২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০১:০৯:৬ অপরাহ্ন


১ জানুয়ারি ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে গণ-অবস্থান
গনমিছিলে গনতন্ত্র মঞ্চের নতুন কর্মসূচী
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-১২-২০২২
গনমিছিলে গনতন্ত্র মঞ্চের নতুন কর্মসূচী


সরকারকে পতনের যুগপত আন্দোলনে অংশ হিসেবে আগামী ১১ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারা দেশের বিভাগীয় শহরে তিন ঘন্টার গণ-অবস্থানের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ।

শুক্রবার সকালে গণমিছিলপূর্ব সমাবেশ থেকে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

 তিনি বলেন, ‘‘ রাজবন্দিদের মুক্তি এবং ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় বন্দি বেগম খালেদা জিয়া, ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, প্রতীম দাসসহ সকল রাজবন্দিদের মুক্তির দা্বেিত আগামী ১১ জানুয়ারি ১০ বিভাগে প্রতিবাদী গণ-অবস্থান আমরা করব। সেটি ১১ তারিখ বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত।”  

‘‘ ঢাকায় আমরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণ-অবস্থান কর্মসূচি করব।”


 


জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণমিছিলের আগে গণতন্ত্র মঞ্চের সমাবেশ হয়। সমাবেশে কালো কাপড়ে বড় ব্যানারে ‘নিশিরাতে ভোট ডাকাতির ৪ বছর: ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার ও শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনে ঐক্যবদ্ধ হোন: সমাবেশ ও গণমিছিল’ লেখা ছিলো।

 

গণতন্ত্র মঞ্চের ৭ দলের কয়েক‘শ নেতা-কর্মীরা এই সমাবশ ও গণমিছিলে অংশ নেন। কর্মীরা ‘ভোট চোর সরকার, আর নাই দরকার’, ‘শেখ হাসিনার সরকার, আর নাই দরকার’, ‘আগুন জ্বালাও আগুন জ্বালাও, ভোট চোরের আস্তানায়’ ইত্যাদি শ্লোগান দেয়।

 

সমা্বেেশর পর গণমিছিলটি পল্টন মোড়, বিজয় নগর সড়ক হয়ে কাকরাইলের নাইটেঙ্গল মোড়ে এসে শেষ হয়।

 

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘‘ এই মোনাফেক সরকারের অধিনে আগামীতে কোনো জাতীয় নির্বাচন সম্ভব নয়, আগামীতে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এজন্য আমরা বলেছি, নির্বাচনের আগে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে এবং পদত্যাগ করার পরে আলাপ-আলোচনা করে নির্বাচনকালীন অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। এই কোনো বিকল্প নাই।”


 তিনি বলেন, ‘‘ আমি প্রধানমন্ত্রীকে একটা কারণের জন্য ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ ভোট চোরকে ক্ষমা করে না, বাংলাদেশের মানুষ ভোট ডাকাতদেরকে ক্ষমা করে না। প্রধানমন্ত্রীর এই উপলব্ধির জন্য ধন্যবাদ জানাই।”

 

‘‘ রংপুরের মানুষ সিটি করেেপারেশন নির্বাচনে কয়েকদিন আগে নৌকা প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত করে মানুষ প্রমাণ করেছেন ভোট ডাকাতদের মানুষ ক্ষমা করে না। এভাবে যদি ৫০ শতাংশ নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় অধিকাংশ থেকে আওয়ামী লীগের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।”

 

সাইফুল হক বলেন, ‘‘ বিএনপি ১০ দফা দিযেছে, আমরা ১৪ দফা দিয়েছি। ইতিমধ্যে লিয়াজোঁ কমিটি হয়েছে। গতকাল আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, ১০ দফা ও ১৪ দফার ভিত্তিতে যুগপত আন্দোলনের ভিত্তি।আমরা সম্ভব স্বল্পতম সময়ে যুগপত আন্দোলনের ভিত্তি দেশবাসীর কাছে উপস্থাপন করব। সেই ভিত্তিতে সরকারের পরিবর্তন, অগণতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে আরেকটা মুক্তিযুদ্ধের মতন জাগরণ ঘটিয়ে বাংলাদেশকে আমরা রক্ষা করব, বাংলাদেশের জনগনকে আমরা রক্ষা করব।”

 

‘‘ গণজাগরণ শুরু হয়েছে। এই গণজাগরণকে আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে, ২০২৩ সালে প্রথমাংশের মধ্যে এই সরকারকে নাকে খত দিয়ে বিদায় দিয়ে বাংলাদেশকে রক্ষা করব, জনগনকে রক্ষা করব- সেই লড়াইয়ে গণতন্ত্রমঞ্চ রাজপথে আছে, থাকবে। সকল বিরোধী দল, সকল প্রগতিশীল,গণতান্ত্রিক দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে যুগপতধারায় রাজপথে নেমে আসার আহবান জানাচ্ছি। ”


 


গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘‘ ২০১৮ সালের নির্বাচন জাতির জন্য একটা কলঙ্কজনক দিন। নিশিরাতে ভোট ডাকাতি করে আজকে এই সরকার রাষ্ট্রকে হুমকির মধ্যে ফেলেছে। কাজেই এই সরকার দেশের মানুষকে, নাগরিককে এমন কি নিজের দলের সদস্য-সমর্থকদেরকে যেভাবে অপমান করেছে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটা আর কখনো ঘটেনি।”

‘‘ দেশের খেটে খাওয়া সমস্ত শ্রমজীবি-মেহনতি মানুষ তাদের জীবনের আহাজারি, তাদের আজ নাভিশ্বাস উঠেছে দ্রব্যমূল্যে। আর সরকার উন্নয়নের ডামাঢোল করে। একদিকে তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর অন্যদিকে বাংলাদেশের মানুষকে বিভাজিত করে নানাভাবে বিভক্ত করে আজকে এমন এক গৃহযুদ্ধ তৈরি করতে চাচ্ছেন যাতে করে বাংলাদেশটাই বেহাত হয়ে পড়ে। একটা দেশের মানুষ যদি বিভক্ত হয়ে পড়ে, একটা দেশের রাষ্ট্র যদি জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সেই দেশ সার্বভৌমত্ব রাখতে পারে না। এই সরকার বাংলাদেশকে সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলেছে।”


তিনি বলেন, ‘‘ আমরা পরিস্কারভাবে গণতন্ত্র মঞ্চ আওয়াজ তুলেছি, আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে জবাবদিহিতার বাংলাদেশ, মানুষ ভোট দিয়ে সরকার নির্বাচন করবে এবং সেই সরকার জনগনের কাছে জবাবদিহিতা করে দেশ পরিচালনা করবে।তার জন্য সরকারের পদত্যাগ দরকার, অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের অধিনে নির্বাচন দরকার আর শাসনব্যবস্থাকে বদলানো দরকার।”

 

‘‘আমাদের কথা অত্যন্ত স্পষ্ট- এক হাতে ক্ষমতা কাঠামোর বদল আর অন্যদিকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের সাংবিধানিক কাঠামো- এই দুইয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রুপান্তর করে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তো আমরা প্রতিষ্ঠা করব। আমরা সেজন্য বিএনপির সাথে আলোচনা করেছি। আগামী দিনে যুগপত ধারায় বাংলাদেশের মানুষের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলে এই ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদী সরকারকে অভ্যুত্থানে মাধ্যমে নামিয়ে এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইকে আমরা এগিয়ে নেবো- এটাই আজকে আমাদের শপথ।”


শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে এই সমাবেশে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু, গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক মো. রাশেদ খান বক্তব্য রাখেন।



শেয়ার করুন