২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ১১:৫০:৫৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


সবুজ রক্ষায় রাজনৈতিক কমিটমেন্ট জরুরি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৩-২০২৩
সবুজ রক্ষায় রাজনৈতিক কমিটমেন্ট জরুরি সেমিনারে অতিথিবৃন্দ


আমরা একটি পুজিবাদি অর্থনীতিতে আছি, পুঁজির ছোটাছুটির মধ্যে নগরের সবুজ আজ আক্রান্ত। কারণ নগরের সবুজকে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক দেখানো যথেষ্ঠ কঠিন। তাই নগরের সবুজ রক্ষায় রাজনৈতিক কমিটমেন্ট জরুরি। এসব বক্তব্য উঠে এসেছে বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা (ইউআরপি) বিভাগ কর্তৃক “ঢাকা নগরীর সবুজ এলাকা এবং এর রাজনৈতিক অর্থনীতি” শীর্ষক সেমিনারে। গত ২০ মার্চ সোমবার বুয়েট কাউন্সিল ভবনে “ঢাকা নগরীর সবুজ এলাকা এবং এর রাজনৈতিক অর্থনীতি” শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করা হয়। 

বুয়েটের ভিসি অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী, মোঃ তাজুল ইসলাম, এমপি প্রধান অতিথি ও অফিস অব ইকোনমিক গ্রোথ, ইউএসএইড বাংলাদেশ এর পরিচালক মোহাম্মাদ এন. খান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সেমিনারে বুয়েটের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল জব্বার খাঁন, বিভিন্ন অনুষদের ডীন ও বিভিন্ন বিভাগের প্রধানরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা (ইউআরপি) বিভাগের অধ্যাপক আফসানা হক ও অধ্যাপক আসিফ-উজ-জামান খান। 

স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, রাজউকের বিশদ এলাকা পরিকল্পনা (ড্যাব) তে ঢাকার সবুজ সংরক্ষণে যথেষ্ট গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। আমরা যেমন কম ঘনবসতির শহরের মত সবুজ দিতে পারব না, তেমনি এখন যেমন আছে তেমন চলতে দিতে পারি না- বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের সবাইকে তো ঢাকায় জায়গা দিতে পারব না। আমাদের অবশ্যই ব্লকভিত্তিক উন্নয়নে যেতে হবে। 

বুয়েট ভিসি বলেন, এ গবেষণা ও আলোচনা যথেষ্ঠ সময়োপযোগী। এদেশ সুদূর অতীত থেকেই সবুজ ছিল। কিন্তু এখন আমাদের এখানে সবুজ ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। বুয়েট এব্যাপারে দেশ ও জনগণের কল্যাণে এর মেধা ও যোগ্যতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করবে।    

জাস্টিন গ্রীন, এশিয়া প্যাসিফিক প্রোগ্রাম ম্যনেজার, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার বলেন যুক্তরাষ্ট্রে তার বিভাগ ৭ মিলিয়ন হেক্ট গ্রাস ল্যন্ড (বন, পার্ক, নগরের সবুজ এলাকা ইত্যাদি) এর প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবপস্থাপনায় জড়িত। বাংলাদেশে এ কাজে সম্পৃক্ত হতে পেরে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। আজ উপস্থাপিত এ গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে ছাত্র, গবেষক ও নীতি নির্ধারকসহ কমিউনিটির উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে তিনি আশা করেন। 

রাজউকের সদস্য (পরিকল্পনা) নাসিরুদ্দিন বলেন, সবুজ পরিসর ব্যবস্থাপনায় সকল অংশিদারদের সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন। করোনা মহামারিতে সবুজ পরিসরের প্রয়োজনীয়তা আমরা নতুনভাবে বুঝতে পেরেছি। আজকের গবেষণা ও আলোচনায় যা উঠে এসেছে তা নিয়ে  রাজউক দুই সিটি কর্পোরেশনকে নিয়ে সত্বর আলোচনায় বসবে। রাজউক ও সিটি কর্পোরেশনে গ্রীণ ডিপার্টমেন্ট থাকতে পারে। এ ব্যাপারে নতুন পদ-অর্গানোগ্রাম তৈরি প্রয়োজন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবুজ পরিসর ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। এছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানের মাঠগুলোকে প্রতিষ্ঠান ছুটির পর কম্যুনিটির জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া প্রয়োজন বলে উনি মনে করেন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ফজলে রেজা সুমন বলেন, নগরে বিভিন্ন মানুষের জন্য বিভিন্ন রকমের সবুজ এলাকা দরকার। এই ভিন্নতাকে আমলে নেয়া দরকার। এছাড়া গুলশান, বনানী ইত্যাদি এলাকার স্থানিক পরিকল্পনা ও সবুজ এলাকা নানা শক্তিশালী গোষ্ঠীর চাপে পরিবর্তন করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। 

পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের বলেন, শহর এলাকায় সমাজের কিছু শ্রেণী বঞ্চিত হচ্ছে সুযোগ-সবিধা থেকে । তিনি আরো বলেন এখানে “রাজনৈতিক অর্থনীতি” শব্দটিকে যাতে আরো সচেতনতার সাথে ব্যবাহার করা হয় এবং ইতিহাসের সাথে তার যেন সংযোগ থাকে। ড্যাপের সাথে সংযোগ রেখে গ্রিন স্পেসগুলি নিয়ে যাতে আলাদা প্রকল্প নেয়া হয় এবং প্রাইভেট ভূমি প্রকল্পগুলোকে কেস স্টাডি হিসেবে রাখার মতামত দেন। যে পার্কগুলি নিয়ে এই গবেষণা করা হয়েছে, তার পাশাপাশি আরো কিছু পার্ক,যাদের জায়গা কমিয়ে ফেলা হয়েছে সেগুলোকে অন্তরভূক্ত করা প্রয়োজন ছিল বলে তিনি মনে করেন। আইনগুলিকে আরো জোরদার করার প্রয়োজন। 

ড ইশরাত ইসলাম বলেন, জাতীয় সম্পদগুলো যখন কোথাও দেয়া হবে, তখন যাতে সবাই তা ব্যবহার করতে পারেন তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পূর্বাচল, বসুন্ধরা ইত্যাদি সরকারি ও বেসরকারি প্লট ভিত্তিক এলাকাগুলো, যেগুলো এখনো পুরোপুরি গড়ে উঠেনি, সেই সব জাইগায় ব্লকভিত্তিক উন্নয়ন করা জরুরি বলে মত দেন। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট দরকার।

বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট এর সভাপতি ডঃ খন্দকার শাব্বির আহমদ বলেন, যেহেতু আমরা একটি পুজিবাদি অর্থনীতিতে আছি, পুজির ছোটাছুটির মধ্যে নগরের সবুজ আজ আক্রান্ত। কারণ নগরের সবুজকে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক দেখানো যথেষ্ঠ কঠিন। তাই নগরের সবুজ রক্ষায় রাজনৈতিক কমিটমেন্ট জরুরি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাশেম বলেন, সবুজ এলাকা ও গণপরিসরকে একসাথে চিন্তা করা দরকার। এক্ষেত্রে, পুরো শহরের জন্য গণপরিসর নীতিমালা ও পরিকল্পনা দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন।

রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী রায়হানুল ফেরদৌস বলেন, ঢাকার হাতিরঝিল প্রকল্প ঢাকার সবুজ ও গণ পরিসর রক্ষায় রাজনৈতিক কমিটমেন্ট প্রয়োগের উদাহরণ। এখানে এ প্রকল্প এর বিরুদ্ধে ৮২ টি রিট মামালা হয়েছিল ও গৃহায়ণ সচিব এর বিরুদ্ধে ১১ টিআদালত অবমাননার মামলা হয়েছিল। কিন্তু সরকার তার রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকায় এসব মামলার বিষয়ে আলাদা ব্যবস্থা করেন ও এসবের দ্রুত নিষ্পত্তি করেন।

বন অধিদপ্তরের কন্সারভেটর অব ফরেস্ট হোসাইন মোহাম্মদ নিষাদ  জানান, এখন সামাজিক বনায়নের মডেলটি পরিবর্তন করে, লাগান গাছগুলোকে আর কাটা হচ্ছেনা। গাছ রক্ষার ক্ষেত্রে বিকল্প গৃহস্থালী জ্বালানির ব্যবস্থা করা দরকার বলে তিনি মত দেন। জাতীয় বোটানিক্যাল গার্ডেন রক্ষায়ও বন অধিদপ্তরকে চ্যালেঞ্জ পোহাতে হচ্ছে বলে জানান।

এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’র এমেরিটাস অধ্যাপক নুরূল আমীন বলেন, বাজার অর্থনীতির শুধুমাত্র লাভ করার প্রবণতাকে একমাত্র রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে গাইড করা যাবে। তিনি মেয়রদের রাজনৈতিক সদিচ্ছায় কিভাবে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি করা হয়েছে তার উদাহরণ দেন। তিনি বলেন, মানুষ শুধু অর্থনৈতিক জীব নয়, মানুষ সামাজিক এবং নৈতিক জীবও বটে। মানুষ শুধু নিজের লাভ চায় না, সামাজিক ও সামগ্রিক কল্যাণও মানুষের কাম্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অধ্যাপক জসীম উদ্দিন বলেন, শুধু সবুজ থাকলেই চলবে না, সঠিক গাছটি লাগাতে হবে। এর জন্য বটম-আপ, সমন্বিত নীতি করে দরকার অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে হবে। আমাদের দেশের ৫,০০০ প্রজাতির গাছ বিপন্ন। এসবকে রক্ষা করতে হবে। পূর্বাচলসহ নানা জায়গায় বিদেশী প্রজাতির গাছ লাগানো হচ্ছে, কিন্তু জীব-বৈচিত্র, দেশীয় প্রয়োজন বিবেচনা করে স্থানীয় প্রজাতির গাছ লাগাতে হবে। থাইল্যান্ডের ওয়াক্কাচূয়া গাছ থেকে দেশী ছাতিম গাছ অনেক ভাল বলে তিনি মত দেন।

অধ্যাপক শরীফুল ইসলাম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় নগরে সবুজ রক্ষার জন্য সারা দেশের স্থানিক পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন। তিনি জানান আমাদের দেশে রাতারাতি নীতি পরিবর্তন হয়ে যায়, পরিবেশ গত সংকটাপন্ন এলাকাতেও শিল্প ও অর্থনৈতিক জোন করার অনুমতি দিয়ে যাচ্ছি আমরা। সুতরাং সিদ্ধান্ত দিতে হবে, আমরা কি শুধু লাভ চাই না-’ কি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সুস্থ সুন্দর জীবন চাই?

শেয়ার করুন