২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০২:২৮:৩৭ পূর্বাহ্ন


নুরুল হক নুর প্রসঙ্গে রেজা কিবরিয়া
‘ও প্রতারক-বিশ্বাসঘাতক’
নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৭-২০২৩
‘ও প্রতারক-বিশ্বাসঘাতক’


নুরুল হক নূরসহ তিনজনের আইনি ব্যবস্থা নেবেন রেজা কিবরিয়া। রোববার দুপুরে গুলশানে নিজের বাসার ছাদে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক সাংবাদিকদের একথা জানান। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে সরানোর জন্য সে(নূরুল হক নূর) এতো অস্থির হয়ে গেলো যে, ভোট ছাড়া সে সিদ্ধান্তটা নিয়ে নিলো। আমাদের যে সংবিধান আছে সেখানে দুই-তৃতীয়াংশ কেন্দ্রীয় কমিটির ভোটে এই কাজটা করা সম্ভব। আহ্বায়ক বা সভাপতি সরানো ৮১ জনের ভোটে হয়। এটা হয়নি। এছাড়া ভোটের আগেও তারা কিছু কাজ করেছে। তারা মিথ্যা স্বাক্ষর নিয়েছে। যারা সই করেননি তাদের সই ওখানে দেখবেন। এটা মারাত্মক বিষয়। সেজন্য আমরা ভুয়া স্বাক্ষর ও অনিয়মের মধ্যে ভোট গ্রহনের বিষয়ে মামলা করব। নুরুল হক, রাশেদ খান ও শাকিল উজ জামান…এই তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।”

 

রেজা কিবরিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ আমাকে সরানোর জন্য যে ভোটটা হয়েছে সেটা ছিলো ৪৮ জনের মধ্যে ৩৬ জন সই করেছে। বাকিরা সইও করেনি। আর আহ্বায়ক অপসারণের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির ৮১ জনের ভোট দরকার। এটা হয়নি।”

 

‘‘ তারপরে আগের রাত্রে ভোট করা হয়েছে”

 

গত শনিবার পুরানা পল্টনে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির জরুরী সভা ডেকে রেজা কিবরিয়াকে অপসারণ করে দলটির সদস্য সচিব নুরুল হক নূরের নেতৃত্বে অনুসারীরা।

 

রেজা কিবরিয়া রোববার রাতেই পূর্ব কর্মসূচি অনুযায়ী চিকিতসার জন্য যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র। তিন সাপ্তাহ পরে দেশে ফিরে আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ আমি দেশে ফেরার পর বড় মিটিং করবো। বিভিন্ন জেলার থেকে আমাকে ফোন করছে তারা আমাদের সাথে আছে। তারা ইজরাইলী গোয়েন্দার সাথে কাজ করতে চায় না। আমরা কেউ ইজরাজলীদের সাথে সম্পর্ক রাখতে চাই না।”

 

২০২১ সালে বাংলাদেশ রেজা কিবরিয়াকে আহ্বায়ক ও নূরুল হক নূরকে সদস্য সচিব করে গণঅধিকার পরিষদ আত্মপ্রকাশ হয়।  

 

‘দলের নেতৃত্ব আমার কাছেই’

 

এক প্রশ্নের জবাবে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘‘ দলের নেতৃত্ব আমার কাছেই আছে, থাকবে ইনশাল্লাহ।”

 

তিনি বলেন, ‘‘ একটা লোকের জন্য আজকে দলের এই অবস্থা। আমি মনে করি এটা ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের দলে অনেক ভালোভালো লোক আছে এবং তারা দলটাকে বাঁচাতে পারবে।”

 

 

‘নূরের সাথে ইসরাইলীদের কানেকশন’

 

রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘‘ এখন সবাই জানে যে ইজরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের একজন এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে সদস্য সচিব নুরুল হক নূরের দুবাইতে মিটিং হয়েছে। দুবাই ও শারজাহ এর মাঝখানে একটি কফি শপে তাদের বৈঠক হয়েছে। এছাড়াও দুবাইতে যে গাড়ি চালিয়ে তাকে নিয়ে গেছে সেই চালক আমাকে এই বিষয়ে বলেছে। গত জুনের ১৮ তারিখে আমার বাসায় মিটিংয়ে আমাদের সামনে এই কথা স্বীকার করেছে নুর।  আমাদের প্রবাসী অধিকার পরিষদ থেকে অনেক টাকা আসে সেই টাকা কোথায় যায়, কে নেয় তার কোনো টাকার হিসাব সে দিতে চায় না। সেই মিটিংয়ের পর সে(নূরুল হক নূর) খুব উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলো। বিশেষ করে বিপ্লব পোদ্দার করে এক লোক চিতকার দিতে শুরু করলো। তখন মিটিয়ে হৈচৈ শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত মিটিংটা ভেঙে যায়।”

 

বাংলাদেশে ফিলিস্তিনী রাষ্ট্রদূতও বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন বলে জানান তিনি। রেজা কিবরিয়া সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে প্রবাসীদের থেকে অর্থ গ্রহনসহ দুর্নীতির অভিযোগও তুলেন।

 

তিনি বলেন, ‘‘ আজকে একটা কথা বলতে চাই, অনেক সময় মিটিং করা হতো টাকা তোলার জন্যে। এই মিটিং কেনো করছো জিজ্ঞাসা করলে কোনো কারণ নাই, এটা কোনো উত্তর নাই। এই অজুহাতে প্রবাসীদের থেকে ৭/১০ লাখ টাকা তুলে ফেলতে এবং খরচ করতো।সরকার পতন ওই মিটিংয়ের কারণে হবে এরকম ধারণা আপনারাও করেননি, আমরাও করেনি, সরকারও করেনি। এগুলো হলো টাকা তোলার কৌশল। এইসব টাকার হিসাব দিতো না। প্রবাসী চাকুরি করে হালাল পয়সা রোজগার করে তাদের টাকা নিয়ে তোমরা খামাখা নষ্ট করছো এটার কোনো মানে হতে পারে না। কিন্তু সে করেছে এবং করে যাচ্ছেই সে।”


রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘‘ সে জাহাঙ্গীর কবির নানক, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনুর সাথে দেখা করেছে। সে মনে হয় ওদের মতো হতে চায়। মন্ত্রী হবে, কিছু টাকা-পয়সা বানাবে। এটাতে তার সন্তুষ্ট। আমাদের বাংলাদেশের যুব সমাজের আশা-আকাংখাকে মাটি করে, বিক্রি করে সে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চায়। আমার পাশে বসে আছেন সিনিয়র নেতা( আমি আহমেদ আফসারী) কে সে বলেছেন, সরকারের  এই নির্বাচনে গেলে কেমন হয়। সরকার দুই কোটা টাকা দেবে নির্বাচনের জন্যে। ওকে এককোটি টাকা দেবে। আপনারা এটা কনফার্ম করতে পারেন আফসারী সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলেই। উনি আমার পাশেই আছে। সরকার তাকে এই অফারটা দিয়েছে।”


এ সময়ে আফসারীও হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়েন।

 

‘বিএনপি ভাঙার অভিযোগ প্রসঙ্গে’

 

নুরুল হক নূর বলেছেন আপনি বিএনপি ভাঙার ষড়যন্ত্র করছেন… এরকম প্রশ্নের জবাবে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘‘ বিএনপি একটা টুনকো দল না যে, আমার কথায় ভেঙে যাবে… তাহলে তো আমার অনেক ক্ষমতা। আমি মনে করি বিএনপি ভাঙলে একটা দল উপকৃত হবে সেই দলটা হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোনো সুবিধা করে দিতে চাই না। বিএনপি শক্তি থাকুক, একত্রে কাজ করুক। এই দল একেবারেই ভাঙা যেন কোনো লক্ষন না থাকে এটা আমি চাই। এই দল ভাঙার কোনো লক্ষন আমি দেখি না। এই ধরনের বড় দল ছেড়ে কোনো গ্রুপ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সুবিধা করতে পারেনি। বরং বড় দল ভাঙার যারা উদ্যোগ নেয় তারা শেষ হয়ে যায় রাজনীতিতে।”

 

তিনি বলেন, ‘‘ আমি মনে করি, বেগম খালেদা জিয়া সন্মান্বিত মানুষ। সারা দেশে ও বিদেশে উনার মতো নেতৃত্ব দেয়ার এবং মানুষকে সাহস দেয়ার মানুষ খুব কম আছে। উনাকে ব্যক্তিগতভাবে খুব সন্মান করি এবং শহীদ জেনারেল জিয়াউর রহমানকেও খুব সন্মান করি। আমি জেনারেল জিয়ার ফ্যান…এটা বলতে আমার কোনো দ্বিধা নেই। তাই এই দলটার ক্ষতি করার বা ভাঙা প্রশ্নই উঠে না।”

 

‘ও প্রতারক-বিশ্বাসঘাতক’

 

আপনার যে বিশ্বাস ছিলো নূরের প্রতি তা ভঙ্গ করার জন্য আপনি কি তাকে বিশ্বাসঘাতক বলবেন কিনা প্রশ্ন করা হলে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘‘ অফকোর্স সে বিশ্বাসঘাতক। ইজরাইলীদের সাথে মিট করাটাকে আমি অন্য কিছু বলতে পারি না। বিশ্বাসঘাতক শুধু আমার সাথে না, সারাদেশের সাথে, যুব সমাজের সাথে এবং জাতির সাথে।”

 

‘‘ সে একটা বিশ্বাসঘাতক, প্রতারক এবং দুর্নীতিগ্রস্থ একটা মানুষ। সেই আওয়ামী লীগের দুর্নীতি যখন জোর গলায় কিছু বলে এটা খুব … আমি মনে করি, আওয়ামী লীগের আপত্তি করা উচিত। খেয়াল করবেন, তারা চুপ আছে। অর্থাত সে তাদেরই লোক।”

 

সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম আহ্বায়ক আমিন আহমেদ আফসারী, আবদুল মালেক ফরাজী, সহকারি সদস্য সচিব শেখ খায়রুল কবির, কেন্দ্রীয় নেতা জিসান মহসিন ও শাহাবুদ্দিন শুভ প্রমূখ নেতারা ছিলেন।

 


শেয়ার করুন