১২ এপ্রিল ২০১২, বুধবার, ০৬:২৯:৪৬ অপরাহ্ন


দেশ’কে এনামুল জুনিয়র
লাল বলের প্রস্তুতিটা বাড়ানো প্রয়োজন
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৪-২০২২
লাল বলের প্রস্তুতিটা   বাড়ানো প্রয়োজন এনামুল জুনিয়র


দক্ষিণ আফ্রিকায় দুই টেস্টের শেষ ইনিংসে এমন কী হলো যে বাংলাদেশ দল ব্যাটিংই করতে পারলো না। এক ইনিংসে ৫৩ আরেক ইনিংসে ৮০ রানে অল আউট। তাও প্রতিপক্ষের দুই বোলারেই সব শেষ। বোলার দু’জন স্পিনার কেশব মহারাজ ও সায়মন হার্মার। এ দুই স্পিন বোলার কী এখন বিশ্ব সেরা? বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সাকিব আল হাসান, মেহেদি হাসান মিরাজ এরও বাইরে সিনিয়র যারা তাদের খেলার অভিজ্ঞতা আছে মুত্তিয়া মুরালীধারন, রঙ্গনা হেরাতসহ বিশ্বের সেরা স্পিনারদের। এমনকি ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের সেরা স্পিনার ড্যানিয়ে ভেট্টরির মত বাঘা বাঘা বোলারদের মোকাবেলা করে সাফল্য লাভেরও ইতিহাস রয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের কন্ডিশনে ব্যাটসম্যানরা স্পিনারদের খেলতেই বেশি সাচ্ছন্দবোধ করেন যেখানে। বাংলাদেশের কন্ডিশনে ব্যাটসম্যানরা বেড়েই ওঠে স্পিন খেলে। 

কিন্তু ডারবানে শেষ ইনিংসে ৫৩ রানে অলআউট ওই দুই বোলারের বিরুদ্ধে এটা না

হয় একটা এক্সিডেন্ট। হতেও পারে। কিন্তু ঠিক পরের টেস্টে পোর্ট এলিজাবেথেও কী সেই একই রকম দুই স্পিনারে আত্মহুতি দেবে বাংলাদেশের তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম, লিটন কুমার দাসদের মত ব্যাটসম্যানরা। এত অভিজ্ঞ হয়েও কী হলো? যে এভাবে অসহায় আত্মসমার্পন করে দেশের ক্রিকেটকে লজ্জায় ফেলে দিলেন। দলের অন্য ব্যাটসম্যানরা তরুণ হলেও দেশ সেরা, এটা মানতেই হবে। যখন জাতীয় দলে খেলছেন দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন, তারা তো দেশের সেরা ব্যাটসম্যানই। কিন্তু তাদেরও স্পিন বা পেস দুর্বলতা থাকবে এটা মেনে নেয়ার মত না। তাহলে কী হলো? 

জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ও এক সময়ের স্বনামধন্য বাঁহাতি স্পিনার এ ব্যাপারে কথা বলেছেন দেশ’র সাথে।

তিনি বলেন, ‘আসলে আমাদের লাল বলে অনুশীলনের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। ইদানিং আমরা বেশি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি সাদা (ওয়ানডে, টি-২০) বলকে। কিন্তু সে অর্থে লাল বলে (টেস্ট ক্রিকেটে) এর গুরুত্ব নেই। দেখবেন এক জাতীয় ক্রিকেট ও বিসিএল। এগুলোতে যতটা প্রস্তুতি। এর বাইরে লংগার ভার্সান ক্রিকেটে কোনো প্রাকটিস বা ম্যাচ খেলার সুযোগ আছে কি? তাহলে কিভাবে উন্নতি সম্ভব? নিউজিল্যান্ডে যে টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে সেটা তো অনেক শক্তিশালী দলও পারছে না। সেখানে সফলতা দেখিয়েছে। ফলে উন্নতি হচ্ছে। নতুন নতুন ভাল মানের পেস বোলাররা আসছে। সাহসি ব্যাটসম্যানরা রয়েছে। তবে এদের আরো বেশি প্রস্তুতি প্রয়োজন। সেটা থাকলে এভাবে বিপাকে পড়তে হতো না।’ 

এনামুল জুনিয়র বলেছেন, ‘যতই হোক না কেন, দলে যারা সিনিয়র রয়েছে। তাদের অভিজ্ঞতা অনেক। স্পিনের বিপক্ষে তাদের এমন ব্যার্থতাটা মেনে নেয়ার মত না। তবে একটা টেকনিক্যাল প্রবলেম তো অবশ্যই রয়েছে। আর সেটা হলো ডিফেন্স। প্রচন্ড চাপ ছিল। আর সে চাপে স্পিনের বিরুদ্ধে ভাল ডিফেন্স করতে পারলে সমস্যা থাকে না। ডিফেন্সিভে (রক্ষণার্থ) প্রবলেম হলে বিপাকে পড়তেই হবে। তবুও আমি বলবো বাংলাদেশ দল এমন হয়ে যায়নি যে এক ম্যাচের এক ইনিংসে ৫৩ রানে গুটিয়ে যাবার পর, ঠিক পরের ম্যাচে আবারও সেই বোলারদের বিরুদ্ধে ৮০ রানে গুটিয়ে যাবার মত।’

এক সময়ে জাতীয় দলের দুর্দান্ত এ স্পিনার  বলেন, ‘কেশব মহারাজ ও সায়মন হার্মার নিঃসন্দেহে ভাল বোলার। তাদের যোগ্যতাকে খাট করে দেখার সুযোগ নেই। কিন্তু তারা একেবারেই আহামরি বল কিন্তু করেনি। যাতে এমনভাবে স্বল্প সময়ে সব শেষ হয়ে যাবে।’ এনামুল মনে করেন, ‘ঘরোয়া ক্রিকেটে আমাদের প্রস্তুতি বাড়াতে হবে। স্পিন সহায়ক উইকেটে খেলতে হবে। গত দুই মওসুমে কিন্তু পেস সহায়ক (উইকেটে ৬ মিলি মিটার ঘাস রেখে) উইকেটে খেলার উপর জোর দেয়া হচ্ছে। এটা ভাল। তবে ৬টা স্টেডিয়াম। আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট থাকা উচিৎ। ক্রিকেটারা যেন অনুধাবন করতে পারেন যে এ উইকেটে আমাকে এমন ভাবে বোলিং বা ব্যাটিংয়ের প্রাকটিসটা করে যেতে হবে।’ 

জাতীয় দলে যারা খেলছেন তারা তো অবশ্যই দেশ সেরা। তাহলে তাদের সবাইকেই যে কোনো পরিস্থিতিতে দেশের আর দশটা ভাল খেলোয়াড়ের চেয়ে ভাল করতে হবে। কিন্তু দলে যারা রয়েছেন তারা সবাই কী অভিজ্ঞ। এনামুল বলেন, টেস্ট ম্যাচে অভিজ্ঞতার বিকল্প নেই। দীর্ঘ পরিসরের খেলা। ম্যাচের অনেক কিছু বুঝেই খেলতে হয়। দলে তারুণ্যের অধিক্য যারা তাদেরকে আরো পরিপূর্ণ করতে চারদিনের ম্যাচ খেলে অভিজ্ঞ হিসেবে গড়ে তোলা প্রয়োজন।

দেশে এখনও নাইম ইসলাম, মার্শাল আইয়ুব, এনামুল হক বিজয় প্রমুখ অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাদেরকে সুযোগ দেয়া উচিৎ। পাশাপাশি তরুণ ট্যালেন্টদের গড়ে তোলে সেখানে রিপ্লেস করা উচিৎ বলে আমি মনে করি।’ তিনি বলেন, ‘এটাও মনে রাখতে হবে আমরা স্পিনেও কিন্তু অতটা ভাল নই। মুরালীধারন, রঙ্গনা হেরাথ প্রমুখদের কিন্তু আমরা সামাল দিতে পারিনি। ফলে সেটাও মাথায় রাখতে হবে। অতটা আত্মবিশ্বাসী হলে চলবে না, যে স্পিনারদের বিরুদ্ধে সেটা যে কোনো কন্ডিশনে যে কোনো দেশেরই হোক না কেন, আমরা সেখানে ভাল খেলবো।’ 

উল্লেখ্য, এনামুল জুনিয়র জাতীয় দলের হয়ে ১৫ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। এবং সেটা বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের সূচনার দিকে (২০০৩ এ তার অভিষেক ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে)। যখন বছরে হাতে গোনা ২/৩ টা টেস্ট খেলার সুযোগ পেত বাংলাদেশ। ১৫ ম্যাচে ৪৪ উইকেট নিয়েছেন সিলেটের এ ক্রিকেটার। যার মধ্যে এক ইনিংসে ৯৫ রানে সাত উইকেট নেয়ার রেকর্ড তার। এছাড়া একদিনের ম্যাচ খেলেছেন তিনি ১০টি। মূলত এনামুলকে টেস্ট ম্যাচের জন্যই বিবেচনা করা হতো বেশি।


শেয়ার করুন