২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৫:৬:১৭ পূর্বাহ্ন


জ্বালানি তেলের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি
সংকট দীর্ঘায়িত হলে সরকারের অস্তিত্ব প্রশ্নবৃদ্ধ হবে
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৮-২০২২
সংকট দীর্ঘায়িত হলে সরকারের অস্তিত্ব প্রশ্নবৃদ্ধ হবে


ঢাকা মহানগরীতে জ্বালানি তেলের রেকর্ড মাত্রায় মূল্যবৃদ্ধি টকশো বা সড়কে কিছু বিক্ষিপ্ত প্রতিবাদে সীমিত থাকলেও দেশব্যাপী জনজীবনে ভোগান্তি ক্রমশই অসহনীয় হয়ে পড়ছে। ঢাকা থেকে সড়কপথে বৃহত্তর ফরিদপুরের বিভিন্ন শহর, বাগেরহাট,খুলনা হয়ে সাতক্ষীরায় সফরের বিভিন্ন পয়েন্টে নানাজনের সঙ্গে কথা বলে তৃণমূলে গণরোষের কিছুটা হলেও আঁচ করা গেছে। দেশজুড়ে তীব্র গরমের সময় ৪-৫ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ লোডশেডিং বিষয়ে সবাইকে বিক্ষুব্ধ দেখেছি। এখানে দলমত নির্বিশেষে লোকজন কথা বলেছেন। জানিয়েছেন তাদের কষ্টের কথা। সরকার তৃণমূলে পুঞ্জীভূত জনরোষ উপলব্ধি করছে কিনা জানা নেই। 

তবে সার্বিক বিষয় নিয়ে সরকারের কিছু বাচাল মন্ত্রী, নেতাদের টিভি ও বিভিন্ন মিডিয়ায় অসংলগ্ন মন্তব্য বিপুলভাবে সমালোচিত হতে শুনছি। সড়ক পাশে গোপালগঞ্জের পানসি রেস্টুরেন্টে ও সংলগ্নস্থানে আলাপ হলো বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে। তাদের কাউকেই সরকারের জ্বালানি সেক্টর পরিচালনা বিষয়ে শুভ মন্তব্য করতে শুনলাম না। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি বৃত্তাকার-চক্রাকার মূল্যবৃদ্ধি করেছে সর্বত্র। এমনিতেই চাল, ডাল, নুন, তেল, পেঁয়াজ, মরিচের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার দিশেহারা। তার ওপর দেশজুড়ে তীব্র খরার সময় ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সীমিত আয়ের মানুষদের জীবন বিষিয়ে তুলেছে। কৃষি, শিল্প-বাণিজ্য,জনজীবন সর্বত্রই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গ্রামগঞ্জের মানুষ কৃষি আবাদ নিয়েও চিন্তিত। আমলা নিয়ন্ত্রিত জ্বালানি প্রসাধন বিশ্ব জ্বালানি বাজার পরিস্থিতি যাচাই করে সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করতে পারেনি। 

মূল সংকট জ্বালানি জোগানে। আরো সুস্পষ্ট করে বললে দেশের গ্যাস, কয়লা সম্পদ হরণ আর উন্নয়নে শোচনীয় ব্যর্থতায়। কেন? কোন মহলের অশুভ প্রভাবে মূল্যবান কয়লা সম্পদ মাটির নিচে পড়ে আছে? কেন দীর্ঘদিন ধরে সাগরে গ্যাস অনুসন্ধান ঝুলে আছে? জ্বালানির মতো কারিগরি খাতে কেন আমলাদের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ? কে দেবে জবাব? কেন একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিভিন্ন সেক্টরে সুনামের সঙ্গে দেশ পরিচালনা ও ব্যাপক উন্নয়ন করেও এখন প্রচণ্ড ক্ষোভের মুখে। মন্ত্রী-এমপিদের কথা শুনতে চায়না সাধারণ মানুষ। এমন পরিস্থিতির অবতারণা বা জনপ্রিয় দলটাকে বিশাল প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়ার পেছনে কী উদ্দেশ্য। এটা কী পরিকল্পিত নাকি অবস্থার শিকার সেটাও ঠাহর করা যাচ্ছেনা এ মুহূর্তে। মানুষ বুঝতে চায় না।

অগভীর উপকূল এলাকায় জ্বালানি আমদানির চ্যালেঞ্জ অজানা ছিল না কারো। সুস্পষ্ট বিশেষজ্ঞ মতামত ছিল পায়রায় কোল পোর্টবা এলএনজি ল্যান্ড টার্মিনাল কারিগরিভাবে অসম্ভব। কেন হাজার হাজর কোটি টাকা জলে ফেলা হলো? জানি যেসব কয়লানির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বাতিল করা হয়েছে সেগুলোর অর্থায়ন বা কয়লাপ্রাপ্তি বিষয়ে নিশ্চয়তা ছিল না। তাসত্ত্বেও অন্তত মাতারবাড়ি-মহেশখালী এলাকার কয়লাভিত্তিক প্ল্যান্টগুলো বাতিল করার আগে ভাবনার অবকাশ ছিল। প্রশ্ন থাকে- কেন যুদ্ধ প্রস্তুতি নিয়ে মাতারবাড়ি এলএনজি, এলপিজিটার্মিনালগুলো বিষয়ে কার্যক্রম ত্বরান্বিত হচ্ছে না? ২০২৭ দূরের কথা এখন ২০৩০ মাতারবাড়ি ল্যান্ড এলএনজি টার্মিনাল চালু করা ধীরে ধীরে সঙ্কোচিত হয়ে যাচ্ছে। অথচ ২০৩০ নাগাদ নিজেদের গ্যাস উৎপাদন শূন্য হয়ে যেতেও পারে। তবে কি ইচ্ছা করে সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে কোনো অশুভ মহলকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে?

আজ থেকে তিন চার সপ্তাহ আগে রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল (ডিজেল, কেরোসিন, এলএনজি) কেনার বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হলে রেকর্ড মাত্রায় জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির চাপ মুখ্য থাকা যেতো। আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র সৌদি আরব রাশিয়া থেকে তেল কিনছে। কানাঘুষা আছে সৌদি ক্রুড অয়েল ভারতে প্রক্রিয়াকরণের পর খোদ যুক্তরাষ্ট্র কিনছে। তাহলে কেন বাংলাদেশের দ্বিধা? অবশ্যই রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল সুলভ মূল্যে কেনা যায় হয়তো কয়লা, এলএনজিও কেনা সম্ভব। বাংলাদেশ কারো সূত্র নয়, সবার বন্ধু।

পরিশেষে বলি বর্তমান পরিস্থিতিতে জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় আমলা নিয়ন্ত্রণ অবিলম্বে বন্ধ করে প্রকৃত পেশাদারদের সুযোগ দিতে হবে। বর্তমান সংকটে অনভিজ্ঞ আমলারা কিছুই করতে পারবে না। সংকট দীর্ঘায়িত হলে সরকারের জন্য অস্তিত্বের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াবে।


শেয়ার করুন