২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৫:১৮:৩৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :


টিআইবির প্রতিবেদন
অর্থপাচারের মহোৎসব : খাদের কিনারে ব্যাংকিং খাত
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-১২-২০২২
অর্থপাচারের মহোৎসব : খাদের কিনারে ব্যাংকিং খাত


ইসলামী ব্যাংকসহ কমপক্ষে তিনটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ভুয়া ঠিকানা ও অস্তিত্বহীন কোম্পানির বিপরীতে কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় সরিয়ে নেবার ঘটনা গগনচুম্বী খেলাপি ঋণ ও অর্থপাচারের কারণে ইতোমধ্যে জর্জরিত ব্যাংকিং খাতকে খাদের কিনারায় ঠেলে দিয়েছে উল্লেখ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

সংস্থাটি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছ আরো গভীরতর সংকট প্রতিরোধের লক্ষ্যে অবিলম্বে ব্যক্তিমালিকানাধীন খাতে ‘প্রকৃত মালিকানার স্বচ্ছতা’ (Beneficial Ownereship Transparency) আইন প্রণয়ন এবং একই সাথে আর্থিক লেনদেনের নজরদারি সহায়ক ‘কমন রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (সিআরএস)’-এ অবিলম্বে যুক্ত হওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছে। 

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি দেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে অত্যন্ত ধূর্ততার সাথে ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নেয়ার সংবাদ দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর জন্য ভয়ংকর উদ্বেগজনক মন্তব্য করে, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সাধারণ গ্রাহককে ব্যাংক থেকে ন্যূনতম অঙ্কের ঋণ নিতে গেলেও যে পরিমাণ কাগজপত্র প্রদান করতে হয়, সেখানে কীভাবে ভুয়া কিংবা নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে অবলীলায় হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে তুলে নেয়া হচ্ছে? গত ১৪ বছরে পূর্বের তুলনায় মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ যখন প্রায় ৬গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, বারবার খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে কিংবা পুনঃতফসিল করেও খেলাপি ঋণ আদায় করা যাচ্ছে না, তখন কাদের স্বার্থে কিংবা কাদের দেখে অস্বাভাবিক দ্রুততার সাথে এমন আগ্রাসী ঋণ প্রদান করা হয়? প্রকৃতপক্ষে কারা এই বিপুল পরিমাণ অর্থের সুবিধাভোগী? এই প্রশ্নের উত্তর দেশবাসীর জানার অধিকার আছে।”

সাম্প্রতিক অতীতে ব্যাপক আলোচিত বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি ও পিকে হালদারের জালিয়াতির মাধ্যমে লুণ্ঠন ও অর্থপাচারের পরও কেন শিক্ষা নেয়া হলো না? কেন ব্যাংকখাতের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা ফেরানোর লক্ষ্যে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হলো না- এমন প্রশ্ন রেখে ড. জামান বলেন, দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে বিদেশে অর্থপাচারের নির্ভরযোগ্য বহু তথ্য প্রতিনিয়ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রকাশিত হচ্ছে। বিশেষ করে, আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে চালান জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থপাচারের ঘটনায় খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, পণ্য আমদানিতে ২০ থেকে ২০০ ভাগ পর্যন্ত বাড়তি দাম দেখানোর শতাধিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। অন্যদিকে গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই)-এর সবশেষ প্রকাশিত হিসাব বলছে, বাণিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে গড়ে প্রতিবছর পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ ৮২৭ কোটি মার্কিন ডলার। এই অর্থপাচার প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বরং অর্থপাচারের তথ্য প্রকাশ রোধ করার জন্য জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থায় তথ্য প্রেরণ স্থগিত করা হয়েছে বলে জানা যায়।’

নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘অস্বাভাবিক ও প্রশ্নবিদ্ধ ঋণের উল্লিখিত ঘটনা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করার পাশাপাশি কোনোভাবেই যেন এসব অর্থ বিদেশে পাচার হতে না পারে, সে বিষয়ে এখনই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাচার হওয়া অর্থ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেতে দেশে-বিদেশে সকল প্রকারের লেনদেনের তথ্য আদান-প্রদান সহায়ক ‘কমন রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (সিআরএস)’-এ অবিলম্বে যুক্ত হতে হবে। একইসাথে ভুয়া ও বেনামী ঋণ জালিয়াতি প্রতিরোধের জন্য আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার আলোকে অবিলম্বে ব্যক্তিমালিকানাধীন খাতে ‘প্রকৃত মালিকানার স্বচ্ছতা’ (Beneficial Ownership Transparency) আইন প্রণয়ন করতে হবে।” টিআইবি মনে করে, যখন-তখন রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকের মালিকানায় কিংবা শীর্ষপদে বদল এসব ব্যাংকের আমানতের অর্থ লোপাটে সহায়ক হয়। ব্যাংকের মালিকপক্ষ বা পরিচালনা পর্ষদই তখন ঋণ জালিয়াতিতে যুক্ত হয় এবং যোগসাজশের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে লুটপাটে জড়িত হওয়ার সুযোগও বহুগুণে বেড়ে যায়।

খাদের কিনারা থেকে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতকে উদ্ধারের লক্ষ্যে, বিবৃতিতে সংশ্লিষ্ট খাতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সুখ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞজনের নিরপেক্ষ ও পেশাগত পরামর্শের ওপর নির্ভর করে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদে বাস্তবায়নযোগ্য কৌশল প্রণয়নের জন্য ইতোমধ্যে ঘোষিত টিআইবির আহ্বানের কথা সরকারকে স্মরণ করে দেয়া হয়। 

শেয়ার করুন