২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ১১:৫৩:৪৯ পূর্বাহ্ন


ষড়যন্ত্রের পূর্বাভাস দেখছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৬-২০২৩
ষড়যন্ত্রের পূর্বাভাস দেখছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল


জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যাঁ পিয়েরে লাক্রোয়ার বাংলাদেশ সফরের প্রাক্কালে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে মানবাধিকার-সংক্রান্ত বিষয় যাচাই-বাছাইয়ের যে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ), সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। বাংলাদেশে এসে তিনি কী বলেন, কোনো শর্ত দেন কি না এ নিয়েই যত চিন্তা। কারণ বাংলাদেশ জাতিসংঘের পেসকিপিং মিশনে সুনামের সঙ্গে ফ্রন্টফুটে থেকে কাজ করে আসছে দীর্ঘদিন যাবৎ। এরপরও বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয় যাচাই বাছাইয়ের প্রশ্ন ওঠা এটা নিঃসন্দে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য মোটেও সুখকর নয়। 

এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গত ১৭ জুন ঢাকার একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা বাহিনী নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বক্তব্য ষড়যন্ত্রের অংশ। তিনি বলেন ‘অত্যান্ত পরিচ্ছন্ন তারা। এবং তারা (বাংলাদেশের নিরাপত্তাবাহিনী) অত্যন্ত দক্ষ কর্মকর্তারাই সেখানে (পিসকিপিংয়ে) যেয়ে থাকেন। সেখানে কেন ফিল্টারের কথাটা আসছে বা উঠলো তা আমার জানা নেই। নির্বাচন কিরকম হবে, কে করবে, কারা জয়ী হবে এটা বাংলাদেশের জনগণই জানেন। এখানে বিদেশি কেউ এসে যদি চাপিয়ে দিতে চায় যে তাকে জয়যুক্ত করতে হবে, প্রাইমমিনিস্টার বানানো হোক সেটা তো বাংলাদেশের মানুষ কোনোদিনই গ্রহণ করবে না।’

গত ১২ জুন তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া এইচআরডব্লিউর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, লাক্রোয়া এমন সময়ে বাংলাদেশ সফর করছেন, যখন সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো দেশটির রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে এবং বিভিন্ন অধিকারকর্মী, গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার সদস্যদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের হয়রানি করছে। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাবাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশ সফরকালে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলের খোলাখুলি উদ্বেগ জানানো উচিত। এইচআরডব্লিউ বলছে, জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবদান সবচেয়ে বেশি। এই অবস্থান ধরে রাখতে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের মানবাধিকার-সংক্রান্ত যাচাই-বাছাই নীতিমালা যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে, জাতিসংঘের হয়ে কাজ করা তাদের কোনো নাগরিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত নয়। সফরকালে জ্যাঁ পিয়েরে লাক্রোয়াকে এই নীতিমালার ওপর জোর দিতে হবে।

এইচআরডব্লিউ বলছে, বাংলাদেশে ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে জড়িত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা যেন দেশের বাইরে শান্তি রক্ষা মিশনে অংশ না নিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার-সংক্রান্ত নীতিমালা ব্যর্থ হয়েছে। শুধু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মানবাধিকার-সংক্রান্ত বিষয় যাচাই-বাছাই করে জাতিসংঘ।

অন্যথায় যাচাই-বাছাইয়ের কাজের দায়িত্ব বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ওপর পড়ে। তবে এই সংস্থার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে কাজ করার সুযোগ সীমিত।

অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তাদের তালিকা প্রসঙ্গ 

বাংলাদেশের পুলিশের অতি উৎসাহী ছয় শতাধিক কর্মকর্তার প্রাথমিক তালিকা করেছে বিএনপি। এ তালিকা ইতিমধ্যে দেশে এবং বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, প্রতিনিধি বা সংস্থার কাছে পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, গুম-খুন, নিপীড়ন, গায়েবি মামলার সঙ্গে জড়িত ও কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছেন এসব কর্মকর্তা। এছাড়া এ তালিকায় আছেন ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সুপার (এসপি)। স্থানীয় নেতাদের পাঠানো রিপোর্ট অনুযায়ী এ তালিকা করা হয়েছে। 

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, অতীতে যারা গুম-খুন বা বড় ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন, তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদেরও এ তালিকায় আনা হবে। নির্দিষ্ট কোনো কারণে এ তালিকা হচ্ছে না বলে জানান তিনি। তথ্য সংগ্রহ কমিটির সদস্য এবং সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা সালাউদ্দিন খান বলেন, মোট ৬৬৪ কর্মকর্তার নাম পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ৯৫ জন এসপি থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়েছেন। ইতোমধ্যে তা যেখানে পাঠানো দরকার সেখানে পাঠানো হয়েছে।

দেশব্যাপী গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ‘শান্তিপূর্ণ’ কর্মসূচিতে বাধাদানকারী ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ করতে ২৩ মে ১৪ সদস্যের একটি ‘তথ্য সংগ্রহ কমিটি’ গঠন করে বিএনপি। এই কমিটি গায়েবি ও মিথ্যা মামলা, গুম-খুন, সহিংস আক্রমণ, অগ্নিসংযোগসহ কর্মসূচিতে বাধাদানকারী ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ করছে। বিশেষ করে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা ওই ‘কর্মকাণ্ডে’ জড়িত তাদের তথ্য-উপাত্ত চেয়ে গত মাসের শেষদিকে বিএনপির সব জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের কাছে চিঠি দিয়েছিল বিএনপি। 

বিএনপির কেন্দ্রীয় সেল পুলিশের ৬ শতাধিক কর্মকর্তার নামের যে প্রাথমিক তালিকা করেছে। এতে ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি, এসপিসহ মোট শতাধিক কর্মকর্তা রয়েছেন। এদের বেশির ভাগ ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও খুলনা বিভাগের। যারা সবাই এখন পদোন্নতি পেয়ে পুলিশের বিভিন্ন বড় পদে কর্মরত আছেন। বাকিরা থানার ওসিসহ নিচের সারির কর্মকর্তার নাম রয়েছে বলে জানা গেছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত সারা দেশে দলটির সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা ও ৬০০ জনকে গুম করেছে সরকার। নেতাকর্মীর নামে মামলার সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। এসব মামলায় আসামি ৩৬ লাখ। এখনো কারাগারে আটক আছেন ২০ হাজার।

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বেসরকারী টেলিভিশনে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘নির্বাচন সামনে এলেই একটা ষড়যন্ত্র দেখি আমরা। ব্যাপক ষড়যন্ত্রের পূর্বাভাস, বা আবহ তৈরি করা বা ষড়যন্ত্রই হয়। আগামী নির্বাচনেও এই ধরনের একটা ঘটনা ঘটবে, তারই একটা পূর্বাভাস এখানে আসছে।’ তিনি বলেন,‘আমি মনে করি পুলিশের মনবল ভাঙার একটা প্রায়াস ব্যার্থ প্রায়স হবে। কারন পুলিশ জানে, তারা কোনো অন্যায় করছে না। তাদের দক্ষতা দেশপ্রেম দিয়ে তারা দেশের জন্য কাজ করছে।’ গত নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘বিগত ইলেকশনে কারা কি করছে না করছে। আসলে জনগণ যাদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে তারাই জয়ী হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন ডিক্লেয়ার করেছে সেটা যেমন সত্য, পুলিশ শুধু তার দায়িত্ব পালন করেছে, তাদের ওপর অর্পিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষার যে দায়িত্ব, সেটা করেছে। পুলিশ তো কেন্দ্রে যেয়ে সিল দেয়নি। কিংবা পুলিশ কাউকেও ভোট দেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধও করেনি।’  

শেয়ার করুন