে নিয়ে আ.লীগের ফোঁস-ফাঁসের নেপথ্যে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০২-২০২৪
বিএনপিকে নিয়ে আ.লীগের ফোঁস-ফাঁসের নেপথ্যে


বিএনপি’কে নিয়ে সরকারের শীর্ষ মহলে তীর্ষক মন্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নানান গুঞ্জন দেখা দিয়েছে। কারো কারো মতে, ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে এবং এর পাশাপাশি কূটনৈতিক অঙ্গনে বিএনপি’র বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক বক্তব্য দিচ্ছে যা সরকারকে বেশ বিচলিত করছে। ফেলতে পারে আরো নেতিবাচক ইমেজ। আর এসব কারণে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে আসছে বিএনপি’র বিরুদ্ধে এসব তীর্ষক মন্তব্য। 

কি বলছে বিএনপি নেতারা

৭ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে পরেই আমেরিকা-যুক্তরাজ্য কঠোর বার্তা দেয়। এই দু’টি শক্তিধর দেশ বলা চলে পুরো পশ্চিমারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক এবং আর্ন্তজাতিক মানদণ্ড অনুয়ায়ী হয়নি বলে বিবৃতি দিয়েছে। অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিবৃতি দিয়ে জাতিসংঘও প্রায়ই একিই রকম অভিমত জানিয়েছে। এরপরে জানুয়ারি শেষে বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার মন্তব্য সরকারের কাছে উদ্বেগজনক মনে হয়েছে। সেটি ছিল ‘নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে এমন প্রমাণ খুঁজে পাইনি।’ নিয়মিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার একই সঙ্গে নির্বাচনের আগে গ্রেপ্তার করা বিভিন্ন বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এসব বিষয়কে বিএনপি সবচেয়ে বড়ো বিজয় হিসাবে দেখছে। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া বিএনপি’র নেতারা ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে কথা বলে এমনই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। সাড়ে তিন মাস পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশের জনগণ সব সময় গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য, ভাতের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছে, লড়াই করেছে। এই সংগ্রামে তারা জয়ী হবেন। গণতন্ত্র ফেরাতে চলমান আন্দোলন বিজয় না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত রাখার কথাও দৃঢ়তার সাথে বলেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, এবারের আন্দোলনে তাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। বরং ৭ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন করে সরকারই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এমন বক্তব্যেই ফুসে উঠেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মন্তব্য করেছেন, ‘সবাই জানে, নির্বাচনে কারা জিতেছে। নির্বাচনে অংশ না নিয়েই বিএনপি জিতে গেল? এটা পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কি?’

আওয়ামী লীগ কেন ফুঁসে উঠছে? 

রাজনৈতিক অঙ্গনে আসলে এতোদিন কি হয়েছে সামনে কি হতে যাচ্ছে এর বেশির ক্ষেত্রে সরকারের শীর্ষ থেকেই বক্তব্যের মাধ্যমে ফুটে উঠে। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন যখন সম্পন্ন হয়ে গেছে, অন্যদিকে যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় তখন নিরবতা ভাঙ্গা হয় আবারো চমক দেয়া একটি বক্তব্যে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পরিস্থিতি কখন কি হয় বলা যায় না। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে কী হবে সেটি বোঝা যাচ্ছে না। সবকিছু মিলে ২০২৪ সালে কী রেজাল্ট হচ্ছে তা বলা যাচ্ছে না। প্রশ্ন হচ্ছে কিছু একটা হতে যাচ্ছে ধরে নিয়েই কি আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপি’র যে কোনো ধরনের মন্তব্য বা বক্তব্যে বিচলিত হয়ে পড়ছেন? অথচ ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সরকার বেশ দৃঢ়তাই দেখিয়েছে। আবার তারা এতোটাই দৃঢ়তা দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে লেখা এক চিঠি নিয়েও। এটা নিয়ে আওয়ামী বাহবা কুডাতে চেষ্টা করছে । দাবি করা হয়েছিল ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন বাইডেন, বোঝাতে চেষ্টা করেছেন আমেরিকা এটি মেনে নিয়েছে।

শেষ কথা..

কিন্তু জো বাইডেন যদি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী বিজয়ীতে এতো পক্ষে থাকে তাহলে সরকারের চিন্তা কি? কেননা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন জো বাইডেন তার লেখা চিঠি কি উল্লেখ করেননি বা দেননি তাতে আসলে কিছু আসে যায় না। কেননা কূটনৈতিক মহল মনে করেন আমেরিকান ডেমোক্রেটিক পার্টির পররাষ্ট্রনীতিতে গণতন্ত্র, সুশাসনের মতো মূল্যবোধের বিষয়গুলো সব সময় থাকবে। সেদিক থেকে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েমের পক্ষে আমেরিকার আগ্রহ কখনো থেমে থাকবে না। সম্প্রতি আরেকটি খবর হলো তিন দিনের সফরে আবারও বাংলাদেশে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার। এর আগে গত বছরের অক্টোবরে ঢাকা সফরে এসেছিলেন আফরিন আক্তার। ধরেই নেয়া যায় আবারো পুরোনো সুরে কূটনৈতিক মহল হয়তো-বা তৎপর হচ্ছে আমেরিকারই হাত ধরে। ধরেই নেয়া যায়, হয়তবা পশ্চিমারা জানতে চাইবে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে এখন আওয়মী লীগ সরকার কি করতে চাইছে। তা যদি না হয় বাংলাদেশে আফরিন আক্তারের এজেন্ডা কি? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন, এসব কারণে এখনো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’রে একটু দৌড়ঝাঁপ বক্তৃতা-বিবৃতিতে বিচলিত হয়ে উঠছে।

বলা হচ্ছে, দেশে বিএনপির চেয়ে বড় উগ্রবাদী কারা? কিংবা দেশে উগ্রবাদের জন্ম বিএনপির হাত ধরে। যদিও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বেশ ফুরফুরে মেজাজে বলেছিলেন যে, বিএনপি প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, তাদের আওয়াজ কই? অন্তঃসারশূন্য দলটি আন্দোলন করতে ব্যর্থ। আন্দোলন করার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই।

বিএনপিকে নিয়ে সরকারের মাথাব্যথা নেই। কেননা তারা মুখে যা বলে, কাজে তা দেখাতে পারে না। কিন্তু এখন বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা মুক্তি পাচ্ছেন আর বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য মন্তব্য করছেন, তাতে কেনোইবা আওয়ামী লীগের গ্রাত্রদাহ হয়ে উঠছে কেনো? বিএনপি’কে নিয়ে সরকারি মহলে ফোঁসফাঁসের নেপথ্যে এমনটাই বলে পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন।

শেয়ার করুন