২৮ মার্চ ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৬:২৩:০১ অপরাহ্ন


কথার কথকতা
মাইন উদ্দিন আহমেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-১১-২০২২
কথার কথকতা


প্রেম নিয়ে লিখতে যাওয়াটা কি বিজ্ঞজনোচিত সিদ্ধান্ত হবে? কি বললেন? এ বিষয়ে লিখতে অসুবিধা কোথায়? বলেন কি! বিষয়টা আপনার কাছে এতোই সহজ মনে হচ্ছে? আমার কাছে তো মনে হয় রাজনীতি, যুদ্ধ, অর্থনীতি প্রভৃতি বিষয়ে লেখার চেয়ে প্রেম নিয়ে লেখা অনেক কঠিন, রিস্কিও বটে। তারপরও চলুন, প্রেমের বর্তমান অবস্থা এবং প্রেম জগতের অমূল্য সব খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করা যাক।

ইন্টারনেটে প্রেম খুঁজতে গিয়ে যা পাওয়া গেলো তার প্রথম বাক্যটি এ রকম: ‘প্রেম হলো ভালোবাসার সাথে সম্পর্কিত একটি উত্তেজনাপূর্ণ, যৌনতাপূর্ণ এবং রহস্যময় অনুভূতি।’ এক বাক্য পড়েই তো আমার বিস্মিত হয়ে ‘ক্যাঁক’ করে একটা শব্দ করে অথবা ‘ও মাই গড’ বলে বিষয়টা নিয়ে লিখবার সিদ্ধান্ত বর্জন করা উচিত। এটাও জানি যে, আমাদের প্রিয় পাঠক মহল বলবেন: ‘এসব কি বলছেন? এ রকম একটি অসাধারণ বিষয় নিয়ে লিখতে আপনি ইতস্তত করছেন কেন?’ আপনাদের বক্তব্যও ঠিক আছে আর আমার ঘাবড়ে যাবার ভাব দেখানোরও যুক্তি আছে। চেষ্টা করে দেখা যাক, আপনাদের মতামত এবং কঠিন বাস্তবতার মিশ্রণে কিছু একটা লিখে ফেলা যায় কি না।

আমাদের লেখাটি ডক্টরেট উপাধির জন্য জমা দেবার সম্ভাবনা নেই বলে আমরা শতাব্দী শতাব্দী পেছন থেকে শুরু করবো না বটে, তবে কমপক্ষে অর্ধশতাব্দী পেছনে না গেলেও তো হয় না। প্রেমের একটা মান-ইজ্জত আছে না!

চোখ বন্ধ করে আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতাপূর্ব সময়ের উঠতি বয়সী এক সহজ-সরল নব্য তরুণের কাছে গেলাম। সে বললো, প্রেম এক স্বর্গীয় ও পবিত্র বিষয়। ওই সময়ের একজন প্রবীণ ইমাম সাহেবকে জিজ্ঞেস করলে উনি বললেন, ‘এসব বিষয়ে এই রকম খোলামেলা আলাপ না করাই ভালো।’ আর সমাজে ইমেজ ভালো না, এ রকম একটা লোককে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, এসব হচ্ছে আবেগ, আবেগ হাওয়া হয়ে গেলে সব শেষ। তাহলে পঞ্চাশ বছর আগের এই তিনটি মানুষের কথা থেকে আমরা কি সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি? জ্বি, ঠিকই বলেছেন, সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না। ঠিক আছে, আমরা বর্তমানকালে চলে আসি। এ সময়ের মানুষেরা কি বলেন?

বর্তমান সময়েও অল্পকিছু মানুষ, বিশেষত যুবক পাওয়া যায় যারা প্রেমিকার পেছনে অনেক সময় ব্যয় করে, তাকে না পেলে জীবনের দীর্ঘসময় হাহাকার করতে থাকে। তবে জ্ঞানবুদ্ধি হবার পর অনেকেরই আবেগ প্রশমিত হয়, কিন্তু এরই মধ্যে শরীর-স্বাস্থ্যের বারোটা বাজিয়ে ফেলে। স্পষ্টভাষী ষাট অতিক্রম করা ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, প্রেম হচ্ছে একটা মানবিক প্রক্রিয়া, এটা থেকে মানবজাতির মুক্তি নেই। আমি বললাম- কি বলছেন ভাই, মানুষের স্বপ্ন, কল্পনা ও আবেগের বিষয়টিকে আপনি বলছেন, এটি একটি প্রক্রিয়া! কঠিন কঠিন মনে হচ্ছে না? তিনি উত্তর দিলেন- শোনেন, এই বিষয়ে অনেকেই কল্পনার রঙমাখা অনেক কথা বলবে, ওগুলো বাস্তবতার ধারেকাছেও আসবে না, মূল সত্যটাকে আমি এক্কেবার সংক্ষেপে বলি, গুরুত্ব দিলে আপনার জন্যও ভালো। আমি বললাম- ঠিক আছে বলুন, আপনার প্রজ্ঞার ওপর আমার আস্থা আছে। তিনি বললেন, সৃষ্টিগতভাবেই নারী ও পুরুষের মধ্যে পারস্পরিক একটা আকর্ষণ কাজ করে। দেহ পরিস্ফুটনের সময়ে দু’পক্ষই আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। সুন্দরের দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে, আশকারা পেলে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে, ছুঁতে পেলে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে এবং এদ্দুর এগোতে পারলে সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় লিপ্ত হতে ইচ্ছে করে। আগের দিনে এ বিষয়ের প্রকাশসমূহ বেশিরভাগ ছেলেদের পক্ষ থেকে সংসাধিত হতো আর বর্তমান সমাজে অগ্রসরমান দেশসমূহে মেয়েরাও প্রকাশ এবং নিবেদন করতে শিখেছে।

এ বিষয়ে আমি কোনো মেয়ে, নারী বা মহিলার মতামত জানার চেষ্টা করিনি, প্রিয় পাঠকবৃন্দ। চেষ্টা করা কি ঠিক হতো? কি যে বলেন? মেয়েদের কাছ থেকে এসব বিষয়ে জানতে গেলে পিঠে কয়টা বস্তা বেঁধে যেতে হবে, বোঝেন! তাছাড়া আমার ঘাড়ে কল্লাতো একটাই।

আমাদের চেনাজানা এক কবিকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, প্রেম হচ্ছে মানব সৃষ্টির প্রক্রিয়ার মধ্যে সৃষ্টিকর্তাসৃষ্ট একটি সফ্টওয়্যার, এটি বাধ্যবাধকতার মতো করে মানব জীবনে প্রবিষ্ট করানো হয়েছে। এর মধ্যে মানবজাতির বংশবিস্তার প্রক্রিয়া নির্ভর করে। প্রেম নামক বিষয়টা ছাড়া পৃথিবীতে মানবজাতির টিকে থাকা বা বংশবিস্তার সম্ভব নয়। এর থেকে কারোই মুক্তি নেই। সৃষ্টকর্তাকে অনেক ধন্যবাদ জানানো উচিত এই জন্য যে, বিষয়টিকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তিনি মানবসৃষ্টি প্রক্রিয়ার সফ্টওয়্যারে সন্নিবেশিত করেছেন। আমাদের এই কবি বন্ধু অবশ্য এই বলে আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন যে, প্রেমিক বা প্রেমিকাকে এই জটিল জ্ঞানটি যে আহরণ করতেই হবে, এমন কোনো কথা নেই। প্রেম সময়মতো এর অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ নিয়ে হাজির হবে প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে। সবারই ইচ্ছে করবে বলতে- ‘আই লাইক ইউ, আই লাভ ইউ, আমি তোমায় ভালোবাসি!’

শেয়ার করুন