২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৭:৩৪:১৭ অপরাহ্ন


দেশকে মাহবুব হোসেন রক্সি
ব্রাজিল আর্জেন্টিনা ফ্রান্স ও পর্তুগাল এগিয়ে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-১২-২০২২
ব্রাজিল আর্জেন্টিনা ফ্রান্স ও পর্তুগাল এগিয়ে মাহবুব হোসেন রক্সি


বিশ্ব ফুটবলের সর্ববৃহৎ ও মেগা আসরের উন্মাদনায় এখন কাতার। এ আসর নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে কিছুদিন আগেও ছিল অন্য এক উত্তেজনা। ফুটবল নিয়ন্ত্রক ফিফা বারবার জানান দিয়ে এসেছে এটা হবে চমৎকার এক আয়োজন। অনেকেই মানতে পারেননি। কেউ মেনেছেন। তবে এশিয়ার এ পেট্রোডলারের দেশ রীতিমত চমকই দেখাল। কল্পনাতীত আতিথেয়তা ও আধুনিকতায় এ আসরে আগতরা মুগ্ধ। ইতিমধ্যে এ আসরের অনেকটাই অতীত। চুলচেরা বিশ্লেষণ বাকি সময়ের ম্যাচ নিয়েও। ক্রমশই তো যাচ্ছে দমফোটানো উত্তেজনা পানে। কে হবে চ্যাম্পিয়ন।


কিভাবে হবে, কার শক্তি কেমন এ বিশ্লেষণ প্রতিনিয়ত। বিশ্বকাপ ২০২২ এর অনেক পথ পাড়ি দেয়া হয়ে গেছে। অতীত যেমনটা রোমারিও, বেবেতো, ডুঙ্গা, ডেভিড বেকহ্যাম, স্টিফেন জেরার্ড, সাইলাস, কারেকা, ম্যারাডোনা, ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড, ক্যানেজিয়া, জর্জ হ্যাজি, রুডগুলিত, ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড, ভ্যান বাস্তেন, জিনেদিন জিদান, পাওলো মালদিনি, রর্বাতো ব্যাজিও, রুডি ভোয়েলার, ওয়েন রুনি- এমন নাম লিখতে গেলে শেষই হবে না। হাজারো নাম। পেলের যুগ তো অনেক আগের। ফলে অতীতে অনেক তাদের স্মৃতি। যা ফুটবল প্রেমিকদের হৃদয়ের মণিকোঠরে। এ আসর থেকেও এমন কিছু নাম স্মৃতি হয়ে যাবে। হয়তো আগামী বিশ্বকাপে নাও দেখা যেতে পারে নেইমারকে। বা লিওনেল মেসিকে। কিংবা ক্রিষ্টিয়ানো রোনালদো বা হ্যারিকেন, মডরিচের মত খেলোয়াড়কে। নতুন তারকা হতে পারেন কিলিয়ান এমবাপ্পে এমন আরো আরো কেউ। এটা সময়ই বলে দেবে।


কাতার বিশ্বকাপের পোষ্টর!/ছবি সংগৃহীত 

বিশ্বকাপ এখন কোয়ার্টার ফাইনালের সামনে দাঁড়িয়ে। ৩২ দল থেকে ইতিমধ্যে বিদায় নিয়েছে বেশিরভাগ দল। কাএবার হিসেব নিকেষে আট দল। এখান থেকে কোয়ার্টার খেলে চার দলের বিদায়। এরপর সেমিফাইনাল ও ফাইনাল। 

এক সময়ে ঢাকাই ফুটবলে দুর্দান্ত পারফরমেন্স করা ও বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক খেলোয়াড়। বর্তমানে স্বনামধন্য কোচ জাতীয় দলের সহকারী ও বসুন্ধরা কিংসের সহকারী কোচের দায়িত্বে থাকা প্রিয়মুখ মাহবুব হোসেন রক্সি তার ভাবনার কথা জানান দিয়েছেন দেশ পত্রিকাতে। কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের উত্তেজনাপূর্ণ পর্বের তথা কোয়ার্টারের সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ করেছেন ফেভারিটদের বিষয়ে। দেশ পত্রিকাতে কোয়ার্টার নিয়ে যা বলেছেন তা নিন্মরূপ। 

প্রশ্ন: কোয়ার্টারের গন্ডি পেরিয়ে যাবার সম্ভাবনা কাদের দেখছেন? 

রক্সি: যে দলগুলো কাতার বিশ্বকাপের এ পর্যায়ে দাঁড়িয়ে এরা সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নই বেশিরভাগ। চ্যাম্পিয়ন না হলেও সেমিফাইনাল, ফাইনাল খেলেছে এমন দলও রয়েছে। ফলে এদের শক্তি কাছাকাছি। বিশেষ করে গ্রুপ ও দ্বিতীয় রাউন্ডে সবাই কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই আজ কোয়ার্টারে। এদের মধ্যে যে চারটি খেলা হবে তা হলো- আর্জেন্টিনা বনাম নেদারল্যান্ডস। ব্রাজিল বনাম ক্রোয়েশিয়া। ফ্রান্স বনাম ইংল্যান্ড। পর্তুগাল বনাম মরক্কো। 

আমি এদের মধ্যে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ফ্রান্স ও পর্তুগালই এগিয়ে রাখবো সেমিফাইনালের লাইনআপে। 

প্রশ্ন: আপনার এমন ভাবনা কিভাবে হলো? 

রক্সি: এটা আসলে জটিল কিছু না। এ দলগুলোর অতীত দেখলে অনায়াসেই বলে দেয়া যায়। এখানে নতুন করে কিছু বলার কারিশমা নেই। তবে আমি টেকিনিক্যাল যে বিশ্লেষণটা বলবো- সেটা আমি একজন যেহেতু কোচ, সে দিক থেকেই দেখি যে শক্তিশালী দলগুলো যেমনটা ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স প্রমুখ দলগুলোতে তারকা কিছু খেলোয়াড় রয়েছেন। যাদের পক্ষে একা একাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া সম্ভব। এরপরও ফুটবল একার খেলা নয়। সম্পূর্ণ টিমওয়ার্ক। গোটা টিম এক সঙ্গে ক্লিক করতে হবে। তাহলে প্রতিপক্ষ শক্তিশালী হলেও যে এক বা দুই খেলোয়াড় এক্সট্রা অর্ডিনারি কিছু যেমনটা নেইমার, মেসি। ওরা বাড়তি কিছু করে বসবে তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে। ওখানেই বড়দলগুলোর অ্যাডভান্টেজ। 

আরো একটা বিষয় রয়েছে সেটা হলো সাইডলাইনের খেলোয়াড়। বা রিজার্ভ খেলোয়াড়। অপেক্ষা কিছুটা পেছনের দলগুলোর সাইটবেঞ্চের খেলোয়াড়রা অতটা নামী দামী বা অভিজ্ঞ নয়। ব্রাজিল আর্জেন্টিনা বা বড় দলের রিজার্ভ বেঞ্চের খেলোয়াড়রাও ইউরোপের অনেক ক্লাবে খেলে। ফলে তাদের অভিজ্ঞতা বেশি। এতে করে দলের কোচ তারকা খেলোয়াড়কে বিশ্রাম দেয়ার সুযোগ পান। এতে করে তারকা খেলোয়াড় গুরুত্বপূর্ণ নতুন উদ্যোমে খেলা শুরু করতে পারে। এটাতে দল তারকা খেলোয়াড়ের কাছ থেকে শতভাগ পারফরমেন্সটাও পায়। ফলে বড় দলগুলোর অ্যাডভান্টেজ থাকার এমন বেশ কিছু কারণ থাকে। 


এটাই সম্ভবত শেষ বিশ্বকাপ। মেসি আপ্রাণ চেষ্টায় শিরোপা ছোয়ায়। সফল হবেন কি?/ছবি সংগৃহীত 


প্রশ্ন: কোয়ার্টারের লাইনআপে কার কী অবস্থান, সম্ভাবনা নিয়ে বলবেন কিছু? রক্সি: আর্জেন্টিনার- নেদারল্যান্ডের খেলার দিকে যদি তাকান দুটো দলই সমান পারফরমেন্স করতে সক্ষম। এখানে কাউকে পেছনে ঠেলা যাবে না। টোটাল ফুটবলের দেশ নেদারল্যান্ড। ওদের টিম ওয়ার্ক দারুণ। বিশেষ করে গত বিশ্বকাপে দলটি খেলার সুযোগ না পেয়ে এবার অনেক সুসংগঠিত। যা গ্রুপ পর্বে দেখিয়েই এসেছে। আর্জেন্টিনাকে চ্যালেঞ্জ করার যথেষ্ট শক্তিমত্বা তাদের। দলের তিন বিভাগই গুছানো। হুট করে ঝাক বেধে আক্রমণে যাওয়া ও পেছনে নেমে আসা। এটা অন্যদলের জন্য চ্যালেঞ্জের। তবে খেলা যেহেতু আর্জেন্টিনার সঙ্গে। এখানে একজন অসাধারণ খেলোয়াড় রয়েছেন। তিনি লিওনেল মেসি। যিনি একাই পারেন ম্যাচের নিয়ন্ত্রণটা নিজেদের দখলে নিয়ে আসতে। মেসির এক্সট্রা ওই কৃতিত্বটুকুই দুই দলের মধ্যে পার্থক্য। আর সব সমান। তবে এটা ঠিক, খেলায় ভাগ্য বলেও একটা কথা রয়েছে। দেখবেন ভাল খেলছেন। অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে গোল পেয়ে যায় এক দল। আবার সহজ সহজ সুযোগ মিস করে হতাশায় নিমজ্জিত হয় আরেক দল। ফলে ম্যাচটা ডে’তে লাক বলে একটা কথা রয়েছে। সাথে গুড টিমওয়ার্ক। এবং প্রতিটা ডিপার্টমেন্ট ক্লিক করারও একটা বিষয় রয়েছে- এটা মানতে হবে। 


নেইমার,ব্রাজিলের প্রাণ, এ বিশ্বকাপেরও আকর্ষন/ছবি সংগৃহীত 



ক্রোয়েশিয়া -  ব্রাজিল 

এটা অনায়াসেই বলা যায় ব্রাজিল এখন দুর্দান্ত খেলছে। শেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে যে ম্যাচ তারা খেলেছে। অসাধারণ কম্বিনেশন। এমন ফুটবল কন্টিনিউ করলে ব্রাজিল ফাইনালেও উঠে যেতে পারে। যদিও সেমিতে আর্জেন্টিনার সঙ্গে তাদের দেখা হবে।

তবে ক্রোয়েশিয়ার রানার্সআপ হলেও সে রিদমটা দেখাতে পারেনি। জাপানের বিপক্ষে বহু কষ্টে তারা জিতে এসেছে। দলের মূল স্ট্রাইকার মদরিচ। ৩৭ বছর বয়স। ওই মানের অন্য খেলোয়াড় সংখ্যা কম। এটাতে তারা ব্রাজিলের চেয়ে পিছিয়ে থাকবে। বিশেষ করে ইনজুরি থেকে যখন নেইমার ফিরেছেন। ফলে এক কথায় দুর্দান্ত এখন ব্রাজিল। দলে রয়েছে সম্ভাবনাময় তরুণ কিছু খেলোয়াড়। যারা ভাল খেললেও অভিজ্ঞতা অভাবে কিছুটা সেলফফিস ও খেলতে দেখা গেছে। এটা সতীর্থের উপর আত্মবিশ্বাসের অভাবের ফলে। তবে এরা ধীরে ধীরে দলীয় ফরম্যাটে অ্যাডজাস্ট হয়ে যাবে। 

ইংল্যান্ড -  ফ্রান্স  

কোয়ার্টারকে দুইভাবে ভাগ করলে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল একভাগে। অন্যভাগে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, মরক্কো, পর্তুগাল। আসলে পরের পার্টটা খুবই টাফ। ব্রাজিল আর্জেন্টিনা এর চেয়ে কম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরবে। 



যেমনটা ইংল্যান্ড ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। দুই দলই তুখোড় খেলে এ পর্যায়ে এসেছে। ইংল্যান্ড দলের চেয়ে ফ্রান্সকে এগিয়ে রাখবে। তবে ইংলিশরাও কম যাবে না। ইয়াং দল। সাকা, রাসফোর্ড এর সঙ্গে হ্যারিকেইনরা দুর্দান্ত ফর্মে। দলটির বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই ম্যান সিটি, এভারটন, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, চেলসি, আর্সেনাল প্রমুখ দলে খেলছেন। ফলে দুর্দান্ত লড়াইয়ে অভ্যস্ত তারা। ফ্রান্স দলেও রয়েছে, গ্রীজম্যান, ওলিভার জিরুদ, হুগো লরিস প্রমুখ। তবে দলে ইনজুরির জন্য চারচজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় নেই স্কোয়াডে। করিম বেনজামা, পল পগবাদের ছাড়া খেলছে তারা এ আসর। যারা গত আসরে দলের শিরোপা অর্জনে ভূমিকা রেখেছিল। তবে নক আউট পর্বে কোনো কোনো ম্যাচ টাইব্রেকারেও যেতে পারে। তার মধ্যে সম্ভাবনা রয়েছে এ ম্যাচটি। কারল দুই দলই বেশ সমান। তবুও সার্বিক বিবেচনা করলে ও গতির দিকটা খেয়াল করলে ফ্রান্স কিছুটা এগিয়ে থাকবে। যার সর্বাগ্রে নজর থাকবে এমবাপ্পের দিকে। 



হ্যাটট্রিকের পর রামোস/ছবি সংগৃহীত 


পর্তূগাল যথারীতি কোয়ার্টারে 

পর্তুগালকে আমি এগিয়ে রেখেছিলাম। সেটাও ওদের পূর্বের রেকর্ডঅনুসারে। তবে এ দলও দুর্দান্ত। বিশেষ করে কোয়ার্টারে তারা দেখিয়ে দিয়েছে, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ছাড়াও পর্তুগীজদের দমানো যাবে না। 

বিস্ময় জাগিয়েছে গঞ্জালো রামোস। নেমেই হ্যাটট্রিক। যা এ আসরেরও প্রথম। কোয়ার্টারের মত গুরুত্বপূর্ন এক ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা সহজসাধ্য নয়। তিনি যে ভবিষ্যতেও ভাল কিছু দেখাবেন সেটারই প্রমান রেখেছেন। তবে পর্তুগালকে অনেকেই কিছুটা পিছিয়ে রাখলেও সুইজারল্যান্ডের মত দলকে যখন ৬-১ গোলে হারায়, তখন মনে রাখতে হবে তারা এ পর্যন্ত এমনিতেই আসেনি। বড় কথা, সেমিফাইনালে ওঠার পথে তাদের বাধা মরক্কো। ফলে উত্তেজনা হবে ওই ম্যাচে। তবু পর্তুগালের জয়ের সম্ভাবনা থাকবে বেশী। ওই ম্যাচে রোনালদো সুচনা থেকেই খেলার সম্ভাবনা থাকবে। যা এ ম্যাচে ছিলনা। খেলবেন রামোসও হয়তো। ফলে আক্রমনভাগ দুর্দান্ত ফর্মে এ দলটির। 



মরক্কো-  কোয়ার্টারে 

স্পেন মরক্কোর মধ্যে নিঃসন্দেহে স্পেন এগিয়ে। আফ্রিকার দলগুলো যেভাবে কিছুটা পাওয়ার ফুটবল খেলে সেটা মরক্কো খেলে না। কারণ দলটির বেশিরভাগ খেলোয়াড় খেলে ইউরোপে। ওরা ইউরোপীয়ান ধাচে খেলে ফুটবল। ম্যাচেও দেখা গেল তাই। স্পেনের সঙ্গে সমানতালেই লড়ে গেছে। যদিও স্পেনের ব্যাডলাকও ছিল। কিন্তু কোয়ার্টারে যেতে গোল তো প্রয়োজন, ম্যাচ জিততে সেটাতে তারা ব্যর্থ। কিন্তু ১২০ মিনিট গোলশুণ্য থেকে টাইব্রেকারে মরক্কোর খেলোয়াড়রা একচেটিয়া প্রধান্য বিস্তার করে ৩-০ তে জিতে নেয় ম্যাচ। এবং প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের কোয়ার্টারে ওঠার গৌরব অর্জন করে। এটা নিঃসন্দেহে মরক্কোর ফুটবলের উত্থান।

শেয়ার করুন